সরু চালের বাজার দখল করবে বিনা-২৫ ধান
প্রথম নিউজ ডেস্ক: মাগুরাসহ দেশের ৩৬টি জেলায় এ বছর বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের নতুন উদ্ভাবিত বিনা-২৫ জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। আর এই বিনা-২৫ ধান এক দিন সরু চালের বাজার দখল করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ অনুবিভাগের অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া।
উচ্চ ফলনশীল এই জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল দেশে প্রচলিত চালের মধ্যে সবচেয়ে সরু। রোগ বালাই সহিষ্ণু, স্বল্প জীবনকাল এবং এই জাতের ধান বীজ কৃষক পর্যায়ে সংরক্ষণ সম্ভব হওয়ায় নতুন উদ্ভাবিত জাতটি সারাদেশে কৃষকদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে কৃষি বিভাগ।
মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর মাগুরায় মোট ৩৯ হাজার ৪৩৬ হেক্টর পরিমাণ জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে বিনা-২৫ জাতের ধানের আবাদ হয়েছে প্রায় ১ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে।
গত মঙ্গলবার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিন মাগুরার সদর উপজেলার মঘি এবং মহম্মদপুর উপজেলার ভাতুয়াডাঙ্গা গ্রামের বিভিন্ন মাঠে রোপণকৃত বিনা-২৫ ধানের ক্ষেত পরিদর্শন করেন।
মাগুরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুফী মো. রফিকুজ্জামানসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা মাঠপর্যায়ে ধানের ফলন দেখে নতুন উদ্ভাবিত বিনা-২৫ জাতের ধানের আবাদ সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানান।
সদর উপজেলার মঘি গ্রামের বুধইরপাড়া ব্লকের কৃষক আবুল কালাম জানান, এ বছর তিনি প্রায় সাড়ে ৩ একর জমিতে ধানের আবাদ করেছেন। এরমধ্যে ৫০ শতক জমিতে করেছেন বিনা-২৫ জাতের আবাদ। এই জাতের ধানগাছ প্রচলিত অন্যান্য ধান গাছের চেয়ে উচ্চতায় বেশি। ধানের ছড়াও বেশ বড়। এতে প্রতিটি গাছেই ফলন বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া এ জাতের ধান আবাদে সার কীটনাশক কম লেগেছে। যেটি কৃষকের জন্য সাশ্রয়ী।
মাগুরার বিভিন্ন প্রদর্শনী ক্ষেত পরিদর্শনে উপস্থিত বিনা-২৫ জাতের ধানের উদ্ভাবক বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডক্টর সাকিনা খানম বলেন, বাংলাদেশে সরু চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সবই আমদানিনির্ভর। এ অবস্থায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং বাইরে রপ্তানির লক্ষ্যে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের একদল বিজ্ঞানী সরু চালের ধান নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর নানা গবেষণা শেষে বিনা-২৫ জাতের জাতটি অবমুক্ত করা হয়। জাতটি আমার নিজের হাত ধরে অবমুক্ত হওয়ায় নিজেও গর্বিত বোধ করছি। জাতটি প্রিমিয়াম কোয়ালিটির। পূর্বের পরীক্ষিত বিনা-৫০ জাতের ধানের চেয়ে এটির বীজ অধিক সরু। ফলনও বেশি।
ক্ষেত পরিদর্শনে উপস্থিত কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্প্রসারণ অনুবিভাগের অধিদপ্তরের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্রশ্রী বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে সরু চাল বিদেশ থেকে আমদানি হয়। নতুন এই জাতের ধান থেকে বীজ সংরক্ষণ করা সম্ভব। বিধায় সারা দেশে এই জাতের আবাদ করা গেলে আমদানি নির্ভরতা কমে আসছে। বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হবে। লক্ষ্য পূরণে এবং বিনা-২৫ জাতের এই বীজ ছড়িয়ে দিতে ইতোমধ্যে দেশের ৩৯৬ উপজেলাতে ৫ কেজি করে বীজ আবাদের জন্য সরবরাহ করা হয়েছে। পরবর্তী বছরে ওই সব ক্ষেত থেকে সংগৃহীত বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে আবাদ অধিক পরিমাণ জমিতে সম্প্রসারিত হবে এবং খুব শিগগিরই দেশের চিকন চালের বাজার দখল করবে নতুন জাতটি।