সংলাপ নিয়ে প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ করবে না যুক্তরাষ্ট্র
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন উজরা জেয়া।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ নিয়ে প্রত্যক্ষ কোনো হস্তক্ষেপ করবে না বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
আজ বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন উজরা জেয়া।
উজরা জেয়া বলেন, বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে, সে নির্বাচন কবে হবে তা বাংলাদেশই ঠিক করবে। বাংলাদেশের ওপর আরোপিত মার্কিন ভিসা পলিসি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও প্রতিশ্রুতি আছে, সে প্রতিশ্রুতি পূরণে সহায়তা করতে এ ভিসানীতি। কোনো দলের প্রতি আমাদের কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই। আমরা একটা নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।
প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে উজরা জেয়া বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে জোরালো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্য মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকেও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্র সবসময় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সমর্থন করে।
তিনি বলেন, গত ৫ দশক ধরে আমাদের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায়। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে দুই দেশের চমৎকার সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছি। জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, নিরাপত্তা বিষয়ে আমাদের অংশীদারত্ব রয়েছে, সামনের দিনগুলোতেও তা অব্যাহত থাকবে।
বৈঠকে রোহিঙ্গা বিষয়ে আলোচনা করেছেন জানিয়ে উজরা জেয়া বলেন, গতকাল আমি রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছি। ২০১৭ সাল থেকে এখন পযন্ত যুক্তরাষ্ট্র হোস্ট কমিউনিটি এবং রোহিঙ্গাদের জন্য দুই দশমিক এক বিলিয়ন ডলার মানবিক সহায়তা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র সবসময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশে থাকবে। বাংলাদেশে এবং বার্মার (মিয়ানমারের) রোহিঙ্গাদের জন্য আমি ৭৪ মিলিয়ন ডলার ঘোষণা করছি। রোহিঙ্গাদের অর্থায়নে অন্যান্য দাতা দেশগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা আজ সরকারের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেছি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে। সাংবাদিকরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে অবাধে সংবাদ প্রচার করতে পারবে। সুশীল সমাজ গণতন্ত্র রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়াও মানবাধিকার ও মানুষের সুরক্ষা নিয়ে কথা বলেছি। সুশীল সমাজ ও অ্যাসোসিয়েশনের বাকস্বাধীনতার বিষয়ে আলোচনা করেছি। যুক্তরাষ্ট্র সবসময় বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রে সমর্থন করে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর করছে একটি সমৃদ্ধশালী দেশের ভবিষ্যত। নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের অবাধ অংশগ্রহণ ওপর সেটা নির্ভর করছে।
বৈঠকে ওয়াশিংটনের পক্ষে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং দেশটির আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার এশিয়া দপ্তরের উপ-সহকারী প্রশাসক অঞ্জলী কৌর উপস্থিত ছিলেন।
চার দিনের সফরে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) নয়াদিল্লি হয়ে সন্ধ্যায় একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকায় আসেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। মার্কিন দলটিকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। উজরার নেতৃত্বাধীন মার্কিন দলটি সফর শুরুর কর্মসূচিতে বুধবার (১৩ জুলাই) কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যায়। সেখানে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করেন তারা। বৃহস্পতিবার সকালে প্রথমে গণবভনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন উজরা-লু’রা। পরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠক করেন তারা।
এছাড়া সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সঙ্গেও বৈঠক করবে উজরার নেতৃত্বাধীন মার্কিন দলটি। এর বাইরে ঢাকা সফরকালে মার্কিন প্রতিনিধি দলটির সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শ্রমিক নেতাসহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।