জীবিত বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে বয়স্কভাতার কার্ড বাতিল
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রথম নিউজ, ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলে মেম্বারের বিরুদ্ধে জুলেখা বেগম নামের এক বৃদ্ধাকে মৃত দেখিয়ে বয়স্কভাতার কার্ড বাতিল করার অভিযোগ উঠেছে। ৯নং ওয়ার্ডের বাদশা মেম্বার এ ঘটনায় অভিযুক্ত বলে জানা গেছে।
জানা যায়, নন্দুয়ার ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সন্ধ্যারই সাতঘরিয়া গ্রামের রহিমের স্ত্রী জুলেখা। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের মাধ্যমে বয়স্কভাতা পাচ্ছিলেন। হঠাৎ করেই ভাতার টাকা আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তিনি উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে তাকে জানানো হয় তিনি ৭ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে মৃত্যুবরণ করেছেন। যা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের দেওয়া প্রত্যায়ন পত্রে নিশ্চিত হয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মৃত্যুর নিবন্ধন বইয়ের ২০২১ সালের রেজিস্ট্রারে বৃদ্ধার মৃত্যু নিবন্ধিত নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এমন একটি সনদ দেওয়ায় তার ভাতাটি বন্ধ হয়ে গেছে।
জুলেখা বেগম বলেন, বাদশা মেম্বার আমার মৃত্যুর কথা কহেনে, আমার বয়স্কভাতা কাটে দিল। আমি নাকি মরে গেছি। সমাজসেবা অফিসে গিয়ে শুনতে পারি আমারে মৃত দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার বাদশা একটি মৃত্যু সনদ দিয়েছেন এবং আমার বদলে অন্য একজনকে ভাতা দিচ্ছে। অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করে মেম্বার বাদশা জানান, প্রথমবারের মতো এমন ভুল করেছি। আগামীতে সর্তকতার সঙ্গে কাজ করব।
রাণীশংকৈল উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়ন পত্রের ভিত্তিতে জানতে পারি জুলেখা বেগম ৭ ডিসেম্বর ২০২১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাই ভাতাটি বন্ধ করা হয়েছে। যেখানে বিধিমালায় বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে মৃত্যু সনদ যাচাই ছাড়া সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর কাউকে মৃত্যু দেখাতে পারবে না, সেখানে মৃত্যুসনদ ছাড়া ভাতা পরিবর্তনের সুপারিশ কিভাবে হয়? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমরা এভাবেই করে থাকি।
এছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সমাজসেবা অফিসে প্রেরিত প্রত্যায়ন পত্রটির কোনো তথ্য ইউনিয়ন পরিষদের রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্তি পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে নন্দুয়ার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল বারী মুঠোফোনে বলেন, এ বিষয়টিতে ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব খারাপ লেগেছে। ওই বৃদ্ধা খুব গরিব, তার ছেলে নেই। আমি নিজেই তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা করি। ওই মেম্বার মূর্খ ছেলে। নিজের নামও লেখতে জানে না। কীভাবে এটি করলো আমি জানি না। কারণ মেম্বারের উপর আামার প্রত্যয়ন থাকবে। মেম্বারের সিল সই যদি থাকে তাহলেও আমি সিল সই দেই। আমি তো আর সব মহিলাদের নাম জানি না। তবে এ বিষয়ে মেম্বারের যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহেল সুলতান জুলকার নাইন কবির স্টিভ বলেন, এটি সংশোধনের কার্যক্রম চলমান। তদন্ত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, এটি একটি গুরুত্বর অভিযোগ। আমরা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।