Ad0111

করোনায় আক্রান্ত শের-ই বাংলা মেডিক্যালের ৪২৬ নার্সের কেউ প্রণোদনা পাননি

নার্সদের প্রণোদনা দেওয়ার সরকারি ঘোষণা থাকলেও ১৮ মাসেও কেউ পাননি। এতে ক্ষুব্ধ নার্সরা। 

করোনায় আক্রান্ত শের-ই বাংলা মেডিক্যালের ৪২৬ নার্সের কেউ প্রণোদনা পাননি
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারি করোনাকালীন চিকিৎসাসেবায় বড় ভূমিকা পালন করছেন বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে করোনায় মারা গেছেন দুই নার্স। আক্রান্ত হয়েছেন ৪২৬ নার্স। কিন্তু নার্সদের প্রণোদনা দেওয়ার সরকারি ঘোষণা থাকলেও ১৮ মাসেও কেউ পাননি। এতে ক্ষুব্ধ নার্সরা। 

হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে ৫০০ শয্যা অনুযায়ী সেবা তত্ত্বাবধায়ক একজন, সেবা উপ-তত্ত্বাবধায়ক একজন, নার্সিং সুপারভাইজার ২৬ জন, সিনিয়র স্টাফ নার্স ৮৭৬ জনের মধ্যে ১৫টি পদ শূন্য, স্টাফ নার্স ৫৪ জন এবং সহকারী স্টাফ নার্স ২০ জনের মধ্যে ১৮টি পদ শূন্য। সর্বমোট ৯৭৫ জনের মধ্যে ৩৩টি পদ শূন্য। কাগজে-কলমে রয়েছে এক হাজার শয্যার হাসপাতাল। এই জনবল দিয়ে প্রতিদিন সাধারণ ও করোনায় আক্রান্তসহ প্রায় দুই হাজার ২০০ রোগীকে সেবা দিচ্ছেন তারা।

হাসপাতালের স্টাফ নার্স আশরাফুন্নেছা, গুলশান আরা ও আফরোজা আক্তার জানান, করোনা শুরুর পর রোগীর সংখ্যা বাড়লে মেডিক্যাল এক্সটেনশন পাঁচ তলা ভবনকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল করা হয়। করোনায় আক্রান্ত রোগীর চাপ বাড়তে থাকলে ২০ শয্যা থেকে শুরু হওয়া করোনা ওয়ার্ড পরবর্তী সময়ে আড়াইশ শয্যার করা হয়। যেখানে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিনশ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। সেখানে দুই-তিন জন চিকিৎসক দায়িত্বপালন করলেও ২৪ ঘণ্টায় তিন শিফটে ৩০ জন করে নার্স দায়িত্বপালন করেছেন। এ ছাড়া বাকিরা সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। করোনাকালীন সাধারণ ও করোনায় আক্রান্ত রোগীরা দিনরাত নার্সদের পাশে পেয়েছেন।

তারা জানান, কাছাকাছি থেকে সেবা দেওয়ায় ৪২৬ নার্স করোনায় আক্রান্ত হন। তারা সুস্থ হয়ে আবার দায়িত্বপালন করছেন। অনেকে দুবার আক্রান্ত হয়েছেন। তারা আক্রান্ত হয়েও থেমে যাননি। তাদের মাধ্যমে পরিবারের সদস্যরাও আক্রান্ত হন। তাতে নার্স ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সহস্রাধিক লোক আক্রান্ত হন। এর মধ্যে দুই জনের মৃত্যু হয়। তারা হলেন নার্সিং সুপারভাইজার মাসুমা আক্তার ও সিনিয়র স্টাফ নার্স রেহানা পারভীন।

একাধিক স্টাফ নার্স জানিয়েছেন, করোনা শুরুর পর থেকে সব ধরনের ছুটি বন্ধ রয়েছে। অসুস্থ হলেও ছুটি পাননি। ১১১ নার্স অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন। ওই অবস্থায় রোগীদের সেবা দিয়েছেন তারা। নার্স সালমা আক্তার বলেন, ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি। আমরা সময়মতো এসব ছুটি নিই। কিন্তু করোনা মহামারি বিবেচনায় ডিউটি করেছি। সন্তান হওয়ার পর আবার দায়িত্বপালন করছি। কোনও ছুটি পাইনি।

নার্স সুপারভাইজার সালমা আক্তার ও সুপর্না কর্মকার জানান, বর্তমানে হাসপাতালে ৫০০ রোগীর বিপরীতে যে নার্স থাকার কথা সেই সংখ্যক নার্স কর্মরত। কিন্তু প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার থেকে ২২০০ রোগীকে সেবা দিতে হয়। সেখানে নার্স প্রয়োজন চার হাজারের অধিক। কিন্তু ৫০০ রোগীর নার্স দিয়ে সেবা চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। সরকারের দেওয়া নির্দেশ আমরা যথাযথ পালন করলেও ঘোষণা অনুযায়ী আজো প্রণোদনা পাইনি।

তারা বলেন, প্রতিটি দুর্যোগকালীন নার্সরা শতভাগ দায়িত্ব পালন করেন। তখন পরিবার-পরিজনের কথা ভুলে যান। যাদের সেবায় কাজ করেন তাদের পরিবার-পরিজন ভাবেন। অনেক সময় এতটা চাপ থাকে বাসায় যাওয়া সম্ভব হয় না। সরকারের কাছে দাবি একটাই, ঘোষণা বাস্তবায়ন করুন, আমাদের প্রণোদনা দিন। তাহলে কাজে আরও উৎসাহ বাড়বে।

শুধু নার্সরা নন, হাসপাতালের চিকিৎসকরাও এখনও প্রণোদনা পাননি। হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ বিধান চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, সরকারের ঘোষণা রয়েছে প্রণোদনা দেওয়ার। কিন্তু কোনও চিকিৎসক প্রণোদনা পাননি। আর আমরা এ জন্য কোনও ধরনের পদক্ষেপও গ্রহণ করিনি। বিষয়টি হাসপাতালের পরিচালক জানেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক সেলিনা আক্তার বলেন, আমরা অন্যায্য কিছু দাবি করছি না। করোনাকালীন দায়িত্বপালনে প্রণোদনার ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই ঘোষণা পাওয়ার পর নার্সদের মধ্যে একটা উৎসাহ কাজ করেছিল। ফলে নার্সরা ছুটি ছাড়াই দিনরাত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। সরকারের ঘোষণা রয়েছে প্রণোদনা হিসেবে এককালীন দুই মাসের বেতনের বেসিক দেওয়ার। বিভিন্ন হাসপাতালে এটি বাস্তবায়ন হলেও শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কোনও নার্স প্রণোদনা  পাননি। এরই মধ্যে জন্য বিক্ষোভ করে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে প্রণোদনা দাবি করেছেন তারা। পরিচালক তাদের আশ্বাস দিয়েছেন।

শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচএম সাইফুল ইসলাম বলেন, করোনাকালীন রোগীদের চিকিৎসাসেবায় বড় ভূমিকায় ছিলেন নার্সরা। তারা অসুস্থ অবস্থায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। এ ছাড়া রোগী অনুযায়ী নার্স সংকট থাকলেও তারা বুঝতে দেননি। তাদের দাবি, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী প্রণোদনা বাস্তবায়ন। আমি মন্ত্রণালয়ে প্রণোদনার জন্য একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রণোদনা দেবেন।

পরিচালক আরও বলেন, হাসপাতালে কর্মরত রয়েছেন ৯১ চিকিৎসক। তারাও প্রণোদনা পাননি। চিকিৎসক-নার্স সবাই যাতে প্রণোদনা পান সে ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। হাসপাতালে ২২৪ চিকিৎসকের মধ্যে ১৩৩টি পদ শূন্য। ওসব পদ পূরণের চেষ্টা চলছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, করোনা শুরুর পর অর্থাৎ ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত শের-ই-বাংলা হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়েছেন সাত হাজার ৩৫১ রোগী। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত ছিলেন দুই হাজার ৩৪৯ জন। একই সময়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন পাঁচ হাজার ৯০৭ জন। এদের মধ্যে করোনা রোগী ছিলেন এক হাজার ৯২৫ জন। মৃত্যুবরণ করেছেন এক হাজার ৪২২ জন। তার মধ্যে করোনায় আক্রান্ত ছিলেন ৪২৬ জন।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news