ইভিএমে ‘ভোট ডাকাতি’ করে চেয়ারম্যান বানিয়েছি, কক্সবাজারে যুবলীগ নেতার ভিডিও ভাইরাল
বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কক্সবাজার শহরের ৮টি ভোট কেন্দ্র দখল করে ‘ভোট ডাকাতি’ করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কায়সারুল হক জুয়েলের জয় নিশ্চিত করেছিলেন বলে দাবি করেছেন হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী।
প্রথম নিউজ, কক্সবাজার: উখিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতির পদ প্রত্যাশী ও হলদিয়া পালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েসের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কক্সবাজার শহরের ৮টি ভোট কেন্দ্র দখল করে ‘ভোট ডাকাতি’ করে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী কায়সারুল হক জুয়েলের জয় নিশ্চিত করেছিলেন বলে দাবি করেছেন হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী।
মঙ্গলবার (৬ জুন) রাতে কক্সবাজার পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মাহবুবুর রহমানের সমর্থনে আয়োজিত এক সভায় যুবলীগ নেতা ইমরুল এমন মন্তব্য করেন। তার বক্তব্যটি দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়লে পুরো জেলায় তোলপাড় শুরু হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ১২ই জুন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরীর পক্ষে শহরের তারাবনিয়ারছড়ায় এক সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন উখিয়ার হলদিয়াপালং ইউনিয়নে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী ইমরুল কায়েস। সভায় কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েলকে উদ্দেশ্য করে ইমরুল কায়েস বলেন, বিগত সদর উপজেলা নির্বাচনে আমি কক্সবাজারে ৮টি কেন্দ্র নৌকার পক্ষে ভোট ডাকাতি করেছি। আমি ভোট ডাকাতি না করলে তুমি জুয়েল আজ কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে পারতে না। আমার অবদান জানা না থাকলে তোমার বড় ভাই রাশেদ এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মার্শালের কাছে জেনে নিও।
তিনি আরও বলেন, আজ তোমরা সে অবদান ভুলে গিয়েছো। জুয়েল তুমি বড় অকৃতজ্ঞ, অমানুষ। তোমরা নির্বাচিত হলে পৌরবাসীকেও ভুলে যাবে। কারণ আপনারা যে শেখ হাসিনার নাম সাইনবোর্ড ব্যবহার করে চলেন সেই জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আপনারা আজ ভুলে গিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ আপনাদের ডেকেছিল আপনারা যাননি। এসময় হুমকি ধমকির পরিবর্তে পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য তিনি রেড়ি আছেন বলেও হুঁশিয়ার করে দেন ইমরুল।
তিনি তার বক্তব্যে আরো বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমিসহ আমার ইউনিয়ন পরিষদের ১৩ ভোটারই শাহিনুল হক মার্সালকে ভোট দিয়েছি। উল্লেখ্য, মার্সাল আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী জানিয়েছেন, ইমরুল হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকাকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার হাতে নির্যাতিত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবার, মসজিদের ইমাম, স্কুলের শিক্ষক, শ্রমিক, জনপ্রতিনিধি এবং দিনমজুর। এবার কক্সবাজার পৌরসভায় এসে বর্তমান সরকার এবং নির্বাচন কমিশনকে বিতর্ক করতে তিনি এই বক্তব্য দিয়েছেন। যেটা সরকার ও দলবিরোধী। তার এমন বক্তব্যের জন্য তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
প্রসঙ্গত: কায়সারুল হক জুয়েল বর্তমান সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা একে এম মোজ্জাম্মেল হকের কনিষ্ঠ ছেলে। তার বড় ভাই সদস্য বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মাসেদুল হক রাশেদ দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নাগরিক কমিটির ব্যানারে কক্সবাজার পৌরসভায় মেয়র পদ নির্বাচন করছেন। এদিকে যুবলীগ নেতা ইমরুলের এ বক্তব্যের ফলে ইভিএম পদ্ধতি নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। কারণ কায়সারুল হক জুয়েল ২০১৯ সালে প্রথম ইভিএম পদ্ধতির ভোটে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ইমরুল কায়েস চৌধুরী কর্তৃক সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করায় ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রক্রিয়া দেখাচ্ছে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের সিনিয়র জুনিয়র অসংখ্য নেতা কর্মীরাও।
উখিয়া উপজেলা যুবলীগ নেতা ইমরুল কায়েস চৌধুরী ভোট ডাকাতি করে জয় নিশ্চিত করার বিষয়ে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীনুল হক মার্শাল ও পৌর মেয়র পদের বিদ্রোহী প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ ইমরুল কায়েসের বক্তব্যকে পাগলের প্রলাপ বলে দাবি করেছেন।
তবে, যুবলীগ নেতা ইমরুলের বক্তব্যের দায় নিবে না জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা সভাপতি এড. ফরিদুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক সাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, কারো উদ্ভট ও ব্যক্তিগত বক্তব্যের দায় আওয়ামী লীগ নিবে না। বর্তমান সরকারের আমলে সবসময় নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছেন বলেও দাবি করা হয় বিবৃতিতে। ভোট ডাকাতির বিষয়ে যুবলীগ নেতার বক্তব্য ইতিমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবগত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস. এম. শাহাদাত হোসেন।