Ad0111

ইসি নিয়োগ আইন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের নতুন মোড়ক: সুজন

আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন করার জন্যই স¤পূর্ণ অযৌক্তিক এই আইন করা হচ্ছে।

ইসি নিয়োগ আইন রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের নতুন মোড়ক: সুজন

প্রথম নিউজ, ঢাকা: নির্বাচন কমিশন প্রস্তাবিত আইনের মাধ্যমে ২০১৭ সালের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনকে নতুন মোড়কে আনা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ঠ ব্যাক্তিরা। সুজন আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে নেতৃবৃন্দ বলেন, কোনো আলাপ আলোচনা না করে সরকারের অনুগত অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নুরুল হুদার মতো বিতর্কিত ও অনুগত ব্যক্তিদের দিয়ে আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন করার জন্যই স¤পূর্ণ অযৌক্তিক এই আইন করা হচ্ছে।

নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর উদ্যোগে প্রস্তাবিত নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন নিয়ে আজ বুধবার জনআকাক্সক্ষা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তরা এসব কথা বলেন। বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রওনক জাহানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকে লিখিত প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। অন্যান্যদের মধ্যে উক্ত গোলটেবিল বৈঠকে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এটিএম শামসুল হুদা, সাবেক নির্বাচন কমিশনার বিগ্রেডিয়ার  জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন, সুজন এর নির্বাহী সদস্য প্রফেসর সিকান্দর খান এবং  জনাব শফিউদ্দিন আহমেদ,  সুজন জাতীয় কমিটির সদস্য জনাব একরাম হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও রাজনীতি-বিশ্লেষক জনাব আসিফ নজরুল, বিশিষ্ট নির্বাচন বিশেষজ্ঞ জনাব আবদুল আলীম, আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক পরিচালক ফারুক ফয়সাল, সুজন-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জনাব দিলীপ কুমার সরকার এবং বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। 

ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, প্রস্তাবিত আইনের মাধ্যমে ২০১৭ সালের রাষ্ট্রপতি কর্তৃক জারিকৃত প্রজ্ঞাপনকে নতুন মোড়কে আনা হয়েছে।  কোনো আলাপ আলোচনা না করে সরকারের অনুগত অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে নুরুল হুদার মতো বিতর্কিত ও অনুগত ব্যক্তিদের দিয়ে আরেকটি বিতর্কিত নির্বাচন করার জন্যই স¤পূর্ণ অযৌক্তিক এই আইন করা হচ্ছে। সরকার প্রস্তাবিত আইনে কমিটির কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের কোনো বিধান নেই। সুজন প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় অনুসন্ধান কমিটির কাজের স্বচ্ছতা নিশ্চিতের বিষয়টিই মূল বিষয়। সুজন প্রস্তাবিত খসড়ায় কমিটির কার্যাবলির স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য নামের তালিকা প্রকাশ এবং যাচাই প্রক্রিয়ায় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য গণশুনানির বিধান রাখা হয়েছে। কমিটির নাম যাচাই প্রক্রিয়াকে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ করার লক্ষ্যে দুই ধাপে নামের তালিকা প্রকাশের বিধান রাখা হয়েছেÍ ১৫ থেকে ২০ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা এবং ৭ জনের চূড়ান্ত তালিকা। শুধু তা-ই নয় সুজন প্রস্তাবিত খসড়ায় যাচাই প্রক্রিয়া স¤পর্কে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের বাধ্যবাধকতাও রাখা হয়েছে। রাখা হয়েছে কমিটির সভার পূর্ণাঙ্গ কার্যবিবরণী এবং সদস্যদের ভোট প্রদানের তথ্য লিপিবদ্ধ ও সংরক্ষণের বিধান। কোনো নাগরিক যদি কমিটির সভার কার্যবিরণীর অনুলিপি পাওয়ার জন্য আবেদন করেন, তবে অনতিবিলম্বে তা প্রদান করার বিধান রাখা হয়েছে, যাতে নাগরিকদের তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত হয়। নাম সুপারিশের ক্ষেত্রে যথাযথভাবে সঠিক ব্যক্তিদের অনুসন্ধান ও যাচাই বাছাই করা হয়েছে, নাকি সংবিধানের ৪৮(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশেই নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে সে স¤পর্কে নাগরিকরা অজ্ঞাতেই রয়ে যাবে। তাই নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে সন্দেহ ও অবিশ্বাস যথাযম্ভব কমিয়ে এনে সবার জন্য কল্যাণকর একটা সর্বজনীন সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর জন্যই কমিটির কার্যাবলিকে স্বচ্ছ রাখাসহ যাচাই প্রক্রিয়ায় নাগরিক ও রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরি।
       
ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেন, অবিশ্বাসের ভিত্তিতে কোনো আইন করা যায় না। আইনের এত বিশদ্ভাবী সবকিছুর বর্ণনা করার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না। আমাদের প্রস্তবা ছিল অনুসন্ধান কমিটিতে সাবেক একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাখা, কারণ তাঁর নির্বাচন পরিচালনা স¤পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে। কমিশনারগণের যোগ্যতা-অযোগ্যতার ক্ষেত্রে কারো বিরুদ্ধে লিখিত অলিখিত যে কোনো অভিযোগ থাকলেই তাকে বিবেচনা থেকে বাদ দিতে হবে। সুপারিশকৃত নামগুলো একটা পার্লামেন্টারি হিয়ারিং-এ যাবে, সেখানে আলাপ আলোচনা হবে। কাদের নাম সুপারিশ করা হচ্ছে সেটা প্রকাশ করে দিতে হবে।  

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে দুটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। একটি হচ্ছে তিনি নিরপেক্ষ কি না। দ্বিতীয়ত তাঁর ভিতরে আইন প্রয়োগের সক্ষমতা ও সাহস রয়েছে কি না। নির্বাচনে শতাধিক লোক মারা যাওয়ার পরও কমিশনাররা বলছেন আমাদের কোনো দায় নেই। এরকম ব্যক্তি আসলে যেরকম চলছে সেরকমই থাকবে। নাম সুপারিশের ক্ষেত্রে পার্লামেন্টারি শুনানির বিষয়টি না থাকলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক স¤পৃক্ততা থাকবে না। সেক্ষেত্রে সংবিধানের ৪৮(৩) অনুযায়ী প্রধামন্ত্রীর ইচ্ছা অনুযায়ী নিয়োগ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। 
আবদুল আলীম বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু ইন্টারন্যাশনাল গাইডিং প্রিন্সিপাল আছে। তাঁর প্রথমটি হচ্ছে পলিটিকাল কনসেনসাস সব দলকে একমত হতে হবে; ট্রান্সপারেন্সি  সব ওপেন করে দিতে হবে; ব্যাপক স্ক্রুটিনি  ব্যাপকভাবে যাচাই করতে হবে; রোবাস্ট ক্রাইটেরিয়া Íযারা কমিশনার হবেন তারা কারা, তাদের মোরাল ইন্টেগ্রিটি কেমন, ইন্টেলেকচুয়াল অনেস্টি কেমন আর ফাইনালি হচ্ছে সিটেজেন্স ট্রাস্টÍপুরো প্রক্রিয়ায় জনগণের আস্থা থাকতে হবে।    
   
আসিফ নজরুল বলেন, এই আইনটি হচ্ছে সরকারের ইছাপূরণের আইন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সরকারের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা ছাড়া শুধু কমিশন আইন দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।    

ড. রওনক জাহান বলেন, সবার আলোচনা থেকে বুঝা যায় দুটি বিষয়ে সবাই একমত Íকমিশনে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পলিটিকাল কনসেনসাস এবং স্বচ্ছতা আনতে হবে। আমাদের দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় পলিটিকাল কনসেনসাস তৈরি করা কিছুটা দুরূহ হলেও সরকারের সদিচ্ছা থাকলে স্বচ্ছতার দিকটা নিশ্চিত করা সম্ভব।  

দিলীপ কুমার সরকার বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য নেপালে কনস্টিটিউশনাল কাউন্সিল আছে। প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিরোধী দলের নেতাসহ আরও রাজনৈতিক দলের সদস্য প্রতিনিধিরা এই কাউন্সিলের সদস্য থাকেন। তারা সম্ভাব্য নামের তালিকা তৈরি করে পার্লামেন্টে শুনানির জন্য পাঠান, তারপর সেটা রাষ্ট্রপতির কাছে যায়। ভুটানে উচ্চ কক্ষ ন্যাশনাল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান,  প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, নিুকক্ষের ¯িপকার, এবং বিরোধী দলের নেতার সমন্বয়ে একটা পর্ষদ আছে। তারা নামগুলো ঠিক করে রাজার কাছে পাঠান। পাকিস্তানে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য ১২ সদস্য বিশিষ্ট একটা সংসদীয় কমিটি আছে। কমিটির সদস্যরা অর্ধেক সরকারি দলের এবং অর্ধেক বিরোধী দলের।  প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলের নেতা আলোচনার মাধ্যমে প্রাথমিক নাম নির্বাচন করে সংসদীয় কমিটিতে পাঠান। সংসদীয় কমিটি নাম চূড়ান্ত করে প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠান। এই অভিজ্ঞতাগুলোকে সামনে রেখেই সুজন-এর আইনের খসড়াটি প্রস্তুত করা হয়।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news