এফবিসিসিআই সভাপতির ক্ষোভ চালের মজুতদারিতে
গতকাল এফবিসিসিআই-এর উদ্যোগে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি’- বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
প্রথম নিউজ, ঢাকা : ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, এখন ধানের ভরা মৌসুম। নতুন ধান উঠবে, চালের দাম কমবে- এটাই স্বাভাবিক। এই ভরা মৌসুমে চালের দাম কীভাবে বাড়ে? আপনারা চালের দাম ১০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমি মনে করি সরকার ধরপাকড় করে ঠিক কাজ করছেন। এক ব্যবসায়ী বলেছেন কেজিতে উনি চার আনা লাভ করতে পারেন না, এইটা কোনো কথা। গতকাল এফবিসিসিআই-এর উদ্যোগে ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর আমদানি মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি’- বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এফবিসিসিআই সভাপতি চাল ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা ধানের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়িয়ে দেবেন, আর সরকার ধরপাকড় করবে না- এটা কি হয়? এখন ধান উঠছে, এ অবস্থায় চালের দাম কমার কথা। আপনি-আমি ব্যবসা করে খাই, ব্যবসা করবো। তার মানে কেজিতে ১০/১৫ টাকা বাড়াবেন, এটা কি হয়? আপনি হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে মেশিন আনছেন, এতে খরচ কমার কথা, তাহলে দাম কেন বাড়বে?
জসিম উদ্দিন বলেন, আসলে চালের সংকট না, সবার কাছে চাল আছে। ৫ থেকে ১০ শতাংশ ধান নষ্ট হয়েছে। তাতে এখনই কেন দাম বাড়বে? এটা তো আরও ৭ মাস পরে বাড়বে। সুযোগ পেলেই দাম বাড়বে, এটা সরকার বা আমরা কেউ সহ্য করবো না। চাল ব্যবসা করে গুলশানে বাড়ি করছে, বিভিন্ন স্থানে আরও ৮/১০টি করে বাড়ি আছে, আর সব সময় বলছেন লোকসান। তাহলে সম্পদ কীভাবে করেন। সভাপতি বলেন, হাওর এলাকায় ধান নষ্ট হয়েছে এজন্য চালের দাম বেড়েছে। এখন মোবাইল কোর্ট যাওয়ার পর কেজিতে দাম ৫ টাকা কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। সরকার ধরছে দাম কমছে। এটা কি ঠিক? যদি সমস্যাই থাকতো তাহলে অভিযানের পর দাম কমতো না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তিনি ব্যবসায়ীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সকালে একরকম দাম বিকালে আরেকরকম। আবার দামের পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে ১০ টাকা পর্যন্ত। অনেকে এখন চাল প্যাকেটজাত করছেন। সেখনেও একটা পলিসি থাকা দরকার বলে আমি মনে করি। উনারা যা খুশি তাই করতে পারবেন না। বিভিন্ন কোম্পানি চালের বিজ্ঞাপন দিয়ে দাম বাড়াচ্ছে। এদের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বা ভোক্তা অধিদপ্তরকে পলিসি নিয়ে আসা দরকার যে, তারা কত টাকায় বিক্রি করবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় চালের মার্কেট বাংলাদেশে। মিলে এখন উন্নত প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় চাল উৎপাদন খরচ কমে আসার কথা। তাহলে কেন কমছে না? এ সময় সারা দেশে ধান-চাল মজুতদারদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান আরও জোরদার করার ঘোষণা দেন তিনি। খাদ্যমন্ত্রীর প্যাকেটজাত চাল বন্ধের নির্দেশ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা কোনোভাবেই বন্ধ করা সম্ভব নয়। হাইজেনিকের জন্য অনেকে প্যাকেটজাত চাল খায়। তবে দেশের বাইরে চালের রপ্তানি বন্ধ করা দরকার।
তিনি বলেন, ভারত থেকে পিয়াজ আমদানি কমার পরের দিনই ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজিতে দাম বেড়ে গেল। অথচ আমদানি করা পিয়াজের দাম বাড়বে আরও পরে। কিন্তু দাম বাড়িয়ে দিলো আমাদের ব্যবসায়ীরা। মিলারদের বলবো আপনারা ডিলারদের তালিকা দেন, এত বলার পরও কেন দেন না। আমার ডিলারদের নাম কয়েক সেকেন্ডে চলে আসে। আপনারা কেন দেন না? কোরবানি ঈদের আগে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য- চাল, মসলা, তেল, পিয়াজ, ভুট্টা ও গমের মূল্য বৃদ্ধি না করার আহ্বান জানান জসিম উদ্দীন। এ সময়ে চাল ব্যবসায়ীদের পক্ষে সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা ও ভোজ্য তেল সমিতির সভাপতি অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, ধান বেশি দামে কিনলে তো চাল বেশি দামে বিক্রি করবো। মাত্র ১ শতাংশ ব্যবসায়ী খারাপ কাজ করছে, তাদের দায় তো সব ব্যবসায়ী নেবেন না। চালের সরবরাহ যথেষ্ট রয়েছে, সমস্যা হবে না। ভোজ্য তেলের বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী কোরবানির ঈদে তেলের ঘাটতি হবে না।
মসলা ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষে অনুষ্ঠানে বলা হয়, মসলা আমদানিতে পচনশীল পণ্য ধরে শুল্ক দিতে হয়। প্রতি টন এলাচে শুল্ক দিতে হয় তিন লাখ ৮৫ হাজার টাকা, যা কেজি প্রতি ৩৮৫ টাকা। গোলমরিচে প্রতি কেজিতে ২৭০ টাকা, আলু বোখারাতে ৬৮ টাকা, কিসমিসে ৮৫ টাকা ও বাদামে ৯৯ টাকা শুল্ক দিতে হয়। মসলার ওপর আরোপিত শুল্ক পর্যালোচনার দাবি করেন এই খাতের ব্যবসায়ীরা। গত রোজার ঈদে আনা মসলা এখনও বিক্রি হয়নি জানিয়ে তারা বলেন, আগামী ঈদে মসলা নিয়ে কোনো সংকট তৈরি হওয়ার কথা নয়। রাইস বার্ন তেল স্বাস্থ্যসম্মত মন্তব্য করে ব্যবহার বাড়ানোর আহ্বান জানান এফবিসিসিআই’র সভাপতি। সাধারণ জনগণকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পণ্য না কেনার কথাও বলেন তিনি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews