এইচআইভি প্রতিরোধে সহায়তা কমানোয় পাঁচ বছরে ৩০ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে: গবেষণা

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: তহবিল কমানোর ফলে বিশ্বব্যাপী এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে সতর্ক করেছেন গবেষকরা। বুধবার দ্য ল্যানসেট এইচআইভি শীর্ষক এক গবেষণায় এ সতর্কবার্তা দিয়েছেন তারা। বলেছেন, আকস্মিকভাবে এইচআইভি প্রতিরোধের তহবিল কমানোর ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে মৃত্যুর মুখে পতিত হতে পারে ৩০ লাখের বেশি মানুষ। এছাড়া আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এক কোটি ৮ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন গবেষকরা। অনলাইন লাইভ সাইন্স নামক ওয়েব সাইটের এক খবরে বলা হয়েছে, গবেষণাটি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ওপর তহবিল হ্রাসের ভয়াবহতা প্রকাশ করেছে। কেননা এইচআইভি বা এইডস মোকাবিলায় এসব দেশ আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
চলতি বছরের ফেব্রুয়রিতে এইচআইভি প্রতিরোধে বৈশ্বিক সহায়তা হ্রাসের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, বৃটেন, জার্মানি এবং নেদারল্যান্ডস। তাদের বৈদেশিক সহায়তার বাজেট উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর ফলে এইচআইভি প্রতিরোধের কর্মসূচি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। এইডস প্রতিরোধে বৈশ্বিক মোট তহবিলের ৯০ শতাংশই দেয় এসব দেশ। আর এই খাতে যুক্তরাষ্ট্রের একার অবদানই ৭২ শতাংশ। তবে সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট খাতে সহায়তা কমানোর ফলে মারাত্মকভাবে ঝুঁকিতে পড়েছে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশের এইডস প্রতিরোধ কর্মসূচি।
২০১৫ সাল থেকেই নিম্ন ও মাঝারি আয়ের দেশগুলো তাদের এইচআইভি প্রোগ্রাম বাজেটের প্রায় ৪০ শতাংশ আন্তর্জাতিক সহায়তার ওপর নির্ভারশীল। গবেষকদের একটি দল মোট ২৬টি দেশের ওপর এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। তারা দেখিয়েছেন, যেসকল দেশের সহায়তা হ্রাস করা হয়েছে তাদের বেশির ভাগ দেশই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে এইডস প্রতিরোধ সংক্রান্ত তহবিল পেয়ে আসছে। গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, তহবিল ছাড়া এইচআইভি সংক্রমণের হার ২০১০ সালের পূর্বের স্তরে ফিরে যাবে। যা বিশ্বব্যাপী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের সংক্রামক রোগের অধ্যাপক ড. আলী জুমলা গবেষণার ফলাফল সম্পর্কে বলেছেন, এই ফলাফল একটি গুরুত্বপূর্ণ স্মারক। এতে স্পষ্ট এটি এইচআইভির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অগ্রগতি নয়, যা টেকসই বিনিয়োগ বা রাজনৈতিক ইচ্ছার ফলাফল। সতর্ক করে তিনি বলেছেন, যদি তহবিল কমানো হয় তাহলে বিশ্বের অগ্রগতি ব্যাহত হবে এবং লাখ লাখ মানুষ ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়বে।
গবেষণাটিতে একাধিক পরিস্থিতি জরিপ করা হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিও রয়েছে। যেমন মার্কিন প্রেসিডেন্ট’স এমার্জেন্সি প্ল্যান ফর এইডস এর তহবিল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার কথা উল্লেখ করেছেন গবেষকরা। বলেছেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ১ কোটি ৮ লাখ মানুষ নতুন করে এইচআইভি রোগে আক্রান্ত হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন। আর ২৯ লাখ মানুষের মৃত্যু হতে পারে। আফ্রিকার বহু দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ওই সহায়তা প্যাকেজের ওপর নির্ভরশীল। গবেষণায় দেখা গেছে, নতুন করে এইচআইভি’তে আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ওই অঞ্চলের শিশুরা। এরপর যৌনকর্মীরা। যাদের মাধ্যমে রোগটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
তবে এখন পর্যন্ত শেষ আশা হচ্ছে ২০২৬ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত তহবিল। যার মাধ্যমে এইচআইভি প্রতিরোধে কিছুটা শূন্যস্থান পূরণ হতে পারে। বৈশ্বিকভাবে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ এইডসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক কমে আসবে। আর মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াবে ৭ লাখ ৭০ হাজারে। যাইহোক, এমন পরিস্থিতিও আকস্মিক তহবিল হ্রাসের গুরুতর পরিণতি তুলে ধরছে, যা এইচআইভি প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা পরিষেবাগুলোকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করতে পারে।