আমদানি নিয়ন্ত্রণের বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখার সুপারিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট ও মুদ্রা বিনিময় হারে টাকার মান পড়ে যাওয়ায় যে চাপ তৈরি হচ্ছে তা কমিয়ে আনতে দেশে উৎপাদন বাড়াতে বেশি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

আমদানি নিয়ন্ত্রণের বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখার সুপারিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের
আমদানি নিয়ন্ত্রণের বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখার সুপারিশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের

প্রথম নিউজ, অনলাইন: দীর্ঘদিন থেকে অস্থির বিনিময় হারে স্থিতিশীলতা আনতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে নেয়া বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ‘মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত প্রতিবেদনে’ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর ত্রৈমাসিক সংস্করণে এই সুপারিশ করেছে বাণিজ্যিক ব্যাংক নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ কমে যাওয়া, টাকার মান কমতে থাকা, ব্যাংকিং খাতে তারল্যের সংকট, সরকারের ব্যাংক ঋণ বেড়ে যাওয়া, বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ও আমদানি নিয়ন্ত্রণের প্রভাবের মতো সামষ্ঠিক অর্থনীতির সূচকের তথ্য বিশ্লেষণের পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত এ প্রতিবেদনে। একই সঙ্গে অর্থনীতির সাম্প্রতিক হালচাল বিশ্লেষণ করে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনাকে অর্থনীতিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট ও মুদ্রা বিনিময় হারে টাকার মান পড়ে যাওয়ায় যে চাপ তৈরি হচ্ছে তা কমিয়ে আনতে দেশে উৎপাদন বাড়াতে বেশি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে আমদানি বিকল্প পণ্য উৎপাদনে যেতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ইউক্রেইন যুদ্ধের পর বাড়তে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সামাল দিতে খরচ কমিয়ে আনতে আমদানিতে কড়াকড়ি আরোপসহ বেশ কিছুদিন থেকে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে চলতি অর্থবছরের ছয় মাস শেষে গত ডিসেম্বরে আমদানি ব্যয় সাত বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। নতুন এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ ২২.৫২ শতাংশ কমে সাড়ে ৫ বিলিয়নের ঘরে নেমেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন তা হচ্ছে সরকারের একটি সদিচ্ছা। বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা নেই। এটি ফিরিয়ে আনতে পারলে সব উদ্যোগই কার্যকর হবে। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়ছে। বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালের জুনে ৭.৫৬ শতাংশ থেকে বেড়ে সেপ্টেম্বরে ৯ শতাংশ ছাড়ায়। এরপর তা ক্রমান্বয়ে কমে ফেব্রুয়ারিতে ৮.৭৮ শতাংশে নেমেছে। এমন প্রেক্ষাপটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, গড় মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনাটাই বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাজস্ব নীতি ও মুদ্রানীতি কর্তৃপক্ষসমূহকে সমন্বিতভাবে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। তবে শুধু রাজস্ব নীতির সঙ্গে সমন্বয় করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগে দ্রুত কোনো ফল পাওয়া যাবে না বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাসিনা শেখ। ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে অর্থ দিতে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ব্যাংকঋণের সুদহারের ঋণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তবে সম্প্রতি ভোক্তা ঋণে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ বাড়িয়ে সুদ নিতে মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বেদেশিক মুদ্রার সংকট কমাতে রেমিটেন্স বাড়াতে সহায়ক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখছে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগ। একই সঙ্গে প্রতিবেদনটিতে রপ্তানি আয় বাড়াতে রপ্তানি বহুমুখীকরণের পরামর্শ দিয়েছে। প্রচার ও প্রসারে উদ্ভাবনী চিন্তা কাজে লাগাতে বলেছে। প্রতিবেদনে তারল্য সংকট সমাধানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে যাচাই-বাছাই করে ঋণ দিতে সজাগ দৃষ্টি রাখার কথা বলা হয়েছে।

ঋণ আদায়ে গঠিত ‘স্পেশাল মনিটরিং সেল’ এর কার্যক্রম যথাযথভাবে পালন করতেও বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ঋণ যাতে ভুল খাতে না যায় ও ঋণের উদ্দেশ্য সঠিকভাবে পূরণ হয় সেজন্য মঞ্জুর করা ঋণের অর্থ একেবারে না দিয়ে ব্যবহার সাপেক্ষে ধাপে ধাপে বিতরণ করতে গুরুত্ব দিতে বলেছে। এতে ঋণের অর্থ অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রবণতা কমে যাবে এবং ঋণের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা যাবে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: