আ.লীগ নেতার বিরুদ্ধে শাশুড়ির শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শাশুড়ির শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী ও বহুল আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন রানার বিরুদ্ধে।

প্রথম নিউজ, বগুড়া: অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শাশুড়ির শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী ও বহুল আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন রানার বিরুদ্ধে। তার চার শ্যালিকা এ ব্যাপারে প্রতিকার পেতে দুদক চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর অনুলিপি দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগ নেতা রানা তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, এসব তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। বগুড়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারী চার শ্যালিকা মাহবুবা খানম আমেনা, নাদিরা শরিফা সুলতানা খানম, কানিজ ফাতেমা পুতুল ও তৌহিদা শরিফা সুলতানার অভিযোগে জানা গেছে, আনোয়ার হোসেন রানা নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। তিনি জেলা পরিষদের সদস্য ছিলেন। রানা মাসে দেড় হাজার টাকা বেতনে দেলওয়ারা বেগমের বড় জামাতা সাইফুল ইসলামের ‘দৈনিক দুর্জয় বাংলা’পত্রিকায় বিজ্ঞাপন শাখার কর্মী ছিলেন। গত ২০০৬ সালে সাইফুল ইসলামের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী আকিলা শরিফা সুলতানা খানম আঞ্জুয়ারার দিকে নজর দেন রানা। স্ত্রী-সন্তান থাকার পরও তিনি ২০০৯ সালে পালিয়ে আঞ্জুয়ারাকে বিয়ে করেন। পরবর্তীতে শ্বশুরবাড়ির সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন।
এদিকে স্বামী শিল্পপতি সেখ শরিফ উদ্দিনের মৃত্যুর পর স্ত্রী দেলওয়ারা বেগম সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করতেন। তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে মৌখিকভাবে বড় মেয়ে আকিলা শরিফা সুলতানা খানম আঞ্জুয়ারা ও জামাই আনোয়ার হোসেন রানাকে পারিবারিক সব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তত্ত্বাবধান ও পরিচালনার অনুমতি দেন। পরবর্তীতে মেয়ে আঞ্জুয়ারা ও জামাই রানা ভয়ভীতি দেখিয়ে দেলওয়ারার কাছ থেকে জোরপূর্বক স্ট্যাম্প, ব্যাংকের চেক, এফডিআর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র নিয়ে নেন। এছাড়া কিছু কাগজপত্র তৈরি করে ব্যাংক হিসাবে বর্ধিত টাকাসহ এফডিআর ভেঙে এবং ব্যাংক থেকে শত কোটি টাকা উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করেন। লিখিত অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন রানার নামে-বেনামে অনেক জমি রয়েছে। এছাড়া অত্যাধুনিক বাড়ি নির্মাণ ও বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করেন। তার বিরুদ্ধে অংশীদারদের ঠকিয়ে সম্পদ অর্জন এবং জ্ঞাত-আয়বহির্ভূত আরও শত কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আত্মসাৎ করা সম্পদ ও সম্পত্তির উল্লেখযোগ্য হলো- শ্বশুরের বগুড়ার শাকপালা মৌজার ২০ শতক জমি, সূত্রাপুর মৌজার ৯৮ শতক এবং ঢাকার মোহাম্মদপুরে এক হাজার ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। এছাড়া শাশুড়ির বিভিন্ন ব্যাংকে সংরক্ষিত এফডিআর ও গচ্ছিত প্রায় শত কোটি টাকা। অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন রানার শাকপালায় এসআর প্রিন্টিং প্রেস এবং শরীফা প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন নামে দুটি স্বয়ংক্রিয় ছাপাখানা রয়েছে। এ দুই ছাপাখানায় বিড়িতে ব্যবহারের জন্য অবৈধভাবে ব্যান্ডরোল ছাপানো হয়। শরিফ বিড়ির অবৈধ ব্যান্ডরোল ছাপিয়ে সরকারকে অন্তত ২৫ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। বিপুল অংকের সম্পদ ও সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দেলওয়ারা বেগম গত বছরের ৫ অক্টোবর মেয়ে আঞ্জুয়ারা ও জামাই রানার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় সস্ত্রীক গ্রেফতার হন রানা। উচ্চ আদালতে জামিন আবেদনে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ধরাও পড়েন তারা। বর্তমানে তারা ওই মামলায় জামিনে রয়েছেন।
দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রধান কার্যালয়ে চেয়ারম্যানের কাছে দেওয়া অভিযোগের অনুলিপি বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত তারা হাতে পাননি।বগুড়ার উপ-পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান জানান, রোববার এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: