কুমিল্লায় প্রতিপক্ষের হামলায় যুবলীগ নেতা নিহত
রোববার রাতেই নিরাপত্তার জন্য সেখানে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছিল। এখন সেখানে আরও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রথম নিউজ, কুমিল্লা: কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় আধিপত্য বিস্তার ও রাজনৈতিক বিরোধের জেরে এক যুবলীগ নেতাকে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ।এ সময় আহত হয়েছেন আরও আটজন। সোমবার দুপুরে উপজেলার চালিভাঙ্গা বাজারে এ ঘটনা ঘটে বলে মেঘনা থানার ওসি মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জানান। তিনি বলেন, এ ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। রোববার রাতেই নিরাপত্তার জন্য সেখানে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প করা হয়েছিল। এখন সেখানে আরও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নিহত কামরুল ইসলাম (৩২) চালিভাঙ্গা গ্রামের আবদুর রবের ছেলে। তিনি চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। কামরুল কুমিল্লা জেলা পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেঘনা উপজেলা) মো. আবদুল কাইয়ুমের অনুসারী ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আহতদের মধ্যে তিনজনের পরিচয় জানা গেছে। তারা হলেন- দাইয়ান, সোহেল মিয়া, হানিফ মিয়া। এদের মধ্যে দাইয়ানের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা এলাকায় অবৈধ বালু ব্যবসা ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে নিজাম সরকার নামে এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা নিহত হন। নিজাম চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির সরকারের ছোট ভাই।
হত্যার পরদিন নিজামের ছোট ভাই টিটু সরকার বাদী হয়ে ২৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও ৪০ থেকে ৫০ জনের বিরুদ্ধে মেঘনা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে প্রধান আসামি করা হয় জেলা পরিষদের সদস্য আবদুল কাইয়ুমকে। তিনি ‘শেখ রাসেল শিশু-কিশোর পরিষদ’ এর উপজেলা সভাপতি। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কাইয়ুমের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক বিরোধ চলছে চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির সরকার ও তার অনুসারীদের।
নিজাম হত্যাকাণ্ডের পর কাইয়ুমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর থেকে তার অনুসারীরা এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। পরে জামিন পেলেও কাইয়ুম আর এলাকায় ঢুকতে পারছিলেন না। তাদের ভয় ছিল এলাকায় এলেই প্রতিপক্ষের লোকজন হামলা চালাবে।
বিষয়টি নিয়ে পুলিশের সঙ্গে আলোচনার জন্য শুক্রবার কাইয়ুমের পক্ষের লোকজন মেঘনা থানায় যান। তখন পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের বাড়িঘরে ফিরতে আশ্বাস দেওয়া হয়। পাশাপাশি এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রাখতে রোববার রাত থেকে চালিভাঙ্গা বাজারে একজন এসআই নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়।
সোমবার দুপুর থেকে নলচর, ফরাজিকান্দি, চালিভাঙ্গা গ্রামের কাইয়ুমের সমর্থকরা বাড়িঘরে ফেরার চেষ্টা করেন। এর অংশ হিসেবে দুপুর ১টার দিকে কিছু সমর্থক ট্রলারে এসে চালিভাঙ্গা বাজারে নামেন।
তাদেরকে দেখে প্রতিপক্ষের লোকজনও জড়ো হয়। একপর্যায়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায় প্রতিপক্ষ। এতে আটজন আহত হয়। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হলে টেঁটাবিদ্ধ যুবলীগ নেতা কামরুল বিকালে মারা যান।
জেলা পরিষদ সদস্য আবদুল কাইয়ুম সাংবাদিকদের বলেন, “চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির সরকারের লোকজন পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে কামরুলকে খুন করেছে। আমি খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছি।”