ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যা ,গ্রেফতারের ঝুঁকিতে আরো ৮৯ পুলিশ কর্মকর্তা

ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যা ,গ্রেফতারের ঝুঁকিতে আরো ৮৯ পুলিশ কর্মকর্তা

প্রথম নিউজ, অনলাইন:  ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ২৯২ জন পুলিশ সদস্যের নাম এসেছে। এর মধ্যে ৯২ জনের একটি শীর্ষ তালিকা তৈরি করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এ তালিকার প্রথমদিকে নাম থাকা দুই পুলিশ

ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যা মামলায় এখন পর্যন্ত ২৯২ জন পুলিশ সদস্যের নাম এসেছে। এর মধ্যে ৯২ জনের একটি শীর্ষ তালিকা তৈরি করেছে পুলিশ সদর দপ্তর। এ তালিকার প্রথমদিকে নাম থাকা দুই পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) একেএম শহীদুল হক ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরাও রয়েছেন এ তালিকায়। সেখান থেকে বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর বাইরে তালিকায় আছেন আরো ৮৯ পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের এখনো গ্রেফতার করা না হলেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে। যেকোনো সময় গ্রেফতার করা হতে পারে বলে পুলিশ সদর দপ্তরসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। তাদের ভাষ্য, ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী বা হামলার ইন্ধনদাতা সব পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানার একটি হত্যা মামলায় গত বৃহস্পতিবার গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। ঢাকার মহানগর হাকিম শরীফুর রহমান তাকে দুদিন হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।

বিসিএস পুলিশের ৩১ ব্যাচের আলেপ উদ্দিন ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে পুলিশের বিশেষ শাখায় কর্মরত ছিলেন। এর আগে তিনি র‍্যাবের গোয়েন্দা বিভাগ ও র‍্যাব-১১ তে কর্মরত ছিলেন। সরকার পতনের পর থেকে বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে হত্যার ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের জন্য বাহিনীর পক্ষ থেকে শীর্ষ তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ তালিকা ধরে ওই সব পুলিশ সদস্যের অপরাধে যুক্ত থাকার বিস্তারিত তথ্য ও প্রমাণ সংগ্রহ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে এ তালিকার সব পুলিশ সদস্যকেই গ্রেফতার করা হবে। এমনকি ৫ আগস্টের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের নামও রয়েছে এ তালিকায়। তাদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেয়া হবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যার দায়ে এখন পর্যন্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ২৭৬টি মামলা দেশের বিভিন্ন থানায় হয়েছে। সাবেক আইজিপি শহীদুল হকের নামে সাতটি ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের নামে ৩৬টি মামলা আছে। এছাড়া সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি (সাবেক এসবি-প্রধান) মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ১১টি এবং সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা হয়েছে। সাবেক র‍্যাব ডিজি হারুন-অর-রশীদের নামে পাঁচটি এবং ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার একেএম হাফিজ আক্তারের নামে ছয়টি মামলা করা হয়েছে। এছাড়া ডিএমপি ডিবির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদের নামে ৩৭টি, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারের নামে ২৭টি, এসএম মেহেদী হাসানের নামে আটটি এবং ওয়ারী বিভাগের সাবেক ডিসি ইকবাল হোসাইন আট মামলার আসামি।

ডিএমপির সাবেক কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, সিআইডির সাবেক প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া, সাবেক অতিরিক্ত আইজি লুৎফর কবির, জামিল আহম্মেদ, র‍্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, ডিএমপির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম, সিটিটিসির সাবেক অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান, সিটিটিসির যুগ্ম কমিশনার কামরুজ্জামান মামলার আসামি।

এর বাইরে তালিকার ওপরের দিকে আছেন সাবেক ডিআইজি রিপন সরদার, অতিরিক্ত ডিআইজি প্রলয় কুমার জোয়ার্দার, যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মারুফ হোসেন সরদার, ডিএমপি ডিবির যুগ্ম কমিশনার সঞ্জিত কুমার রায়, ডিএমপি ডিবি রমনা বিভাগের সাবেক ডিসি মোহাম্মদ আশরাফ ইমাম, সাবেক ডিসি (হেডকোয়ার্টার্স) তানভির সালেহীন ইমন, অতিরিক্ত ডিআইজি (সাবেক ডিবি ডিসি) মতিউর রহমান, ডিবির সাবেক ডিসি রাজিব আল মাসুদ, মাহফুজুল আল রাসেল, জাহিদুল তালুকদার, মতিঝিলের সাবেক ডিসি হায়াতুল ইসলাম, উত্তরার সাবেক ডিসি আশরাফুল আজিম, ডিসি এইচএম আজিমুল হক, হাফিজ আল ফারুক, মাহাবুব-উজ-জামান, জাফর হোসেন প্রমুখ।

অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি), পুলিশ পরিদর্শক, এসআই পদমর্যাদার বেশকিছু কর্মকর্তা ছাড়াও গুলশান থানার এসআই মামুন মাতব্বরের বিরুদ্ধে তিনটি এবং শাহবাগ থানার এসআই আশরাফুল সিকদারের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে।

তবে সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়া পুলিশ কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করা হলে বাহিনীর অন্য সদস্যদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব তৈরির আশঙ্কা করছেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তারা। সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যেকোনো অপরাধ সংঘটিত হলে মামলা হয়। এরপর প্রাথমিকভাবে একটা তদন্ত হয়। সেখানে যদি অভিযুক্ত ব্যক্তির সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তার ভিত্তিতে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিনকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে হয়তো তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে। তবে এখানে আমাদের একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে যে ঢালাওভাবে যেন কোনো পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার বা হয়রানি করা না হয়।’

পুলিশ সদর দপ্তরও মনে করে কোনো অবস্থাতেই সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানি করার সুযোগ নেই। পুলিশের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) ইনামুল হক সাগর বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন যে বিভিন্ন মামলায় যারা আসামি তাদের সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হচ্ছে, এমনকি পুলিশ সদস্যদেরও সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে। যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে।’