‘কাঙ্ক্ষিত গতি অর্জন করতে পারছে না গুম কমিশন’

 ‘কাঙ্ক্ষিত গতি অর্জন করতে পারছে না গুম কমিশন’

প্রথম নিউজ, ঢাকা : ২০২৪ সালের ২২ মার্চ ‘আমরা বিএনপি পরিবার’ নামে একটি সেল গঠন করে বিএনপি। দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা গুম, খুন ও পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন তাদের পাশে থাকতেই গঠিত হয় এ সেল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় এই সেলে উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন দলটির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা। মোট সদস্য ৯। এই সেলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন।

সম্প্রতি এই সেলের বিভিন্ন কার্যক্রম, সরকার গঠিত গুম কমিশন, কাজের চ্যালেঞ্জ ও সফলতার বিষয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক খালিদ হোসেন।

আতিকুর রহমান রুমন: এই সংগঠন তৈরি করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি সংগঠনটি এক বছর আগে তৈরি করলেও মূলত ২০০৯ সাল থেকে আমরা এর কার্যক্রম শুরু করি। পতিত স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন বা বাংলাদেশকে আমাদের মতো করে ফিরে পেতে যে আন্দোলন করেছি, সে আন্দোলনে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের অসংখ্য নেতাকর্মী ও নারী নেত্রীরাও খুন-গুমের শিকার হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন। কেউ হাত-পা হারিয়েছেন। কেউ পুলিশের গুলিতে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। তাদের হুইলচেয়ার দেওয়া থেকে শুরু করে আমরা অনেক কাজ করেছি। আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা রাজি। আমার মনে হয়, গুম কমিশনের যথেষ্ট লজিস্টিক সাপোর্ট রয়েছে। জাস্ট ইচ্ছাশক্তিটা বাড়ালেই ওনারা সফল হবেন।

২০২৪ সালে গণআন্দোলনে যে প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি ছাত্র-জনতা নিহত হলো, আমরা এদের ঘিরে যখন কাজ শুরু করলাম, তখনই আমাদের সংগঠনটা একটু লাইম লাইটে এলো। তখন থেকে উত্তরোত্তর আমাদের কাজও বাড়ছে। আমরা দেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়া ছুটে বেড়াচ্ছি। এই সংগঠন শুধু আমার নেতৃত্বে নয়, আমাদের সেক্রেটারি রয়েছেন কৃষিবিদ মো. মোকছেদুল মোমিন মিথুন, তিনিও একদিকে ছোটেন। আহ্বায়ক হিসেবে আমিও একদিকে ছুটি।

আমাদের আহ্বায়ক কমিটির যে উপদেষ্টারা আছেন, সেখানে রুহুল কবির রিজভী (বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব), এম রশিদুজ্জামান মিল্লাতসহ (বিএনপির কোষাধ্যক্ষ) আরও তিন-চারজন আছেন, বিদেশ থেকেও রয়েছেন একজন। ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল রয়েছেন (বিএনপির সহ-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক) মূলত তাদের অর্থায়নে এবং দলের অর্থায়নে আমাদের কার্যক্রম চলছে ইনশাআল্লাহ খুব ভালোভাবে।

আমরা শহীদদের দোরগোড়ায় যখন যাচ্ছি, তখন তারা আমাদের আপনভাবে নিচ্ছেন। আমরা তাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আর এই সংগঠনটার সার্বিক কার্যক্রম আমাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সব সময়ই খোঁজ নিচ্ছেন। তিনি প্রতি মাসেই আমাদের একবার করে ডাকেন। কোথাও ভুল ত্রুটি হলে ধরিয়ে দেন। আমাদের কী করতে হবে সে বিষয়ে পরামর্শ দেন।

    আমাদের অর্থায়ন কিন্তু খুব সামান্য। যেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ধরতে পারেন। একজন যদি অসুস্থ বা পঙ্গুত্ববরণ করে আমরা তাদের মেডিসিনের জন্য যদি ৫০০ টাকা লাগে, আমরা ওই পরিমাণ টাকাটাই দিচ্ছি। তার অধিক দিতে পারছি না। কারণ আমাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা আছে।

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে ভুক্তভোগী চার শতাধিক পরিবারকে আমরা সহায়তা করেছি। শুধু দলীয় নয়, সাধারণ বা অন্য সংগঠনের হলেও আমরা দেখছি যে পরিবারগুলো চলতে পারছে না- বিশেষ করে পঙ্গুত্ববরণকারীদের দিকে আমরা বেশি নজর দিচ্ছি। যাদের হুইলচেয়ার দরকার, যাদের কিছু অর্থ হলে ভালো চিকিৎসা করে বাঁচতে পারবে এগুলোতে আমরা বেশি নজর দিচ্ছি।

জাগো নিউজ: সরকারের গুম কমিশনের সঙ্গে আপনাদের আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ রয়েছে কি না এবং এই কমিশনের আপনারা কোনো চ্যালেঞ্জ দেখতে পাচ্ছেন কি না?

আতিকুর রহমান রুমন: আমরা তাদের বিরোধী করে কোনো কথা বলবো না। তাদের কটাক্ষ করবো না, তারা তাদের মতো করে কাজ করবে আমরা আমাদের মতো করে কাজ করে যাবো। বাংলাদেশের জনগণ দেখবে কারা কতটুকু কাজ করছে। এই সংগঠন যখন শুরু হয়, তখন আমাদের কাছে অনেকে আবেদন নিয়ে আসেন। তখন তারা ভুল করে আসছেন, তারা মনে করেছিলেন আমরা গুম কমিশনের একটা অংশ। তখন আমরা তাদের বুঝিয়ে দিয়েছি, পথ চিনিয়ে দিয়েছি। আমরা প্রথম থেকে তাদের দু-চারজনের সঙ্গে কথাও বলেছি। এই আবেদনগুলো আমাদের কাছে আসছে আমরা কী করবো। যেমন, শহীদ মুগ্ধর বড় ভাই (মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। গণআন্দোলনের সময় গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরার আজমপুরে সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান) আমাদের সঙ্গে কিছুদিন সমন্বয় করছে, আমরা এসব লোকদের পথ দেখিয়ে দিয়েছি।

আতিকুর রহমান রুমন: তারা কেন যেন কোথায় একটু স্লো। যেহেতু সরকারি অর্থায়নে এটা হচ্ছে, ওনাদের তো অনেক কিছু সুবিধা আছে। যেমন, আমরা শুনেছি সেখানে হিউজ পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়েছে। আমাদের যেটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে, ওদের সে সীমাবদ্ধতা নেই। তারা সরকারি অর্থায়ন থেকে শুরু করে অনেক সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। আমরা কিন্তু খুব স্বল্পপরিসরে নেমেছি। সবার দোরগোড়ায় যৎসামান্য সাহায্য এবং তারেক রহমানের শুভেচ্ছা বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি। ওনাদের অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো যত দ্রুত করা উচিত ছিল, আমরা সেখানে দেখতে পাচ্ছি একটু ভাটা, একটু স্লো। কাঙ্ক্ষিত গতি তারা অর্জন করতে পারছে না।

আতিকুর রহমান রুমন: ওনারা যদি আমাদের পরামর্শ চায়, আমরা তা দিতে রাজি আছি। আমাদের সহযোগিতা চাইলে আমরা রাজি। আমার মনে হয়, গুম কমিশনের যথেষ্ট লজিস্টিক সাপোর্ট রয়েছে। জাস্ট ইচ্ছাশক্তিটা বাড়ালেই ওনারা সফল হবেন।

জাগো নিউজ: গুম ও খুনের শিকার যে সব পরিবারকে আপনারা সহযোগিতা করছেন তাদের জন্য আয়বর্ধনমূলক কোনো উদ্যোগ নিচ্ছেন কি না?

আতিকুর রহমান রুমন: খুন ও গুমের শিকার পরিবারগুলোর প্রতি আমাদের ওয়াদা রয়েছে। ইতোমধ্যে তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা তাদের পরিবারের জন্য বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছি, রিকশাচালক যারা রয়েছেন- তাদের রিকশা দিয়েছি। আমরা শুধু শহীদদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছি না, এর বাইরে গিয়েও কাজ করছি। যেমন, কিছুদিন আগে একজন ক্রিকেটার যুব ক্রিকেটে ভালো করেছে সিলেটে। তার ফ্যামিলি চালাতে পারছিল না। পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এটা তারেক রহমান যখন দেখেছেন, তখন তিনি আমাদের ফোন করে বলেছেন, এখানে কী করতে হবে দেখো।

আমরা খোঁজ নিয়েছি এবং ক্রিকেটারের বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। তখন তিনি বললেন যে, ‘আমাদের ঘরে পানি পড়ে সত্য, কিন্তু আমার পেটে যদি ভাত না থাকে, আমি যদি না বাঁচি, ঘর দিয়ে কী করবো?’ তখন আমি বললাম, কোনটা আপনার প্রয়োজন? তখন উনি বললেন, ‘আমাদের আহারের যদি ব্যবস্থা করা যায়। যাতে সচ্ছলভাবে চলতে পারি। তাহলে কর্মক্ষম হয়ে আমি একটা ঘর করতে পারি।’

    যারা সত্যিই আমাদের দলকে ভালোবাসেন, ওন করেন, অন্তরে ধারণ করেন, তারেক রহমানকে বিশ্বাস করেন, আমরা সেরকম লোকদের কাছ থেকে সাহায্য নিচ্ছি।

আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনার কী প্রয়োজন? তিনি বললেন, ‘আমাদের যদি দুটি সিএনজি বা অটোরিকশা কিনে দেওয়া হয়, এটার ভাড়া যদি দিনে এক হাজার টাকা আসে, তাহলে আমার মাসে ৩০ হাজার টাকা আসে। তাহলে ওই টাকা দিয়ে আমিও চলতে পারবো, ওই টাকার কিছু সেভ করে আমি ঘরও করতে পারবো।’ আমরা কিন্তু দুটি অটোরিকশা তাকে দিয়েছি তারেক রহমানের পরামর্শে।

আতিকুর রহমান রুমন: আমরা ওনাদের রাজনীতিতে সক্রিয় করবো না, তবে কেউ কেউ আছেন আমাদের সংগঠনের সমর্থক, কেউ কেউ আছেন কর্মী। যারা আছেন, তারা যদি এগিয়ে যান, আমরা সহযোগিতা করবো, কিন্তু আমরা কাউকে জোর করবো না যে আপনাদের আসতেই হবে বা আমরা আসার জন্যই অর্থায়ন করছি। আমাদের অর্থায়ন কিন্তু খুব সামান্য। যেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ধরতে পারেন। একজন যদি অসুস্থ বা পঙ্গুত্ববরণ করে আমরা তাদের মেডিসিনের জন্য যদি ৫০০ টাকা লাগে, আমরা ওই পরিমাণ টাকাটাই দিচ্ছি। তার অধিক দিতে পারছি না। কারণ আমাদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা আছে। কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাদের সহায়তা করছে না, আমাদের পার্টির লোকজন সহায়তা করছে।

আতিকুর রহমান রুমন: যারা আমাদের দিচ্ছেন, তারা নিজেরা কিন্তু উৎসাহিত হয়েই দিচ্ছেন আমাদের কাজ দেখে। অনেকেই আমাদের পাইপলাইনে রয়েছেন- যাদের আমরা শর্টআউট করছি, তারা কী কারণে দিতে চাচ্ছেন? অনেকে আছেন যারা পার্টির সুবিধা নেওয়ার জন্য, এদের হাইব্রিড বলা হয়। এরকম যারা আছেন তাদের আমরা বাদ দিচ্ছি। যারা সত্যিই আমাদের দলকে ভালোবাসেন, ওন করেন, অন্তরে ধারণ করেন, তারেক রহমানকে বিশ্বাস করেন, আমরা সেরকম লোকদের কাছ থেকে সাহায্য নিচ্ছি।