‘ডিজিটাল অপরাধে’ বিটিআরসিকে ব্যবহার করছে সরকার

গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘ইন্টারনেট-শাটডাউনসহ সরকারের সবধরনের নির্যাতনের’ প্রতিবাদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। 

‘ডিজিটাল অপরাধে’ বিটিআরসিকে ব্যবহার করছে সরকার

প্রথম নিউজ, অনলাইন: সরকার সব ধরনের ‘ডিজিটাল অপরাধের জন্য’ বিটিআরসিকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বিরোধী আন্দোলন দমনে ‘ইন্টারনেট শাটডাউন’কে সরকার ‘নতুন অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। যা নাগরিক অধিকারের ‘ভয়ঙ্কর লঙ্ঘন’ হিসেবেও বর্ণনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব। গতকাল গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘ইন্টারনেট-শাটডাউনসহ সরকারের সবধরনের নির্যাতনের’ প্রতিবাদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। 

ফখরুল বলেন, সরকার গণঅভ্যুত্থানের ভয়ে ভীত হয়ে নতুন ডিজিটাল অস্ত্র ‘ইন্টারনেট-শাটডাউন’ প্রয়োগ করছে। নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়ার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে জনগণকে। ইন্টারনেট-শাটডাউনের ঘটনা নাগরিক অধিকারের ভয়ঙ্কর লঙ্ঘন। এটা গুম-খুনের মতোই একটা অপরাধ। কোনো ব্যক্তি গুমের শিকার হলে কেবল একজন হারিয়ে যান। কিন্তু কোনো স্থানে ইন্টারনেট শাটডাউন করা হলে তার শিকার হয় দেশ-বিদেশের লক্ষ কোটি মানুষ।

তিনি বলেন, নাগরিকদের সেবা প্রদান এবং তাদের অধিকারকে সংরক্ষণ করার জন্য দেশে একাধিক প্রতিষ্ঠান আছে। তেমন একটি প্রতিষ্ঠানের নাম বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি)। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলা এই প্রতিষ্ঠানটির কাজ হলো দেশের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, পরিচালনা এবং সেবার মান দেখভাল করা। কিন্তু জনগণের টাকায় প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানকেই বর্তমান স্বৈরাচারী সরকার জনগণের বিরুদ্ধে নিপীড়নের আরেকটি আধুনিক হাতিয়ার হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে। বিএনপি’র সমাবেশের তথ্য পাওয়ার অধিকার থেকে বিটিআরসি জনগণকে বঞ্চিত করছে। 

বিএনপি মহাসচিব বলেন,  মানুষকে খুন করা যেমন অপরাধ, তেমনি অনলাইন থেকে তার অস্তিত্ব ‘নিশ্চিহ্ন করে ফেলাও’ অপরাধ। আর সরকার ‘ক্রমাগতভাবে সেই অপরাধ’ করে যাচ্ছে। সরকারের সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, সরকার পতনের চলমান এক দফা আন্দোলনের সম্পূরক হিসেবে আমরা এই ফ্যাসিস্ট সরকার কর্তৃক ইন্টারনেট শাটডাউন, নজরদারি, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, মোবাইল ফোন তল্লাশিসহ সকল ধরনের ডিজিটাল অপব্যবহারের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনও অবিলম্বে বাতিলের দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

গত ১২ই জুলাই নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ চলাকালে ওই এলাকায় ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন বা বিঘ্নিত করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন,  গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে খুলনা, বরিশাল, ফরিদপুর, সিলেট, কুমিল্লা, রাজশাহী ও ঢাকায় বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশ এলাকাতেও ইন্টারনেট বন্ধ রাখার ঘটনা ঘটেছে।  ফখরুল বলেন,  ইন্টারনেট অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘এক্সেস-নাও’ এর ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘ইন্টারনেট শাটডাউন’র সংখ্যার হিসাবে বাংলাদেশ সারা বিশ্বে পঞ্চম স্থান অর্জন করেছে। গত আট মাসে দেশে ৬ বার ইন্টারনেট শাটডাউন করা হয়েছে। আমাদের প্রশ্ন, পঞ্চমস্থান অধিকারকারী বাংলাদেশেও কি কোনো যুদ্ধ চলছে? যুদ্ধ হলে কাদের বিরুদ্ধে সরকার সেই যুদ্ধ করছে? 

ইন্টারনেট পরিষেবা যে কেবল সোশাল মিডিয়ার বিনোদনেই সীমাবদ্ধ নয়, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ফখরুল বলেন, বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট সেবা মানুষের মতপ্রকাশের অপরিহার্য একটি মাধ্যমে। আর্থিক খাত, চিকিৎসাসেবা, আইন, লেখাপড়া, আউটসোর্সিং, ভ্রমণ, চাকরিসহ সবক্ষেত্রে বিস্তৃতি নিয়ে ইন্টারনেট জীবন-জীবিকার জন্য অপরিহার্য অনুষঙ্গে পরিণত হয়েছে। এই সেবা বিচ্ছিন্ন করা হলে মূলত মতপ্রকাশের অধিকারকেই বাধাগ্রস্ত করা হয়।
তিনি বলেন, এতদিন ধরে আওয়ামী লীগ সরকার বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন, জেল-জুলুম, নির্যাতন, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা- মামলাসহ বিভিন্ন রকম মানবাধিকার লঙ্ঘনের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে দমন করার অপচেষ্টা করেছে। তাদের সমস্ত অপচেষ্টাই প্রায় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এখন নতুন অস্ত্র হিসেবে ইন্টারনেট-শাটডাউন প্রয়োগ করছে।

পুলিশ কেড়ে নিচ্ছে মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের ব্যক্তিগত ডিভাইস মোবাইল ফোন। তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার বাধাগ্রস্ত করে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি বা গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করা মানবাধিকারের ভয়ঙ্কর লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব। অবিলম্বে গণবিরোধী ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আধুনিক রাষ্ট্রে মানুষের বাস্তব জীবনে যে অধিকার আছে, অনলাইনেও সেই একই অধিকার বলবৎ আছে। 

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, বর্তমান সরকার ডিজিটালাইজেশনকেই জনগণের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। ডিজিটাল মাধ্যমে নিপীড়ন চালাচ্ছে তারা। জনগণের ওপর নজরদারি, ফোনকল রেকর্ড, অনলাইনে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন, অনলাইনে নারীদের প্রতি সহিংসতাকে উস্কে দেয়া, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ব্ল্যাকমেইল করা, ভুল তথ্য-অপতথ্য-বিকৃত তথ্য ও কন্টেন্ট জালিয়াতির মাধ্যমে প্রপাগান্ডা চালানোসহ নানা অপরাধ করছে সরকার। জনগণের টাকায় ‘নজরদারি প্রযুক্তি কিনে জনগণের ওপরে সরকার গোয়েন্দাগিরি’ করছে। 

তিনি বলেন, ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনের ওপর নজরদারি করে ইলিয়াস আলীর মতো নেতাদের গুম করার তথ্যও ইতিমধ্যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। সাইবার প্রযুক্তির অপব্যবহার যত ধরনের অপরাধ করা সম্ভব, এই সরকার তা সবই করছে। বিএনপি আগামীতে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশের ডিজিটাল সেবাকে বৈশ্বিক মানে উন্নীত করবে বলে প্রতিশ্রুতিও দেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি’র মিডিয়া সেল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহিরউদ্দিন স্বপন, সদস্য সচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সদস্য কাদের গণি চৌধুরী, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, আতিকুর রহমান রুমন, শাম্মী আক্তার, আলী মাহমুদ, শায়রুল কবির খান প্রমুখ।