ঐকমত্য কমিশনের টার্গেট জুলাই

ঐকমত্য কমিশনের টার্গেট জুলাই

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: আসছে জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদ চূড়ান্ত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ইতিমধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ হওয়ার পথে। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবে এরপর। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শেষে কমিশন নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সনদ তৈরি করবে। যা জুলাই চার্টার হিসেবে ঘোষণা হতে পারে। এ লক্ষ্য নিয়েই কমিশন কাজ করছে। যদিও এই সময়ে সব দলের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা এবং গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দলগুলোর মতামতকে এক জায়গায় নিয়ে আসাটা বড় চ্যালেঞ্জের মনে করছেন কমিশন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এই চ্যালেঞ্জ সামনে রেখেই তারা এগোচ্ছেন এবং দলগুলো ইতিবাচক থাকলে জুলাইয়ের মধ্যে জাতীয় সনদ ঘোষণা করে তারা দায়িত্ব শেষ করতে চান। যদিও এই কমিশনের মেয়াদ ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত। কমিশন ইতিমধ্যে ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষ করেছে। লিখিত মতামত জমা দেয়ার পর আলোচনায় বসে অনেক বিষয়েরই পরিবর্তন এসেছে। আলোচনার অগ্রগতি হচ্ছে এবং আশাবাদী কমিশন। দ্বিতীয় দফার বৈঠকে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা হবে। দলগুলোর ঐকমত্যের বিষয়গুলো তালিকা আকারে করে তার ওপরে বাকি দ্বিমত, ভিন্নমতসহ যাবতীয় বিষয়গুলো নিয়ে ঐকমত্য সৃষ্টির জন্য আলোচনা হবে। যত দ্রুত রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাবে তত দ্রুত জাতীয় সনদ ঘোষণা করা হবে। জাতীয় সনদ ঘোষণা হলে সরকার নির্বাচনের দিকে যাত্রা শুরু করতে পারবে বলে জানিয়েছে ঐকমত্য কমিশন সংশ্লিষ্টরা। 

মতপার্থক্যের কেন্দ্রে এনসিসি গঠন: আলোচনার প্রাথমিক ধাপে অনেক ইতিবাচক অগ্রগতি হলেও, কিছু স্পষ্ট মতবিরোধও উঠে এসেছে। বিশেষ করে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠন নিয়ে বিএনপি একমত নয়। দলটির মতে, এই কাঠামো বর্তমান বাস্তবতায় গ্রহণযোগ্য নয়। এটার চর্চা এদেশে আগে কখনো ছিল না। একইভাবে জামায়াতে ইসলামী এনসিসি গঠনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করলেও এর কাঠামো ও কার্যকারিতার ক্ষেত্রে কিছু ‘মূলগত সংশোধনের’ দাবি জানিয়েছে। এ ছাড়া বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলগুলো এনসিসি গঠনের পক্ষে মতামত দিয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য, সংসদীয় সরকারের স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করতে এনসিসি গঠন জরুরি বলে মনে করছেন কমিশন সংশ্লিষ্টরা। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেন, এনসিসি নিয়ে আমরা একাধিক ধরনের মতামত পেয়েছি। আলোচনার মাধ্যমে যতটা প্রিন্সিপালে দাঁড় করানো যায়। যেমন উচ্চকক্ষ বিষয়ে কমবেশি সব দলই একমত। কিন্তু কীভাবে তৈরি হবে এটা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে। আমাদের সকলকে কিছু ছাড় দিয়ে এক জায়গায় আসতে হবে। 

জুলাই আন্দোলনের পর ছাত্র-তরুণদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী দলগুলোসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল এনসিসি এবং মৌলিক সংস্কারের পক্ষে। 

সংকটময় রাজনীতিতে ঐকমত্যের খোঁজ: দেশের চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের (এনসিসি) উদ্যোগে সংলাপের আয়োজন জাতীয় রাজনীতিতে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিগত কয়েক মাসে রাজনৈতিক মেরুকরণ, সহিংসতা এবং পারস্পরিক দোষারোপের রাজনীতির মধ্যে এই সংলাপ এক ধরনের আশাবাদ জাগিয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা ও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী কাঠামো প্রতিষ্ঠা। জাতির কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করে জাতীয় সনদ তৈরি করা। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষের দিকে। এখন আমরা একমত, ভিন্নমত, আংশিক একমত যে বিষয়গুলো রয়েছে সেগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় চূড়ান্ত একটা জাতীয় সনদ দাঁড়াবে বলে আশা করছি। আমরা আলোচনা শেষ করে নির্বাচনের দিকে ধাবিত হতে চাই। এটা নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলের ওপর। নির্বাচন করবে নির্বাচন কমিশন, সরকার সিদ্ধান্ত নিবেন। আমরা আমাদের কাজটা দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি। এটা  বহুলাংশে নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলের ওপর। 

এনসিসি গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক দলই একমত। আমরা জানলাম কে কোনটাতে একমত, কোনটাতে দ্বিমত। পরবর্তীতে এখন একমত, দ্বিমতের ঊর্ধ্বে একটা ঐকমত্যের চেষ্টা করবো। আমরা জাতীয় সনদ জুলাইতেই করতে চাই। কিন্তু এটা নির্ভর করবে রাজনৈতিক দলের ওপর। রাজনৈতিক দলগুলো দ্রুত ঐকমত্যে পৌঁছালে নির্বাচনী যাত্রা শুরু হতে পারে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আলোচনা আগেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। দু’একটি রাজনৈতিক দলের সুবিধা অনুযায়ী পেছানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহের প্রথম পর্যায়ে এটা শেষ হবে। অনেকগুলো ক্ষেত্রেই ঐকমত্য আছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভিন্নমত আছে এবং আংশিক মতামত আছে। যে জায়গাগুলোতে দ্বিমত, ভিন্নমত রয়েছে দলগুলোর সঙ্গে এগুলো নিয়ে আবার আলোচনা করা হবে সার্বিক বিশ্লেষণের ওপর ভিত্তি করে।  তারপরেও যে বিষয়গুলো থাকবে সেগুলো হয়তো ওভাবেই থাকবে, সেটা নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেন, আমাদের মেয়াদ আগস্টের ১৫ তারিখ পর্যন্ত। আমাদের লক্ষ্য-চেষ্টা আমরা জুলাইয়ে শেষ করতে চাই। এখন আমরা দলগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদা প্রাথমিক আলোচনা শেষ করেছি। অগ্রগতি হচ্ছে, আমরা আশা করছি জুলাই মাসের মধ্যেই কাজটা শেষ করতে পারবো। আমরা দ্বিতীয় পর্যায়ে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করবো।