উল্লাপাড়ায় আ’লীগ নেতার হাতুড়ি পেটায় কৃষক নিহত
হামলাকারী আওয়ামী লীগ নেতার নাম আব্দুল হাই। তিনি মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি।
প্রথম নিউজ, সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় আওয়ামী লীগ নেতার হাতুড়ি পেটায় এক কৃষক নিহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত ওই কৃষকের মৃত্যু হয়। এর আগে রোববার রাতে তাকে আহত করা হয়। নিহত কৃষকের নাম আমিরুল ইসলাম (৫২)। তিনি উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের গোনাইগাঁতী গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। হামলাকারী আওয়ামী লীগ নেতার নাম আব্দুল হাই। তিনি মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি। হাতুড়ি হামলার ঘটনায় কাজল প্রামানিক ও নাহিদ হোসেন নামে আরো দু’জন আহত হয়েছেন।
নিহত ও আহতের বিষয়টি তদন্ত করছে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে ওই আওয়ামী লীগ নেতা আত্মগোপনে রয়েছেন। এ বিষয়ে ওই নেতার মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। উল্লাপাড়া উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন জিকো বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। ঘটনার সাথে টাকা পয়সার লেনদেন আছে। নিহত আমিরুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হাই পরস্পর আপন চাচাতো ভাই। লাশ এখনো ঢাকায় আছে। অভিযুক্ত আব্দুল হাই পলাতক।’
স্থানীয়রা জানান, উল্লাপাড়া উপজেলার গোনাইগাঁতী গ্রামে ফসলী জমিতে সেচ পাম্প বসানো নিয়ে ইউনুস আলী মাস্টার, স্বপন ও দরিবসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে গত বুধবার এলাকায় সালিশি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি পরিচালনা করেন আব্দুল হাই নিজেই। তার কাছে ক্ষতিপূরণের কিছু টাকা জমা ছিল। বৈঠকে একাধিক ব্যক্তি কথা বলেন। এর মধ্যে আমিরুল ইসলামও ছিলেন। বৈঠকে পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলা নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। স্থানীয় সূত্রে আরো জানা যায়, রোববার কৃষক আমিরুল ইসলাম স্থানীয় এলংজানী বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। মাঝ পথে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হাই ও তার লোকজন তার ওপর হামলা চালান। তাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরতর আহত করে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যান। পরে গ্রামের একটি দোকানে হামলা চালিয়ে কাজল প্রামানিক ও নাহিদ হোসেনকেও আহত করেন। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সিরাজগঞ্জের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে আমিরুল ইসলামের অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকায় পাঠানো হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
নিহত আমিরুল ইসলামের ভাই কাজল প্রামানিক বলেন, জমিতে সেচ পাম্প বসানো নিয়ে বিরোধের জেরে সালিশি বৈঠক হয়। বৈঠকে কথা বলার কারণে আমার ভাই ও আমাকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল হাই, টুটুল, রাকিবুল, ডাবলু, সালাম, রেজাউল ও তাদের লোকজন। আমি হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। ভাইয়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে বাড়িতে এলাম। সোমবার সকালে ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভাইয়ের মৃত্যু হয়। বিকেলে লাশ উল্লাপাড়া তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে। বাদ মাগরিব জানাজা শেষে দাফন করা হবে বলে স্বজনরা জানান।
উল্লাপাড়া মডেল থানার তদন্ত কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, হামলায় আঘাতের কারণে কৃষকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। বিষয়টি তদন্ত করছি। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।