Ad0111

ফিরে এল বিধিনিষেধ, বাড়ছে উদ্বেগ

পুরো বিশ্বের মতো দেশেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে।

ফিরে এল বিধিনিষেধ, বাড়ছে উদ্বেগ
ফাইল ফটো

প্রথম নিউজ, ঢাকা: পুরো বিশ্বের মতো দেশেও করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। এ কারণে প্রায় পাঁচ মাস পর আবারও বিধিনিষেধ জারি করল সরকার। আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) কার্যকর হতে যাওয়া এসব বিধিনিষেধের মূল লক্ষ্য হচ্ছে—করোনা রোধে জনগণকে টিকার আওতায় আনা। করোনার সংক্রমণ দ্রুত ছড়ানো ঠেকাতে মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করা। সামাজিক দূরত্ব বজায়ে গণপরিবহনে সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহন। প্রাত্যহিক জীবনে হাত ধোয়া এবং স্যানিটাইজ করার অভ্যাস চালু রাখা।

সরকারের বিভিন্ন সূত্র বলছে, গত প্রায় ২১ মাসে লকডাউনের মতো কঠোর বিধিনিষেধ সাধারণ মানুষের জীবিকার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এখন দেশের প্রায় ৪৬ শতাংশ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দুই ডোজ করে টিকা পেয়েছেন প্রায় ৩২ শতাংশ মানুষ। তৃতীয় বা বুস্টার ডোজও দেওয়া চলছে। সরকারের হাতে করোনার টিকার মজুতও ভালো।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে নাগরিকেরা টিকা নেওয়া চালিয়ে গেলে এবং মাস্ক পরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়গুলোতে উদাসীনতা না দেখালে কঠোর বিধিনিষেধের প্রয়োজন হবে না।

২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের তথ্য জানায় সরকার। মার্চের শেষের দিকে গণপরিবহন বন্ধসহ কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বিধিনিষেধ জুলাই থেকে কিছুটা শিথিল হতে থাকে। কিছুটা স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসার পর গত বছরের মার্চে পুনরায় করোনার ডেলটা ধরনের সংক্রমণ দেখা দেয়। আবার আরোপ করা হয় কঠোর বিধিনিষেধ। 

হিসাব করে দেখা যায়, বিধিনিষেধের কারণে গত বছর মোট ৮৫ দিন গণপরিবহন বন্ধ ছিল। আগস্টে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। এখন আবার করোনার ওমিক্রন ধরন সারা বিশ্বেই প্রভাব বিস্তার করছে। দেশে করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত সোমবার বিধিনিষেধ আরোপ করে ১১ দফা নির্দেশনা জারি করে, যা আজ থেকে কার্যকর হচ্ছে।

গণপরিবহনে অর্ধেক আসনে যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ট্রেন, বাস ও লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেকসংখ্যক যাত্রী নেওয়া যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কার্যকারিতার তারিখসহ সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করবে। সব ধরনের যানবাহনের চালক ও সহকারীদের অবশ্যই করোনার টিকা নেওয়া থাকতে হবে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা বাস্তবায়নে গতকাল বুধবার বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়ে পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকনেতাদের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠক শেষ বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার সাংবাদিকদের আগামী শনিবার থেকে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের সিদ্ধান্তের কথা জানান। গণপরিবহনের চালক-সহাকারী সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের কারণে বাড়তি ভাড়া নেওয়া যাবে না।

পরে রাতে বিআরটিএ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শনিবার থেকে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস চলাচলের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। অবশ্য মালিক-শ্রমিকনেতারা বৈঠকে বলেছেন, সব অফিস-আদালত খোলা রেখে যদি অর্ধেক যাত্রী বহন করা হয়, তাহলে পরিবহনের সংকট দেখা দিতে পারে। এতে ভোগান্তি হবে।  বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, যত আসন তত যাত্রী নিয়ে বাস চালাতে চান তারা। সব শ্রমিক যাতে টিকার আওতায় আসেন, সেটিতে নজর দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে চালকের লাইসেন্স দেখিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে টিকা যাতে নিতে পারেন, সে বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেন।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আজ তিনটি প্রস্তাব তৈরি করে তা বিবেচনার জন্য সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে বিআরটিএ। মন্ত্রণালয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করবে। প্রস্তাবগুলো হচ্ছে: যত আসন তত যাত্রী পরিবহনের সুযোগ দেওয়া, স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চালানো এবং চালক-শ্রমিকদের টিকার আওতায় আনতে অগ্রাধিকার দেওয়া। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার থেকে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে ট্রেন চলবে। তারাও বিদ্যমান ভাড়াই বহাল রাখছে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলছে, লঞ্চেও শনিবার থেকে সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা কার্যকর করা হবে। ভাড়া বাড়ানোর পরিকল্পনা তাদেরও নেই।

গণপরিবহন চলাচল বাদে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ১১ দফা নির্দেশনার বাকি ১০ দফা আজ থেকেই কার্যকর হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে: দোকান, শপিং মল ও বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা এবং হোটেল-রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের জনসমাগমস্থলে বাধ্যতামূলকভাবে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। না পরলে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে; অফিস-আদালতসহ ঘরের বাইরে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে ব্যত্যয় রোধে সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে; রেস্তোরাঁয় বসে খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য অবশ্যই করোনা টিকার সনদ দেখাতে হবে; ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত তারিখের পরে করোনার সনদ ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না।

প্রজ্ঞাপনে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে; উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সমাবেশ পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হবে; সর্বসাধারণকে টিকা ও বুস্টার ডোজ প্রয়োগ ত্বরান্বিত করতে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় প্রচার ও উদ্যোগ নিতে হবে; স্থলবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিং বাড়াতে হবে। 

এছাড়াও বন্দরে ক্রুদের জাহাজের বাইরে আসার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে। স্থলবন্দরগুলোতে আসা ট্রাকের সঙ্গে কেবল চালক থাকতে পারবেন, কোনো সহকারী আসতে পারবেন না। বিদেশগামীদের সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের বিমানবন্দরে প্রবেশও বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি বিদেশ থেকে আসা যাত্রীসহ সবাইকে বাধ্যতামূলক করোনার টিকা সনদ দেখাতে হবে এবং র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে; কোনো এলাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিতে পারবে।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরামর্শক মুশতাক হোসেন বলেন, সংক্রমণ মোকাবিলায় প্রথম কথা হচ্ছে যতটা সম্ভব ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এটা শুধু সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। নাগরিকদের উদ্যোগী হতে হবে, জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততা লাগবে এবং স্বেচ্ছাসেবীর প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ স্বতঃস্ফূর্ত একটা উদ্যোগ দরকার।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news