আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস: শিক্ষকদের মর্যাদা-আর্থিক নিরাপত্তা বড় চ্যালেঞ্জ

আজ বুধবার (৫ অক্টোবর) বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এটি আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস নামেও পরিচিত। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- শিক্ষকদের সঠিক মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস: শিক্ষকদের মর্যাদা-আর্থিক নিরাপত্তা বড় চ্যালেঞ্জ

প্রথম নিউজ, ঢাকা: শিক্ষকতা পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন মেধাবী শিক্ষার্থীরা। রাষ্ট্র সঠিক মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা এ পেশায় আসছেন না। যারা আসছেন, তাদেরও ন্যায্য দাবির জন্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করতে হচ্ছে। জানা যায়, দেশের ৯০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেসরকারিভাবে পরিচালিত হলেও অনেক শিক্ষককে অভুক্ত থেকে দিন কাটাতে হয়। এমন অবস্থায় শিক্ষদের মর্যাদা-আর্থিক নিরাপত্তা দেওয়া বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আজ বুধবার (৫ অক্টোবর) বিশ্ব শিক্ষক দিবস। এটি আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস নামেও পরিচিত। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- শিক্ষকদের সঠিক মর্যাদা ও আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়। মূলত এই দিনে বিশেষভাবে শিক্ষকদের অবদান স্মরণ করা হয়। শিক্ষক দিবসের লক্ষ্য ‘বিশ্বের শিক্ষাবিদদের প্রশংসা করা, মূল্যায়ন করা, উন্নত করা, শিক্ষক ও শিক্ষাদান সম্পর্কিত বিষয়গুলো বিবেচনার সুযোগ দেওয়া। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়।

দিবসটির প্রসঙ্গে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু  বলেন, বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষকের অধিকার ও মর্যাদাকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে প্রধান গুরুত্বের বিষয় হচ্ছে- তাদের বাকস্বাধীনতা, মর্যাদা ও পর্যাপ্ত আর্থিক নিরাপত্তাকে গুরুত্ব দেওয়া। বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে ৮৭৩ কোটি টাকা জাতীয় বাজেট থেকে ৩৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছিল। মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ের শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করেন। বর্তমানে ছয় লাখ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট সরকার ঘোষণা করলেও শিক্ষকরা প্রাপ্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্তির আওতায় আনা, সরকারি-বেসরকারি শিক্ষার বৈষম্য দূরীকরণ, শিক্ষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে এ বছরের শিক্ষক দিবসের দাবি জানান তিনি। বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। এ দিবস পালনে এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (ইআই) ও তার সহযোগী ৪০১টি সদস্য সংগঠন মূল ভূমিকা রাখে। ইআই প্রতি বছরই একটি প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করে থাকে, যা জনসচেতনতা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকতা পেশার অবদানকেও স্মরণ করিয়ে দেয়।

জানা যায়, ১৯৬৬ সালের ৫ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে শিক্ষকদের অবস্থা নিয়ে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানেই শিক্ষকদের কথা চিন্তা করে ইউনেস্কো এবং আন্তর্জাতিক শ্রম ও সংগঠন (আইএলও) কিছু সুপারিশমালায় সই করে। এ পরামর্শ বা সুপারিশমালায় শিক্ষা কর্ম নীতি, শিক্ষকদের নিয়োগ, প্রাথমিক প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান ও কাজের অবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত মানদণ্ডের রূপরেখার উল্লেখ ছিল।

এরপর ১৯৯৪ সালে ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনে গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইউনেস্কো মহাপরিচালক ড. ফ্রেডারিক এম মেয়রের ঘোষণায় ৫ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী শিক্ষক দিবস পালনের সূচনা হয়। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপনের জন্য, ইউনেস্কো এবং এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল (ইআই) প্রতিবছর একটি প্রচারাভিযান চালায় যেন বিশ্বকে শিক্ষকদের সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে বোঝানো যায় এবং ছাত্র ও সমাজের উন্নয়নে তারা যে ভূমিকা পালন করে তা মানুষের সামনে তুলে ধরা যায়।

অবশ্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পৃথক পৃথক তারিখেও এ দিবসটি পালিত হয়। যার মধ্যে আর্জেন্টিনায় ১১ সেপ্টেম্বর, অস্ট্রেলিয়ায় ৩১ অক্টোবর, ভুটানে ২ মে, ব্রাজিলে ১৫ অক্টোবর, চীনে ১০ সেপ্টেম্বর, কলম্বিয়ায় ১৫ মে, হংকং ১০ সেপ্টেম্বর, ইন্দোনেশিয়ায় ২৫ নভেম্বর, ইরানে ২ মে, ইরাকে ১ মার্চ, মালয়েশিয়ায় ১৬ মে, নেপালে জুলাই মাসের মাঝামাঝি, নিউজিল্যান্ডে ২৯ অক্টোবর, সিঙ্গাপুরে ১ সেপ্টেম্বর, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১৫ মে, স্পেনে ২৭ নভেম্বর, থাইল্যান্ডে ২১ জানুয়ারি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭ মার্চ ও ভিয়েতনামে ২০ নভেম্বর শিক্ষক দিবস পালন করা হয়।

এছাড়া বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, ক্যামেরুন, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, এস্টোনিয়া, জর্জিয়া, জার্মানি, কুয়েত, মালদ্বীপ, মরিশাস, মালডোভা, মঙ্গোলিয়া, মিয়ানমার, নেদারল্যান্ড, নাইজেরিয়া, ফিলিপাইন, পর্তুগাল, কাতার, রোমানিয়া, রাশিয়া ও সৌদি আরবে ৫ অক্টোবর দিবসটি পালন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে আজ (বুধবার) রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সেমিনার কক্ষে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) উদ্যোগে ‘বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিতে শিক্ষকদের মর্যাদা’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী ফোরাম ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা দর্শন ও মুজিববর্ষে এমপিওভুক্ত শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান ও র্যালির আয়োজন করেছে।

এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারের সভাপতি অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী বলেন, বর্তমানে শিক্ষকরা নানাভাবে অবহেলিত হওয়ায় মেধাবীরা শিক্ষকতা পেশায় আসছেন না। রাষ্ট্রের সব ক্যাডারের সঠিক মর্যাদা থাকলেও শিক্ষা ক্যাডাররা নানাভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। ক্যাডার শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, জুনিয়ররা সিনিয়রদের সমান বেতন পাচ্ছেন, পদোন্নতি বঞ্চিত হচ্ছেন, তৃতীয় গ্রেডের উপরে তারা যেতে পারছে না। অথচ শিক্ষা ক্যাডারে প্রথম গ্রেডে পথ থাকলেও তাদের যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। চলতি দায়িত্বে এসব পদে পদায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শিক্ষা একটি অংশ হলেও শিক্ষার মাধ্যমে সবকিছু অর্জন করতে হবে। সেই শিক্ষাকে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছে। দেশে নানামুখী শিক্ষার কারণে মান বাড়ছে না। সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিলেও তার সুফল আসছে না।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom