জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশের ভবিষ্যৎকে গড়ে তুলতে হবে: তারেক রহমান
শনিবার সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে দলীয় নেতাকমীর্রা ছিনাইদহের সমাবেশ স্থলে ভিড় জমাতে থাকেন।
প্রথম নিউজ, ঝিনাইদহ: নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশের দাবি জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি জনগণের আস্থার চ্যালেঞ্জ তাদেরকে নিতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আস্থাকে প্রশ্নহীন রাখার চ্যালেঞ্জ তাদেরকে নিতে হবে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ও জনগণের নিরাপত্তা ও প্রত্যাশিত সেবা নিশ্চিত করতে পারে একমাত্র জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার। জনগণের আত্মত্যাগ মূল্যায়ন করতে না পারলে ইতিহাস কখনো ক্ষমা করবে না। সেদিনই আত্মত্যাগ সফল হবে যেদিন জনগণ রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাবে।
তিনি বলেন, আমরা আন্দোলন করেছি, সংগ্রাম করেছি, আমরা স্বৈরাচারে পতন ঘটিয়েছি এখন আমাদেরকে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশকে গড়ে তুলতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী দেশের ভবিষ্যৎকে গড়ে তুলতে হবে। জনগণের প্রত্যাশা, দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাদের জন্য একটি নিরাপদ বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার কাজ আমাদের হাতে নিতে হবে এঁাই হোক আমাদের আজকের শপথ। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে ছাত্র—জনতা গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রাকিব ও শহীদ সাব্বীর হত্যার বিচারের দাবিতে ঝিনাইদহে গণসমাবেশ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ঝিনাইদহে গণসমাবেশে জনতার ঢল : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ভাচুর্য়ালি গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঝিনাইদহে জনতার ঢল নামে। বিকাল ৩টার সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শনিবার সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে দলীয় নেতাকমীর্রা সমাবেশ স্থলে ভিড় জমাতে থাকেন। দুপুর হতে না হতেই ঝিনাইদহ পায়রা চত্বরের সমাবেশ পরিণত হয় যেন মহাসমাবেশে। চুয়াডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড, হামদহ, আরাপপুর ও আরাপপুর থেকে পায়রা চত্বর পর্যন্ত জনতার ঢল নামে। বিকাল চারটার দিকে সমাবেশস্থলে তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। শহরের চারপাশে যেদিকেই চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ। এক পর্যায়ে শহরের অলিগলি ও রাজপথ মানুষে মানুষে টৈটম্বুর হয়ে পড়ে। জনতার বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারে ঝিনাইদহ শহরের সব পথ বন্ধ হয়ে যায়। ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর উপজেলা, শৈলকুপা, হরিণাকুন্ডু উপজেলার নেতাকর্মীরা হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান প্রতিকৃতি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে গণসমাবেশে যোগ দেন। এ সময়ে সেস্নাগানে সেস্নাগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো ঝিনাইদহ পায়রা চত্বর। এর আগে বিশিষ্ট গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক ইথুন বাবুর নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা—জাসাসের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ‘বিশাল গণ—সমাবেশ’—এর শুরুতেই জাগরণ ও গণমুক্তির গান পরিবেশন করেন। এদিকে বেলা আড়াইটার দিকে দেশের আলোচিত সঙ্গীত শিল্পি মৌসুমির ‘দেশটা তোমার বাপের নাকি করছো ছলাকলা’ গান দিয়ে শুরু হয়। এ সময় সমাবেশে আগত দলীয় নেতাকমীর্রা করতালি আর মুহুর্মুহু সেস্নস্নাগান তুলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা যায়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে আকস্মিকভাবে সৃষ্ট শূন্যতা পূরণের জন্য একটা অন্তর্বতীর্কালীন সরকারের কোনো বিকল্প ছিল না সেটা আমরা সবাই জানি। আর সঙ্গত কারণে তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন সেদিনও ছিল, আজও আছে। তাদের প্রতি আমাদের আস্থাকে প্রশ্নহীন রাখার চ্যালেঞ্জ তাদেরই নিতে হবে। তাদের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব আর সেটা যথার্থভাবে প্রতিপালনের রোডম্যাপ তাদেরই নির্দিষ্ট করতে হবে। সব পরিবর্তন সাধন যেমন তাদের পক্ষে সম্ভব নয় তেমনি এমন দায়িত্বও তাদের কাঁধে নেয়া সঙ্গত হবে না যেটা তারা বহন করতে সক্ষম হবেন না। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে প্রতিটি সিদ্ধান্ত, প্রতিটি বক্তব্য এমনকি প্রতিটি প্রতিক্রিয়ায় প্রয়োজন সর্বোচ্চ সতর্কতার দৃশ্যমান প্রয়োগ। সরকার পরিচালনা একটি অতি সংবেদনশীল এবং জটিল কাজ, এখানে সামান্য বিচ্যুতি যেমন বিরাট একটা প্রশ্নের জন্ম দিতে পারে, তেমনি সামান্য অসতর্কতাও অতি আবশ্যক বিশ্বাসকে করতে পারে দুর্বল আর আমাদের শক্তির কেন্দ্রবিন্দু ঐক্যতে ধরাতে পারে ফাটল। এর যে কোনো একটিই বয়ে আনতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়। মনে রাখা দরকার দেড় যুগ ধরে গড়ে ওঠা স্বৈরাচারের দৃশ্যমান আর অদৃশ্য প্রেতাত্মা এত সহজে তার বিষ—নিঃশ্বাস থেকে আমাদের পরিত্রাণ দেবে না।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারের ফেলে যাওয়া দলবাজ উচ্ছিষ্ট প্রশাসনের চলমান ষড়যন্ত্রের কাছে আমরা মাঝে মাঝেই তাদের অসহায় ও বিপর্যস্ত হতে দেখছি। এর অবসান না হলে এদের বেড়াজালে আবদ্ধ সরকার ছোট ছোট বিপর্যয়কে এক সময় মহাবিপদ হিসাবে নিজেদের সামনে দেখতে পাবে। তখন প্রতিকারের পথ হয়ে পড়বে অতি সংকীর্ণ। মনে রাখতে হবে, বৈদেশিক বিনিয়োগ, আন্তর্জাতিক বিশ্বের আস্থা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা, ব্যবসা বাণিজ্যে স্বস্তি, জনমনে নিরাপত্তা, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা, তৃনমূল পর্যায়ে জনগণের প্রাত্যহিক নাগরিক সুবিধা দিতে একটি নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, জুলাই—আগস্টের ছাত্র—জনতার মহা জাগরণ আমাদের সামনে আরেক স্বাধীনতা আর বিজয়ের বার্তা হয়ে এসেছে। অতি উৎসাহে আমরা যদি এটাকে নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর সফলতা বলে চিহ্নিত করে ফেলি তাহলে সম্ভবত আমরা আরেকটি ইতিহাস বিকৃতির ফাঁদে পা দেব। স্বৈরাচার পতনের এই মহাসমরে দেশের সর্বস্তরের মানুষ, রাজনৈতিক দল, ছাত্র—জনতা, গৃহিণী, শ্রমিক সবার অবদানকে আমরা যদি মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হই কিম্বা গত সতের বছর ধরে অবিরাম আন্দোলনে গুম, খুন, মামলা, হামলা আর নির্যাতনে পিষ্ট লক্ষ লক্ষ রাজনৈতিক কর্মীর অবদানকে যথাযথ মূল্যায়নে অসমর্থ হই তাহলে ইতিহাস আমাদের কাউকে ক্ষমা করবে না।
গণসমাবেশে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এম.এ মজিদের সভাপতিত্বে এবং ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাহিদুজ্জামান মনার সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটি খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সহ—সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, সহ—তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল প্রমুখ।