৩২ আসন ছাড়লো আওয়ামী লীগ, শেষ পর্যন্ত আসন সমঝোতা
গতকাল আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) জন্য ২৬টি এবং ১৪ দলীয় জোটের অন্য শরিকদের জন্য ৬টি আসন ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: শেষ মুহূর্তে শরিক ও মিত্র দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা করেই নির্বাচনে নেমেছে আওয়ামী লীগ। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। জাতীয় পার্টির জন্য ২৬টি আসনে ছাড় দেয়া হয়েছে। এসব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৪ দলের শরিক দলগুলোর মধ্যে ৩ দলের ৬ জন প্রার্থীর জন্য আওয়ামী লীগ ছাড় দিয়েছে। এর বাইরে ৫টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করে দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা হওয়ায় নির্বাচনের মাঠেও নতুন হিসাবনিকাশ শুরু হয়েছে। শরিক ও মিত্রদের ছাড় দেয়ার পর এখন ২৬৩টি সংসদীয় আসনে নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা লড়বেন। এ ছাড়া ১৪ দলের ৬ প্রার্থীও নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন।
গতকাল আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) জন্য ২৬টি এবং ১৪ দলীয় জোটের অন্য শরিকদের জন্য ৬টি আসন ছাড় দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে ৫টি আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। প্রার্থিতা ফিরে পেতে তাদের কেউ কেউ উচ্চ আদালতে রিট করেছেন। জাপা’র সঙ্গে সমঝোতা হওয়া আসনগুলো হলো- ঠাকুরগাঁও-৩, নীলফামারী-৩ ও ৪, রংপুর-১ ও ৩, কুড়িগ্রাম-১ ও ২, গাইবান্ধা-১ ও ২, বগুড়া-২ ও ৩, সাতক্ষীরা-২, পটুয়াখালী-১, বরিশাল-৩, পিরোজপুর-৩, ময়মনসিংহ-৫ ও ৮, কিশোরগঞ্জ-৩, মানিকগঞ্জ-১, ঢাকা-১৮, হবিগঞ্জ-১, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২, ফেনী-৩, চট্টগ্রাম-৫ ও ৮ ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। এই আসনগুলোতে দলীয় কোনো প্রার্থী দেবে না আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে ১৪ দলীয় জোটের অন্য শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা হওয়া আসনগুলো হলো- বগুড়া ৪, রাজশাহী ২, কুষ্টিয়া ২, বরিশাল-২, পিরোজপুর-২ ও লক্ষ্মীপুর-৪। এসব আসনেও দলীয় প্রার্থী দেবে না আওয়ামী লীগ। জোটের শরিকসহ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবমিলিয়ে ২৬৯টি আসনে নৌকা প্রতীক থাকবে। এর আগে জাতীয় পার্টিসহ (জাপা) শরিকদের আসনে নৌকা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির নিজস্ব চাওয়া আছে। তাদের নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। তাদের যে সকল আসন ছেড়ে দেয়া হবে, সেসব আসনে নৌকার প্রার্থী থাকবে না। গতকাল রাজধানীর ধানমণ্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। তিনি বলেন, যে নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দল এবং প্রায় ২২শ’ প্রার্থী আছে, সে নির্বাচন কীভাবে ভাগাভাগির নির্বাচন হয়? নির্বাচন বয়কটের যে ডাক বিএনপি দিয়েছে, তা প্রতিহত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
শেষ মুহূর্তে নৌকা হারালেন ৩১ জন: জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আসন সমঝোতার কারণে শেষ মুহূর্তে দলীয় নৌকা প্রতীক হারিয়েছেন আওয়ামী লীগের ৩১ জন প্রার্থী। এ তালিকায় রয়েছেন-বরিশাল-২ সরদার মো. খালেদ হোসেন, রাজশাহী-২ মোহাম্মদ আলী, সাতক্ষীরা-১ ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, বগুড়া-৪ মো. হেলাল উদ্দিন কবিরাজ, লক্ষ্মীপুর-৪ ফরিদুন্নাহার লাইলী, পিরোজপুর-২ কানাই লাল বিশ্বাস, ঠাকুরগাঁও-২ মো. মাজহারুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-৩ মো. নাসিরুল ইসলাম খান, রংপুর-১ মো. রেজাউল করিম রাজু, রংপুর-৩ তুষার কান্তি মণ্ডল, নীলফামারী-৪ মো. জাকির হোসেন বাবুল, কুড়িগ্রাম-১ মো. আছলাম হোসেন সওদাগর, কুড়িগ্রাম-২ মো. জাফর আলী, গাইবান্ধা-১ আফরুজা বারী, গাইবান্ধা-২ মাহবুব আরা বেগম গিনি, সিলেট-৩ হাবিবুর রহমান, নীলফামারী-৩ মো. গোলাম মোস্তফা, বগুড়া-৩ মো. সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ মো. শাহজাহান আলম, চট্টগ্রাম-৮ নোমান আল মাহমুদ, বগুড়া-২ তৌহিদুর রহমান মানিক, সাতক্ষীরা-২ মো. আসাদুজ্জামান বাবু, ফেনী-৩ মো. আবুল বাশার, চট্টগ্রাম-৫ মোহাম্মদ আবদুস সালাম, পটুয়াখালী-১ মো. আফজাল হোসেন, ময়মনসিংহ-৫ মো. আব্দুল হাই আকন্দ, ময়মনসিংহ-৮ মো. আব্দুছ ছাত্তার, পিরোজপুর-৩ মো. আশরাফুল রহমান, হবিগঞ্জ-১ ডা. মো. মুশফিক হুসেন চৌধুরী, মানিকগঞ্জ-১ মো. আব্দুস সালাম, বরিশাল-৩ সরদার মো. খালেদ হোসেন।
বাদ পড়লেন আওয়ামী লীগের আরও ছয় এমপি: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন দেয়ার সময় ৭১ জন এমপিকে বাদ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। এবার জাতীয় পার্টিকে আসন ছাড় দেয়ার কারণে দলের আরও ছয় এমপি বাদ পড়েছেন। এর মধ্যে উপনির্বাচনে বিজয়ী দুই সংসদ সদস্যও আছেন। যারা চলতি সংসদের কোনো অধিবেশনেই যোগ দিতে পারেননি। জাতীয় পার্টিকে ছাড়া দেয়ার কারণে বাদ পড়া এমপিরা হলেন-কুড়িগ্রাম-১ আসনের আছলাম হোসেন সওদাগর, গাইবান্ধা-২ মাহবুব আরা বেগম গিনি, পটুয়াখালী-১ মো. আফজাল হোসেন, ঢাকা-১৮ মোহাম্মদ হাবিব হাসান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ মো. শাহজাহান আলম ও চট্টগ্রাম-৮ নোমান আল মাহমুদ। এদের মধ্যে আফজাল হোসেন ও শাহজাহান আলম গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন। কিন্তু তাদের শপথ নেয়ার আগেই একাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন শেষ হয়ে যায়। ফলে তারা একদিনও যোগ দিতে পারেননি।