৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দিলো আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা
সারা দেশে নিরাপদ সড়কসহ হাফ পাসের দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও শ্রমিকদের অংশগ্রহণে সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: সারা দেশে নিরাপদ সড়কসহ হাফ পাসের দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও শ্রমিকদের অংশগ্রহণে সমাবেশ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। ডিসেম্বর মাসজুড়ে তাদের দাবির পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে গণস্বাক্ষরসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবেন বলে তারা জানিয়েছেন। গতকাল বিকালে রাজধানীর রামপুরায় এক সমাবেশে তারা এ কথা জানান। গতকাল রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন ফুটপাথে জড়ো হন ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও শ্রমিকরা। তারা ব্রিজের রেলিংঘেঁষে দাঁড়িয়ে অবস্থান নেন। এ সময় নিরাপদ সড়ক চাইসহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্রিজের আশেপাশে পুলিশ সদস্যদেরও অবস্থান নিতে দেখা গেছে। এতে ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও শ্রমিকরাও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। সড়কে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর প্রতিবাদে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেন শিক্ষার্থীরা। তারই ধারাবাহিকতায় গতকালও তারা এই সমাবেশ কর্মসূচির আয়োজন করেন।
আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া খিলগাঁও মডেল কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া বলেন, আমরা আজ (গতকাল) ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক ও শ্রমিকরা এক হয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে এসেছি। সড়কে নৈরাজ্যের প্রতি মানুষের মনে ঘৃণা জন্মেছে ও আমাদের আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন রয়েছে। সমর্থন রয়েছে শিক্ষক, অভিভাবক ও শ্রমিকদের। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সড়ক আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, সর্বস্তরের মানুষের আন্দোলন এটা। এই আন্দোলনে আমরা জনসাধারণের সমর্থন চাই। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। পরবর্তী কর্মসূচির কথা উল্লেখ করে সোহাগী বলেন, আমরা ডিসেম্বর মাসজুড়ে আন্দোলন স্থগিত রেখেছি। তবে ডিসেম্বর মাসজুড়ে আমাদের দাবির পক্ষে জনসমর্থন আদায়ে গণস্বাক্ষরসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ পর্যন্ত সরকার ও প্রশাসনকে আমাদের ১১ দফা দাবি পূরণের জন্য সময় নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে যদি আমাদের সব দাবি পূরণ না হয় তাহলে জানুয়ারি থেকে আবার রাজপথে নামবো। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবো না। আমরা যৌক্তিক আন্দোলন করেছি। এই দাবি আমাদের সবার জন্য। আমাদের নিরাপদ সড়কের জন্য।
শিক্ষার্থীদের পূর্ব কর্মসূচি অনুযায়ী মানববন্ধনে একতা প্রকাশ করে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যে আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর অঙ্গীকার করেছিল, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল থেকে আমাদের বলা হয়েছিল- তাদের চোখ খুলে গেছে, তাদের সেই চোখ দিয়ে তারা সড়কে যা দেখবেন তা সংস্কার করে আমাদের নিরাপদ সড়ক দিবেন। যাত্রী হয়রানির সামগ্রিক কার্যক্রম বন্ধ করে একটি সুশৃঙ্খল পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। কিন্তু তার কোনো পরিবর্তন হয়নি। সড়কে বিশৃঙ্খলা ও হত্যা বেড়েছে। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন আমাদের অসংখ্য তাজা প্রাণ সড়কে ঝরছে। ফলে আমরা লক্ষ্য করেছি আমাদের শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক দাবি তুলে ধরেছে। তারা একটি নিরাপদ সড়ক চায়। প্রতিদিন তারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজের শিকার হচ্ছে। তারা হাফ পাসের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। এটা তাদের অধিকার। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক দাবির পক্ষে আছি।
শিক্ষক প্রতিনিধির বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহম্মদ বলেন, চালক ও তাদের সহকারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। সড়কে যেন আর একটি প্রাণও না ঝরে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষার্থীরা কোনো অযৌক্তিক দাবি নিয়ে রাজপথে নামেননি। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রাস্তায় এসেছে আমরা বিরাট ভরসা পেয়েছি। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পরিবহন খাতকে সংস্করণ না করলে এর সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। রাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের চলাচল করতে হয়। এতে তাদের শিক্ষাজীবন বাধার মুখে পড়ছে। শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলনকে যেন সর্বস্তরে পৌঁছে দেয় সেই আহ্বান জানিয়ে তাদের দাবির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করছি।
অভিভাবকদের পক্ষ থেকে জাকির হোসেন বলেন, আমি কেন আজ রাস্তায় দাঁড়িয়েছি। আমি এই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের জন্য এসেছি। এই ১১ দফা দাবি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই হাফ ভাড়া নিয়ে তাদের কেন আজ আন্দোলন করতে হবে। সারা দেশে সব ধরনের পরিবহনে ২৪ ঘণ্টা হাফ ভাড়া যুক্তি সঙ্গত। এটা আইনি অধিকার। তিনি আরও বলেন, আজকে সরকার কেন এত গড়িমসি করছে। এটা তো রাজনৈতিক কাজ নয়। আমরা নিরাপদ সড়কের মাধ্যমে নিরাপদ জীবন চাই। সারা দেশে অভিভাবকদের পক্ষে দাবি নিয়ে সরকারের প্রতি শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আহ্বান জানাচ্ছি।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: