চার কারণে কমছে লঞ্চযাত্রী

নাগরিক সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির এক প্রতিবেদনে এসব কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।

চার কারণে কমছে লঞ্চযাত্রী

প্রথম নিউজ, ঢাকা: ঢাকা থেকে বরিশালসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর বিভিন্ন নৌপথে লঞ্চযাত্রীর সংখ্যা কমার পেছনে চারটি প্রধান কারণ রয়েছে। সেগুলো হলো—পদ্মা সেতুর কারণে রাজধানী ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে উন্নত সড়ক যোগাযোগ, মহানগরীর তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে ঢাকা নদীবন্দরের সদরঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কে দুঃসহ যানজট, প্রয়োজনীয় খনন ও নিয়মিত পলি অপসারণের অভাবে বিভিন্ন নৌপথে তীব্র নাব্যসংকট এবং টার্মিনালসহ এর আশেপাশে ইজারাদারের লোকজন ও কুলি-মজুরের দৌরাত্ম্য।

নাগরিক সংগঠন নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটির এক প্রতিবেদনে এসব কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে।

আজ সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করে সংগঠনটি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য পর্যালোচনা, নৌযান ও বাসমালিক, নৌ ও বাসশ্রমিক, সাধারণ যাত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। সংকট নিরসনে সাতটি সুপারিশ উত্থাপন করেছে জাতীয় কমিটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা থেকে বরিশাল বিভাগসহ উপকূলীয় জেলাগুলোর বিভিন্ন নৌপথে ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ লঞ্চযাত্রী কমেছে। এর মধ্যে গত এক বছরেই কমেছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। এই মন্দার কারণে নৌযান মালিকরা অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছেন এবং লঞ্চ চলাচল কমে আসছে। ফলে অনেক নৌযান শ্রমিকও দিন দিন বেকার হয়ে পড়ছেন।

জাতীয় কমিটি জানায়, ঢাকা থেকে লঞ্চে যাতায়াতকারীদের বড় অংশ বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার যাত্রী। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা শহরের সঙ্গে খুলনা, বরিশাল ও ফরিদপুর বিভাগের ২১ জেলার অত্যাধুনিক সড়ক যোগাযোগ হয়েছে। মানুষ স্বল্পসময়ে আরামদায়ক যাতায়াত করতে পারছে। ফলে বরিশালগামী যাত্রীদের একটি বড় অংশ লঞ্চে চড়ছে না। এ কারণে গত এক বছরে লঞ্চযাত্রীর হার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ কমেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, লঞ্চে ওঠার জন্য যাত্রীদের সদরঘাট পর্যন্ত যেতে হয়। কিন্তু গুলিস্তান, দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু (বাবুবাজার ব্রিজ) ও শ্যামপুর থেকে সদরঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কে সারা বছর তীব্র যানজট থাকে। এতে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় নষ্ট ও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ কারণে অনেকে লঞ্চে যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে।

নাব্যতা সংকটের কারণেও নৌপথে যাত্রী কমেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার নাব্যতা সংকট নিরসনে পর্যাপ্ত অর্থ দিলেও নদীগুলো যথাযথভাবে খনন করা হয়নি। অনেক নৌপথে নিয়মিত পলি অপসারণের জন্য সংরক্ষণখাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা করেনি। ফলে মালিকরা ঢাকা থেকে নাব্যহীন নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিকে বাধ্য হয়েছেন।

এছাড়া সদরঘাট টার্মিনালসহ আশেপাশের ঘাটগুলোতে হয়রানির কারণেও লঞ্চযাত্রী কমছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ইজারাদারের লোকজন যাত্রীদের সঙ্গে থাকা মালামালের টোল বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করে। কুলি-মজুররাও মালামাল নিয়ে টানা-হেঁচড়া করে এবং বাড়তি মজুরি নেয়। সব মিলিয়ে গত দুই বছরে ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ লঞ্চযাত্রী কমেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

জাতীয় কমিটির প্রতিবেদনে সংকট নিরসনে সাতটি সুপারিশ উত্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো হলো—
১. শহীদ নূর হোসেন স্কোয়ার (জিপিও মোড়) থেকে সদরঘাট পর্যন্ত অবিলম্বে ওড়াল সেতু নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এ সেতু সদরঘাট থেকে একদিকে বাবুবাজার ব্রিজ, অন্যদিকে শ্যামপুর পর্যন্ত সংযুক্তকরণ।

২. উড়াল সেতু নির্মাণের আগপর্যন্ত উল্লেখিত সড়কগুলোকে যানজটমুক্ত রাখতে দু’পাশের হকারসহ সব ধরনের অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জোরদার।

৩. প্রয়োজনীয় খনন ও পলি অপসারণের মাধ্যমে সকল নৌপথে সারা বছর নাব্য সংরক্ষণ।

৪. টার্মিনাল ও আশপাশের ঘাটগুলোতে যাত্রী হয়রানি বন্ধে ইজারাদার ও কুলি-মজুরের দৌরাত্ম্য বন্ধ।

৫. লঞ্চে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি, ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চ চলাচল বন্ধ ও নৌ দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।

৬. টার্মিনাল ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়ন, যাত্রীদের বিনামূলে টয়লেট ব্যবহার, বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহ ও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।

৭. লঞ্চমালিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তাদেরকে সম্ভাব্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান।