৪৩ পৌরসভার আধুনিকায়নে মিলছে না কুয়েতি ফান্ড
উন্নয়নের মাপকাঠিতে এখনো বেশ পিছিয়ে দেশের পৌরসভাগুলো
প্রথম নিউজ, ঢাকা : উন্নয়নের মাপকাঠিতে এখনো বেশ পিছিয়ে দেশের পৌরসভাগুলো। পর্যাপ্ত নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত অধিকাংশ পৌরবাসী। সড়ক যোগাযোগসহ জীবনমান উন্নয়নে জরুরি অনেক সেবাই অপ্রতুল। এসব বিবেচনায় বেশি পিছিয়ে থাকা পৌরসভাগুলোর উন্নয়নে প্রাথমিকভাবে ২৮১ পৌরসভা নিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান করে সরকার। চলমান প্রকল্পের আওতায় আরও ৪৩টি পৌরসভা যুক্ত করা হয় কুয়েতি ফান্ডের আশ্বাসে। শেষ পর্যন্ত ১৫ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার (৫শ কোটি টাকার বেশি) না পাওয়ায় পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে সরকার। চেষ্টা চলছে ভিন্ন কোনো উপায়ে কাজটি সম্পন্ন করার।
এলজিইডির অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আব্দুল খালেক সরকার জাগো নিউজকে বলেন, উন্নয়নের দরকার আছে বিধায় আমরা আরও ৪৩টি পৌরসভা চলমান প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। মৌখিকভাবে ১৫ মিলিয়ন কুয়েতি দিনারের প্রস্তাবও পেয়েছিলাম। তবে এখন ইআরডি (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) থেকে জানতে পেরেছি এই ফান্ড পাচ্ছি না।
তাহলে নতুন যুক্ত পৌরসভার কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ৪৩টি পৌরসভা হয়তো নতুন কোনো প্রকল্পের আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। পৌরসভার অনেকগুলো প্রকল্প হচ্ছে। নতুনগুলো বাস্তবায়ন করা হবে সরকারি অর্থায়নে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার এবং কুয়েত ফান্ডের যৌথ অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন ‘নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ প্রকল্প। এই প্রকল্পের সঙ্গেই কুয়েতের আশ্বাসে আগের ২৮১টির সঙ্গে ৪৩টি যুক্ত করা হয়েছিল।
এলজিইডি সূত্র জানায়, শুরুতে প্রকল্পটির মোট ব্যয় ছিল ৮৬৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৪৬৭ কোটি ৪৭ লাখ এবং কুয়েতি ঋণ ৩৯৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ১০ এপ্রিল ২০১৮ সালে একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। বাস্তবায়নকাল ধরা হয় জুন ২০২২ পর্যন্ত। পরবর্তীসময়ে ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশন ব্যয় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর, অর্থাৎ জুন ২০২৪ পর্যন্ত বাড়ায়।
বর্তমানে প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারিত হয়েছে ১ হাজার ৪০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৪৫ কোটি ২৬ লাখ এবং বৈদেশিক অর্থায়ন (ঋণ) ৮৫৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। অনুমোদিত ব্যয় থেকে ৬২ দশমিক ০২ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। জুন ২০২২ তারিখ পর্যন্ত প্রকল্পটির ক্রমপুঞ্জিত অগ্রগতি ৩৫০ কোটি ২২ লাখ, যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৪০ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং ক্রমপুঞ্জিত বাস্তব অগ্রগতি ৪২ শতাংশ।
প্রকল্পের প্রথম সংশোধন প্রস্তাবের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক কাজী সাইফুল কবীর জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পের কাজ চলমান। তবে কিছু কাজের জন্য প্রকল্পটি সংশোধন করা হবে। কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (কেএফএইডি) থেকে ১৫ মিলিয়ন কুয়েতি দিনার অতিরিক্ত অর্থায়নের আশ্বাসে নতুনভাবে ৪৩টি পৌরসভা অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
প্রকল্পের আওতায় কতিপয় কার্যক্রম জমির অপ্রাপ্যতার কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না হওয়া, পৌরসভার চাহিদা অনুযায়ী এইচবিবি সড়ক এবং সিসি সড়ক নির্মাণ করার জন্য খাতগুলোর আন্তঃঅঙ্গ সমন্বয় করার প্রয়োজনে সংশোধন প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
কুয়েত ফান্ডের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থায়নের বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে ৪৩টি পৌরসভাকে আলোচ্য প্রকল্পে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে প্রস্তাব পাওয়া যায়। পরে কুয়েত ফান্ডকে ইআরডি থেকে চিঠি দেওয়া হয়। কুয়েত ফান্ড নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ৪৩টি পৌরসভার সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রতিবেদন চেয়ে চিঠি দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে জানুয়ারি ২০২২ এ কুয়েত ফান্ডকে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন পাঠানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্থায়নের বিষয়ে কুয়েত ফান্ড থেকে কোনো নিশ্চয়তা পাওয়া যায়নি।
এলজিইডি জানায়, প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনীতে সরকারি ৭৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক অর্থায়ন ৪৫৮ কোটি ৬৯ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রস্তাব করা হয়েছে। জিওবি (বাংলাদেশ সরকার) অর্থ না বাড়িয়ে প্রকল্পটি সংশোধন করা যায় কি না তা বিবেচনার জন্য অর্থ বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
প্রকল্পটি শুরুর পর প্রায় পাঁচ বছরে ৩৫০ কোটি ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। জুন ২০২৪ এর মধ্যে প্রকল্পটির অনুমোদিত ব্যয়ের অবশিষ্ট ৫১৪ কোটি ৭৮ লাখ টাকাসহ অতিরিক্ত ৫৩৬ কোটি ৪৮ লাখ অর্থাৎ মোট ১ হাজার ৫১ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ পেতে যাচ্ছে।
পৌরবাসীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে অবকাঠামো উন্নয়ন করতে ৬৪ জেলার ২৮১টি পৌরসভা নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান করা হয়। এতে পৌরসভাগুলোর পরিবেশ উন্নয়নসহ পৌরবাসীর জীবনযাত্রার মান বাড়বে। দেশের বড় শহরগুলোর জনসংখ্যার চাপ কমানো ও তৃণমূল পর্যায়ের পৌরসভাগুলোতে জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে স্থানীয় সরকার বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন নামে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। মাস্টারপ্ল্যানের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ৩ হাজার ৬১৫ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, ৪ হাজার ২০০ মিটার ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ এবং ২৮১ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ করা। নতুন করে ৪৩টি প্রকল্প মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় ছিল।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: