গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির কর্মসূচি
‘সরকারের দুর্নীতি আর ভ্রান্ত নীতিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি’
প্রথম নিউজ, ঢাকা: গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। আজ বুধবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার বিষয়বস্তু তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দেশে প্রথম বারের মতো সকলের গ্রহণযোগ্য এবং অংশীদারত্বমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাফল্য এবং বর্তমান প্রেক্ষিতে পুনরায় তা জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য অনুসন্ধান কমিটির কাছে নাম পাঠানো সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলা হয় যে, বিএনপি মনে করে বর্তমান জনগণের ম্যান্ডেটবিহীন সরকারের অধীনে কোনো অবস্থাতেই নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচনে এই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি তারই প্রেক্ষাপটে মনে করে এখন অনুসন্ধান কমিটিতে নাম প্রেরণ এবং নির্বাচন কমিশন গঠন একেবারই অর্থহীন। বিএনপি বিশ্বাস করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখার নীল নকশার অংশ হিসেবে পুনরায় নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারি তৎপরতা সেই চক্রান্তেরই অংশ।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি মনে করে এই সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন পরিচালনায় সকলের গ্রহণযোগ্য, একটি অংশীদারত্বমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক পার্লামেন্ট ও সরকার প্রতিষ্ঠাই বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল সভার সিদ্ধান্ত সমূহ:
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাতে বিএনপি এর জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সভায় উপস্থিত ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, বাবু গয়েশ^র চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।
সভায় নিম্নে বর্ণিত সিদ্ধান্ত সমূহ গৃহীত হয়।
১। সভায় বিগত ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ পঠিত ও অনুমোদিত হয়।
২। সভায়, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য অনুসন্ধান কমিটির নিকট নাম প্রেরণ সম্পর্কে স্পষ্ট ভাবে বলা হয় যে, বিএনপি মনে করে বর্তমান জনগণের ম্যান্ডেট বিহীন অবৈধ আওয়ামী সরকারের অধীনে কোন অবস্থাতেই নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার গুলোর নির্বাচনে এই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি তারই প্রেক্ষাপটে মনে করে এখন অনুসন্ধান কমিটিতে নাম প্রেরণ এবং নির্বাচন কমিশন গঠন একেবারই অর্থহীন। বিএনপি বিশ^াস করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত রাখার নীল নকশার অংশ হিসাবে পুনরায় নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারি তৎপরতা সেই চক্রান্তেরই অংশ। বিএনপি তাই মনে করে এই অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সকলের গ্রহণযোগ্য, একটি অংশীদারিত্ব মূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্ব মূলক পার্লামেন্ট ও সরকার প্রতিষ্ঠাই বর্তমান সংকট উত্তরনের একমাত্র পথ।
৩। সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও সরকারের শিল্প বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ফোনলাপ ফাঁস হওয়া এবং সেই প্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রীর ফোনালাপকে রহহড়পবহঃ পড়হাবৎংধঃরড়হ অথবা ‘নির্দোষ ফোনালাপ’ বলে মন্তব্য এবং ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার বিষয়ে তদন্তের বিষয়টি নিয়ে সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। সভা মনে করে ফোনালাপটিকে ‘নির্দোষ ফোনলাপ’ বলে এড়িয়ে যাওয়ার কোনও সুযোগ নেই। যেহেতু আইনমন্ত্রী ফোনালাপটির সত্যতা স্বীকার করেছেন সেইহেতু, এই আলাপের বিষয় বস্তুগুলো অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পর্যালোচনা এবং ফোনালাপে আলোচিত বিষয় গুলো সম্পর্কে নিরপেক্ষ তদন্ত, জনগণের কাছে সত্য তুলে ধরা এবং জবাবদিহিতা অত্যন্ত জরুরী। আইনমন্ত্রী ও উপদেষ্টার ফোনালাপে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে।
ক) আলোচ্য বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও সরকারের আই.টি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের ইৎধরহ ঈযরষফ উল্লেখ করা এবং তার নাম উচ্চারণ খ) উচ্চ আদালতের দুই জন বিচারপতির নাম উল্লেখ এবং এর প্রভাব গ) সচিবালয়ের প্রশাসনের স্বাভাবিক কার্যকলাপে অনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং প্রভাব বিস্তার। এই বিষয় গুলো পর্যালোচনায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতার এবং হস্তক্ষেপের সুস্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়। সভা, অবিলম্বে এই ফোনলাপ ফাঁস হওয়া বিষয়ে শুধু তদন্ত নয় ফোনলাপের বিষয় বস্তু সম্পর্কে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করছে এবং দূর্নীতি দমন কমিশনের হস্তক্ষেপ ও নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে অতীতে ফাঁস হওয়া সকল ফোনালাপ সম্পর্কে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবী করছে। দূর্নীতি দমন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত এবং কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছে।
৪। সভায়, সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মী প্রেরণে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় সিন্ডিকেট অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সভা মনে করে এই ধরনের সিন্ডিকেট গঠনের মাধ্যমে অতি উচ্চ ব্যায়ে বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য বাংলাদেশী শ্রমিকদের বাধ্য করে তাদের নিঃস্ব করার অমানবিক প্রক্রিয়াকে সরকার প্রশ্রয় দিচ্ছে। কর্মসংস্থানহীন যুবকেরা জমি, বাড়ী, স্ত্রী অথবা মায়ের অলংকার বিক্রি করে সরকারের এহেন হীন কর্মকান্ডে নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হচ্ছে। সভা অবিলম্বে এই সব সিন্ডিকেট ভেঙ্গে প্রকৃত ব্যয়ে বিদেশে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির দাবী জানাচ্ছে।
৫। সভায়, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দেশে প্রথম বারের মত সকলের গ্রহণযোগ্য এবং অংশিদারিত্বমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের সাফল্য এবং বর্তমান প্রেক্ষিতে পুনরায় তা জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি উপযুক্ত কর্মসূচী গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৬। সভায়, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের সদর দফতর, পিলখানায় সংঘটিত ভয়াবহ মর্মান্তিক বিদ্রোহে প্রায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা এবং পরবর্তীতে অসংখ্য বিডিআর আর নাম পরিবর্তন, হাজার হাজার বিডিআর সদস্যদের গ্রেফতার ও বিচারে সাজা প্রদান বিষয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ আলোচনা সভা ও বনানী কবরস্থানে জিয়ারতের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৭। সভায়, ক্রমবর্ধমান নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি চাল, ডাল, তেল এর মূল্য বৃদ্ধি এবং তেল, গ্যাস ও পানির মূল্য ধাপে ধাপে বৃদ্ধিতে স্বল্প বিত্ত, মধ্যবিত্ত, শ্রমজীবি মানুষের চরম ভোগান্তির বিষয়ে আলোচনা হয়। সভা মনে করে, অনির্বাচিত সরকারের চরম দূর্নীতি, অপব্যয় এবং অপরিকল্পিত ভ্রান্ত নীতির কারনে অস্বাভাবিকহারে এই সব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে জ¦ালানী খাতে কুইকরেন্টাল প্রজেক্টে জবাবদিহীন ভাবে বিনিয়োগ, ঢাকা ওয়াসায় সীমাহীন দূর্নীতি, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসকিম এ খান ৩ বার চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের প্রতিমাসে ৫ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা বেতন, অব্যাবস্থপনার কারনে মূল্য বৃদ্ধি হচ্ছে। ৩৮.৮% মূল্য বৃদ্ধি করে প্রতি ইউনিটে (এক হাজার লিটার) ২১.০০ টাকা গৃহস্থালী এবং ৫৫.০০ টাকা ব্যণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য প্রস্তাব করা সাধারণ মানুষের ওপর মরার ওপর খাড়ার ঘা সমান, উপরন্ত পানির মান অত্যন্ত নিচু হওয়ায় তা সেবন যোগ্য নয়। এই প্রেক্ষিতে পানির মূল্য বৃদ্ধি কোন মতেই গ্রহণ যোগ্য নয়। দেশে গ্যাস উৎপাদনের প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিকে অনৈতিক মুনাফা পাইয়ে দেওয়ার জন্য এলপিজি গ্যাস আমদানী, আন্তর্জাতিক বাজারে জ¦ালানী তেলের মুল্য হ্রাস হলেও বাংলাদেশে জ¦ালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি জনজীবনকে ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন করছে। পণ্য পরিবহণ ব্যয় ও সাধারণ মানুষের যাতায়াত ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। একদিকে করোনার কারনে কর্মচ্যুতি, ব্যবসার ক্ষতি অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ও কর্মজীবি মানুষের জীবনকে দূর্বিসহ করে তুলেছে। সভায় অবিলম্বে পানি, গ্যাস, তেলের মূল্য বৃদ্ধি বন্ধ করে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া এবং চাল, ডাল, তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য হ্রাসের জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আহ্বান জানায়।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: