আমাদের ধ্বংস করতে সবকিছু করছে ভারতীয় আধিপত্যবাদ- যমুনায় বৈঠকে ড. ইউনূস

প্রথম নিউজ, অনলাইন: দেশ ও জাতি অনেক বড় সংকটের মধ্যে রয়েছে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার মতে, এই সংকটের মূলে রয়েছে ভারতীয় আধিপত্যবাদ। আমাদের ধ্বংস করতে যা যা করা দরকার, সব তারা করছে। রবিবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় সরকারি বাসভবন যমুনায় বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এ শঙ্কা প্রকাশ করেন। পরে বৈঠক শেষে যমুনার বাইরে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সেক্রেটারি সাইফুল হক, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়কারী টিপু বিশ্বাস, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবর রহমান মঞ্জু, ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।
এর আগে বিকাল ৫টার দিকে তারা যমুনায় প্রবেশ করেন। তার কিছুক্ষণ পর এ বৈঠক শুরু হয়। মান্না বলেন, ‘বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন— আমরা অনেক বড় সংকটের মধ্যে আছি। এই সংকট বলতে উনি প্রধানত ভারতীয় আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রের কথা বলেছেন। ভারতীয় আধিপত্যবাদ আমাদের এই পরিবর্তনকে একেবারেই স্বীকার করতে চায় না। পারলে আমাদের একদিনের মধ্যে ধ্বংস করে দিতে চায়। সেজন্য যা যা করা দরকার সব তারা করছে। এই ছিল তার কথা।’
এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বেশ চিন্তিত উল্লেখ করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, ‘উনি (ড. ইউনূস) চাইছেন এজন্য পুরো জাতি, সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। তবে দিন দিন তা দুর্বল হচ্ছে। এই জন্য উনি চিন্তিত, অনেকটা হতাশ।’ ‘কিন্তু আমরা বলেছি- এই প্রশ্নে আমরা এক থাকব। আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে। কিন্তু মূল জাতীয় ইস্যুগুলোতে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। সেই বিষয়গুলো তাকে (ড. ইউনূস) বলেছি। তিনি মোটামুটিভাবে আশ্বস্ত হয়েছেন,’ বলেন মান্না।
নাগরিক ঐক্যের এ নেতা জানান, এছাড়া ড. ইউনূস মনে করেন— এতদিন ধরে যে চেষ্টা করছেন তার কোনোটাতেই সফল হতে পারবেন না, সবই ব্যর্থ হয়ে যাবে। সংস্কার হবে না, নির্বাচন হবে না। এজন্য তিনি মনে করেছেন— তার দায়িত্বে থাকার দরকার নেই। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই না, সমগ্র জাতি চায় না ড. ইউনূস ক্ষমতার জায়গা থেকে বিদায় নিয়ে নিক। তাহলে আমাদের জন্য সংকটটা বেশি হবে।’
‘তখন আমরা তাকে বুঝিয়েছি, আপনার বেশি করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ করতে হবে, কথা বলতে হবে, মতবিনিময় করতে হবে। আপনি কেমন করে নির্বাচন করতে চান তা সকলের সঙ্গে শেয়ার করবেন,’ বলেন মান্না। তিনি বলেন, ‘আপনার সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে কোনটা সংস্কার করলেই না হয়, সে ক্ষেত্রে যদি সময়ক্ষেপণ হয় নির্বাচন বিলম্ব হবে।’
তবে নির্বাচন এপ্রিলের পর কোনোভাবেই আর গড়াবে না বলে উপদেষ্টা আশ্বস্ত করেছেন বলে জানান নাগরিক ঐক্যের সভাপতি। সংস্কার বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে মান্না বলেন, ‘আমরা সংস্কারের বিষয়ে কিছু বলছি না, আমরা শুধু চাই একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন।’