অপরাধী ধরতে চিরুনি অভিযান

প্রথম নিউজ, অনলাইন: অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে গতকাল থেকেই বিশেষ বা চিরুনি অভিযান পরিচালনা করার কথা জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। গতকাল সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। উপদেষ্টা বলেন, খুন, চুরি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, সন্ত্রাস, অপহরণ, নারী নির্যাতন, মব সহিংসতা, মাদক চোরাচালানসহ সব ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকার যেকোনো সময় চিহ্নিত অপরাধী ও সন্ত্রাসীদের ধরতে বিশেষ বা চিরুনি অভিযান পরিচালনা করতে পারে।
এক্ষেত্রে সাধারণ জনগণসহ সবার সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য। কবে থেকে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখন থেকেই। সভায় মব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও সংঘবদ্ধ দুষ্কৃতকারীদের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ দেশে অস্থিরতা সৃষ্টিকারী ও উস্কানিমূলক সাইবার প্রচারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ; নারী ও শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইনগত ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংক্রান্ত আলোচনা, জুলাই হত্যাকাণ্ডে শহীদদের মামলার রেকর্ড ও তদন্তের অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান উপদেষ্টা। বলেন, মিটফোর্ডের সামনে যে ঘটনা ঘটেছে সেটি খুবই দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনা একটি সভ্য সমাজে কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
মিটফোর্ডের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটিকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) উল্লিখিত ১৯ জনের মধ্যে সাত জনকে র?্যাব, সেনাবাহিনীসহ পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ঢাকার বাইরে গোয়েন্দা দল বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে অবশিষ্ট আসামিদের গ্রেপ্তারে কাজ করে যাচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যায় ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল থেকে মঈনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে এবং তারেককে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। শুক্রবার বিকালে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাছাড়া শুক্রবার রাতেও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার রাতে এ ঘটনায় ডিবি আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে। সবমিলিয়ে এ ঘটনায় এ পর্যন্ত সাত জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ছয় জনকে ভিডিও ফুটেজে শনাক্ত করা হয়েছে। তদন্তে আরও আসামি পাওয়া গেলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। এ বিষয়ে ডিবি’র টিম সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এ ঘটনায় প্রশাসনিক বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো শিথিলতা ছিল কিনা তা সরকার গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখবে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এরই মধ্যে খুলনার হত্যাকাণ্ডেও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার বিশ্বাস করে, অপরাধী অপরাধীই তা সে যে দলেরই হোক না কেন।
রাজনৈতিক অথবা অন্য কোনো পরিচয়ে কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না এবং ভবিষ্যতেও দেয়া হবে না। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সামাজিক অস্থিরতা, অসহিষ্ণুতা, নৈতিক স্খলন প্রভৃতি কারণে সমাজে অপরাধপ্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশ ও সমাজ থেকে অপরাধ কমিয়ে আনার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি আমাদের সবার। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, মিডিয়া, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, অভিভাবক, ছাত্র, শিক্ষক, সাধারণ জনতাসহ সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, আর কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয়- এ বিষয়ে জনসচেতনতা জরুরি। জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কোনো ঘটনা বা অপরাধ ঘটলে সেটা যেন যত দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানানো হয়।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সে বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে? জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমরা নির্বাচনের একটি অংশ। আমাদের প্রস্তুতিটা আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ করতে চাচ্ছি।