খাদিজাকে অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান অ্যামনেস্টির
বাংলাদেশে কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার প্রাক-বিচার আটক পর্বের এক বছর পূর্ণ হয়েছে।
প্রথম নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশে কঠোর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) অধীনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরার প্রাক-বিচার আটক পর্বের এক বছর পূর্ণ হয়েছে।
এর প্রতিক্রিয়ায়, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দক্ষিণ এশিয়ার উপ-আঞ্চলিক পরিচালক নাদিয়া রহমান বলেছেন: ''বছরব্যাপী কারাভোগ এবং খাদিজার জামিনের বারবার প্রত্যাখ্যান প্রমাণ করে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার স্পষ্টভাবে লঙ্ঘিত। খাদিজার এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা উচিত, তার ডিগ্রির জন্য অধ্যয়ন করা উচিত। একটি কঠোর আইনের অধীনে তাকে জেলে ঠেলে দেয়া তার ভবিষ্যত অন্ধকারে ঢেকে দেবে। কর্তৃপক্ষ সমালোচনামূলক কণ্ঠকে রোধ করতে ক্রমাগত নির্বিচারে আটক করে শীতল নজির স্থাপন করে চলেছে। সরকারের কঠোর ডিএসএ বাতিল করার সিদ্ধান্ত সত্ত্বেও, কর্তৃপক্ষ মানবাধিকারকে ক্ষুণ্ন করতে এবং সমালোচকদের নিপীড়ন করতে আইনটি ব্যবহার করে চলেছে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে খাদিজার পাশাপাশি সেই সকল মানুষকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে যাদের বাংলাদেশে নির্বিচারে আটকে রেখেছে। তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাসহ শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মানবাধিকার প্রয়োগ করার পথ প্রশস্ত করার আহ্বান জানিয়েছে। ''পাশাপাশি মুক্তির অপেক্ষায় থাকা খাদিজার কাছে পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যপরিষেবা পৌঁছে দেয়া এবং তাঁকে উপযুক্ত পরিবেশে রাখার আবেদন জন্য হয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে।
বছর সতেরোর খাদিজাতুল কুবরা বাংলাদেশের ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী ছিলেন। তিনি ২০২০ সালের নভেম্বরে "হিউম্যানিটি ফর বাংলাদেশ" নামে সোশ্যাল মিডিয়া পেজের হয়ে ক্যাম্পাসে একটি ওয়েবিনার হোস্ট করেছিলেন। প্রায় দুই বছর পর, ২৭ আগস্ট ২০২২ তারিখে, খাদিজাতুল কুবরাকে ডিএসএ-এর অধীনে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরের দিন ঢাকার কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা ইউটিউবে অনুষ্ঠানের একজন অতিথি বক্তা দ্বারা আপলোড করা ওয়েবিনারের একটি ভিডিও রেকর্ডিং দেখেছিলেন।
সেই অতিথি বক্তা পূর্বে একজন বাংলাদেশি সেনা কর্মকর্তা ছিলেন যিনি এখন কানাডায় রয়েছেন। তিনি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সমালোচনামূলক মন্তব্য পেশ করেছিলেন। অন্যান্য অভিযোগের মধ্যে 'আইন-শৃঙ্খলার অবনতি' এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গে 'মানহানিকর' বক্তব্য রাখার জন্য ডিএসএর অধীনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
তারপর থেকে, খাদিজার জামিনের আবেদনগুলি বেশ কয়েকবার প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। খাদিজার কিডনি সমস্যাসহ একাধিক স্বাস্থ্য সমস্যার কথা উল্লেখ করা হলেও তাঁর পরিবার এবং মিডিয়া রিপোর্ট অনুসারে খাদিজাকে এই বছরের শুরুতে এমন একটি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছিল যেখানে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ২০২৩ সালের ১০ জুলাই, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ খাদিজার জামিনের শুনানি চার মাসের জন্য স্থগিত করে, আদালতের দাবি তার টকশোতে প্রকাশিত মতামতের দায় তাকেই নিতে হবে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল খাদিজার অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সমর্থন জোগাড় করতে জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছে।