ছাত্র হত্যার পরই আন্দোলনে সমর্থন দেয় বিএনপি
এই আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দিয়ে বিএনপি সমাবেশ ডেকেছিল। সেই সমাবেশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পণ্ড করে দেয় এবং হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়।
প্রথম নিউজ, অনলাইন : কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ছাত্রদের গুলি করে হত্যা করার পরেই বিএনপি সমর্থন দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করেছেন, এই আন্দোলনে নৈতিক সমর্থন দিয়ে বিএনপি সমাবেশ ডেকেছিল। সেই সমাবেশ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পণ্ড করে দেয় এবং হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। দেশে এর আগে কখনো এটা ঘটেনি, এটাই প্রথম ঘটলো। খুবই মারাত্মক ঘটনা। মির্জা ফখরুল দাবি করেন, এই আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপি’র কোনো সম্পৃক্ততা নেই। গতকাল একটি দৈনিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নানা ইস্যুতে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, প্রত্যেকটা বিষয়কে আওয়ামী লীগ রাজনীতিকীকরণ করতে চায়। বিএনপি যেহেতু রাজনৈতিক দল এবং তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। সেকারণে এখানে (শিক্ষার্থীদের আন্দোলন) তারা বিএনপিকে দোষারোপ করছে।
এটা আগেও করেছে এবং সব সময় করছে। এটা সম্পূর্ণভাবে ছিল ছাত্রদের একটা আন্দোলন। অরাজনৈতিক একটা দাবি। এটাকে আমরা আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে সমর্থন দিয়েছি। আমরা কখন সমর্থন দিয়েছি, যখন তাদেরকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। একদিনে ২৪ জন, ৪০ জন এবং ৫০ জন করে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের কাছে এখন যে খবর আছে প্রায় ৮০০ জনের উপরে মারা গেছে। শিক্ষার্থীদের অন্যায়ভাবে গুলি করে মারার পরেই বিএনপি গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি দিয়েছিল বলে জানান মির্জা ফখরুল। বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিএনপি নৈতিক সমর্থন দিয়েছিল। এরপরে শিক্ষার্থীদের যখন অন্যায়ভাবে গুলি করে মারলো তখন আমরা গায়েবানা জানাজা করতে গিয়েছি, সেখানে বাধা দেয়া হয়। আ
ন্দোলনে বিএনপি’র কর্মীরাও মারা গেছেন বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, এখন পর্যন্ত আমি নিহতদের তালিকা দিতে পারবো না। তবে মারা গেছেন। আমি জানি, বেশ কয়েক জায়গায় আমাদের কিছু ছাত্র ও শ্রমিক কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। আমাদের কিছু কর্মী আহত হয়েছেন। ছাত্রদের সঙ্গে একসঙ্গে আন্দোলন করতে গিয়ে এটা হয়েছে। গ্রেপ্তারের বিষয়টাও এই মুহূর্তে বলবো না। তবে মঙ্গলবারের পত্রিকায় যেটা আমি দেখেছি, ইতিমধ্যে সাড়ে ৩ শ’ ছাড়িয়ে গেছে।
কোটা নিয়ে আদালতের রায় প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এজন্য যে, আমি কোটার পক্ষে না। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। আমার দলের কথা বলছি না। নিঃসন্দেহে যারা মুক্তিযোদ্ধা আছেন তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। আমি নিজেও মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধে আমি বিশ্বাস করি। । বীর মুক্তিযোদ্ধারা শ্রেষ্ঠ সন্তান। তাদেরকে বিশেষ বিশেষ সুবিধা দেয়ার পক্ষে আমি। সেটা দেয়া উচিত। তাদের সন্তাদেরও দেয়া উচিত।
সম্প্রতি দুর্নীতির ইস্যুগুলো ভিন্নদিকে নিতেই কোটা সংস্কারের বিষয় সামনে নিয়ে আসা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে অনেকের মনে সন্দেহ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন মির্জা আলমগীর। বলেন, শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন ছিল, কোটা পদ্ধতির বিরুদ্ধে। এটা ন্যায় ও যুক্তিসঙ্গত দাবি ছিল। যেটা ২০১৮ সালের আন্দোলনের ফলে মীমাংসাও হয়ে গিয়েছিল, সেটাকে আদালতের মাধ্যমে আবারো শুরু করলো! এটা তো হওয়ার কথা ছিল না। এটা কেন হঠাৎ করে হলো? যখনই সরকারের বিরুদ্ধে কতোগুলো দাবি, জনমত এবং জনসমর্থন পেতে থাকে তখনই একটার পর একটা ইস্যু তৈরি করে সেটাকে ভিন্ন দিকে নেয়া হয়। এখানে দুর্নীতির বিষয়টা এত বেশি করে সামনে চলে এসেছিল যে, এটাকে ভিন্ন দিকে নেয়ার জন্য এটা হলো কিনা- সেটা নিয়েও কিন্তু অনেকের মনে সন্দেহ রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের দাবি ও আন্দোলনে সম্পৃক্ততা বিষয়ে সামনে কর্মসূচি দেয়া হবে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সিদ্ধান্ত এখনো আমরা নেইনি। আমাদের অনেক নেতাই এখন কারাগারে আছেন। কারফিউ চলছে। ইন্টারনেট সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। সেকারণে আমরা আমাদের সভা করতে পারছি না। যে সভার মাধ্যমে আমরা সিদ্ধান্ত নেই। তবে আমরা বলেছি, আন্দোলনে আমাদের সমর্থন আছে। আন্দোলন চলমান আছে।
আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কারফিউ জারি এবং ইন্টারনেট বন্ধসহ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এর নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমরা এটার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে আমরা একত্রিত হয়ে তাদের কম্প্লিট শাটডাউনকে সমর্থন দিয়েছি।