সরকার গণতন্ত্র ও সত্যের বদলে কায়েম করেছে অন্যায়ের রাজত্ব : রিজভী
প্রথম নিউজ, ঢাকা:বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গতকাল গণভবনে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেছেন, শেখ হাসিনা দেশ থেকে যে গনতন্ত্রের পদ্ধতি পরমতসহিষ্ণুতাকে মুছে ফেলে একদলীয় একনায়কতন্ত্র স্থাপন করেছেন তা তার এই সাংঘর্ষিক বক্তব্যেই প্রমান করে। সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্র ও সত্যের বদলে কায়েম করেছে অন্যায়ের রাজত্ব। দেশে মতপ্রকাশ,চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা নেই। জেনেটিক্যালি ফ্যাসিস্ট বাকশালী দল- আওয়ামী লীগের রক্তের মধ্যেই রয়েছে বাকশালী কর্তৃত্ববাদীর বীজ। যখনই ক্ষমতায় আসে তখনই জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে গনতন্ত্রের শেষ চিহ্নটিকে মুছে দেয়।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার জনগণ মানে তার লুটেরা আওয়ামী লীগার। আওয়ামী নেতাকর্মী, উচ্ছিস্টভোগী, ভোট ডাকাত, দালাল লীগের কর্মচারী-কর্মকর্তাগন গণতন্ত্রের লেবাস গায়ে জড়িয়ে সুবিধা ভোগ-উপভোগ সবকিছু করছে। শেখ হাসিনা তাদের কথাই বলেছেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, বিরোধীদের ওপর বুলডোজার চালানোর পর নজিরবিহীন উদ্ভট ডামী নির্বাচনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশে চালু হয়েছে এক ব্যক্তির নিরঙ্কুশ শাসনব্যবস্থা। গোটা বাংলাদেশ এখন তার হাতে জিম্মি হয়ে গেছে। সর্বত্রই বিরাজ করছে এক ভয়াবহ বিভিষিকা। আওয়ামী লুটেরা, হন্তারক, সন্ত্রাসী, নারী নির্যাতনকারী, খুনি, দখলবাজ-টেন্ডারবাজদের এক উচ্ছৃঙ্খল উল্লাসের দৃশ্যপট দেশজুড়েই। আর ডামি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়শঃ জনগণকে নিয়ে বিদ্রুপ, মিথ্যাচার, তামাশা করছেন। দু”দিন আগে শেখ হাসিনা বিমসটেক-এর মহাসচিব ইন্দ্র মনি পান্ডেকে বলেছেন”আওয়ামী লীগ টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় আসায় বাংলাদেশের সমস্ত জনগণ এখন গণতন্ত্র উপভোগ করছে।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছর ধরে দেশের মানুষ গনতন্ত্র নয়, স্বৈরাচারের নিষ্ঠুর সাজা ভোগ করছে। ভোটাধিকার বঞ্চিত হওয়ার যন্ত্রণা ভোগ করছে। ক্ষুদার জ্বালায় চোখের পানিতে ভাসছে। নিপীড়ণ উপভোগ করতে করতে মানুষের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। মানুষের ভাষাও হারিয়ে গেছে। অসহিষ্ণুতা, সীমাহীন লোভ আর উদ্ধত রাষ্ট্রশক্তিকে আশ্রয় করে সর্বত্রই ফ্যাসিবাদের বিকৃত হিংস্র রুপ প্রকট হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে সীমানায় শুধুই অশান্তির আগুন।
তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কিছু দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে যে, নির্বাচন হয়েছে ঠিকই কিন্তু অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। তাদের দেখাতে হবে কোথায় সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি।“ ভোটের নামে জাল ভোটের প্রতিযোগিতা, শিশু-কিশোর ভোট, রাস্তা থেকে পথিক ধরে নিয়ে ভোট, একই ব্যক্তির ৫০ ভোট, মিনিটে ৫০ ভোট, একই লাইন থেকে ঘুরেফিরে বার বার জাল ভোট দিয়েও ভোটের দিন বিকাল তিনটা পর্যন্ত ২৭ দশমিক ১৫ % ভোটের ঘোষনা দিয়ে গনভবনের চাপে আবার এক ঘন্টা পরেই ৪০% এবং তার পরের দিন অর্থাৎ ৮ জানুয়ারী দুপুরে তা আরেক দফা বাড়িয়ে ৪১ দশমিক ৯৯ শতাংশ ভোটের গোজামিলের ভৌতিক হিসাব বানানোর ভূয়া হাস্যকর নির্বাচন ভোটের ইতিহাসে কলংক তিলক উৎকীর্ন করেছে ডামি সরকার।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, সরকার আবারও ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধির পায়তারা করছে। তোড়জোড় শুরু হয়েছে দ্রুত পানির দাম বৃদ্ধির জন্য। জনগণের পকেট কাটার আরেকটি কৌশল নিয়েছে দখলদার সরকার। ঢাকা ওয়াসা লাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ার পরেও অন্যায়ভাবে পানির মূল্যবৃদ্ধির আয়োজন চলছে। দেশের শহরগুলোতে প্রায় ৮০% মানুষের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বড় শহরগুলোতে সুপেয় পানির বড়ই সংকট। সেক্ষেত্রে অযৌক্তিকভাবে ওয়াসার পানির মূলবৃদ্ধি হলে নাগরিক জীবনে আরেকটি নতুন সংকট তৈরি হবে। ডামি সরকার জনগণের বাঁচা-মরাকে পাত্তা দেয়না। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের রক্ত চুষে নিতেই এরা তৎপর। সারাদেশের তীব্র গ্যাসের সংকট থাকলেও এরই মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোরও তৎপরতা শুরু হয়েছে। দখলদার সরকারের নীতিই হচ্ছে গরীব মানুষের পকেট কাটা।
সংবাদ সম্মেলনে রিজভী সারাদেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা এবং গ্রেপ্তারের বর্ণনা তুলে ধরেন।