সাবেক এমপি জাহিরের ১০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দের আদেশ
প্রথম নিউজ, হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আবু জাহির। গত ৫ আগস্ট থেকে স্ত্রী-সন্তানসহ রয়েছেন পালিয়ে। এরই মধ্যে বেরোতে শুরু করেছে তার অবৈধ সম্পদের তথ্য। গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকে তার একের পর এক নামে-বেনামে থাকা সম্পদের তথ্য। অথচ, নির্বাচনি হলফনামায় উল্লেখ করেছেন তার তেমন কিছুই নেই। এখন জেলাজুড়ে আলোচিত হয়ে উঠে কত সম্পদের মালিক আবু জাহির।
এদিকে এসব সম্পদের প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটনে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ইতোমধ্যে তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা তার সোয়া ১০ কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এসব সম্পদের বাজার মূল্য আরও কয়েকগুণ বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। এসব সম্পদ ক্রোকের আবেদন জানালে বিচারক বুধবার তা জব্দের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন হবিগঞ্জ সমন্বিত কার্যালয়ের সরকারি আইনজীবী সামছুল হক বলেন, দুদক বেশ কিছুদিন ধরেই আবু জাহিরের সম্পদ অনুসন্ধানে কাজ করছিল। ইতোমধ্যে যেসব সম্পদের হিসাব পাওয়া গেছে তা জব্দের আদেশ চেয়ে বুধবার হবিগঞ্জের বিশেষ জজ আদালতে আবেদন জানালে বিচারক তা জব্দের নির্দেশ দেন।
দুদকের দেওয়া আবেদনে জানা যায়, আবু জাহিরের নামে ঢাকার গুলশানে একটি অ্যাপার্টমেন্ট, যার মূল্য ১ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার টাকা, হবিগঞ্জ টাউন হল রোডে একটি ৫ তলা বাড়ি, যার মূল্য ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, সুলতান মাহমুদপুর মৌজায় ১ লাখ ৭০ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ৭১ শতাংশ জমি, একই মৌজায় ২ লাখ ৩৬ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ৮৯ শতাংশ জমি, ৮৮ হাজার টাকা মূল্যের ৩১ শতাংশ জমি, ১৩ লাখ ৫৩ হাজার টাকা মূল্যের ৩২ শতাংশ জমি, ৫ লাখ ৬ হাজার টাকা মূল্যের ১২ শতাংশ জমি, ২৩ লাখ ৭৩ হাজার ৮০০ টাকা মূল্যের ৫৪ দশমিক ৮ শতাংশ জমি এবং ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা মূল্যের ২ শতাংশ জমি রয়েছে। এছাড়া তার নিজ নামে ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ২৪০ টাকা মূল্যের একটি বিলাশবহুল জিপ গাড়ি, ৫৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪৬৬ টাকা মূল্যের একটি বিলাশবহুল প্রাইভেট কার রয়েছে। কৃষি ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখায় আবু জাহির ও তার ভাই আল-আমিনের নামে পৃথক দুটি যৌথ অ্যাকাউন্টে ২৬ লাখ ২১ হাজার ১১৪ টাকা জমা আছে। আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে তার নিজের নামে ১৯ লাখ ২০ হাজার টাকার একটি পলিসি আছে।
আবু জাহিরের স্ত্রী আলেয়া আক্তারের নামে হবিগঞ্জ শহরের সুলতান মাহমুদপুর মৌজায় রয়েছে ৮২ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমির ওপর একটি বাড়ি, ৬ লাখ ৫০ হাজার ১০০ টাকা মূল্যের ১৫ শতাংশ জমি। তার নামে আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ১৪ লাখ ৪৮ হাজার ৮৪৬ টাকা এবং ৪ লাখ ৪৪ হাজার ২৪২ টাকার পৃথক দুটি বিমা পলিসি আছে।
তার ছেলে ইফাত জামিলের নামে হবিগঞ্জ শহরের সুলতান মাহমুদপুর মৌজায় ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১৫ শতাংশ জমির ওপর একটি বাড়ি, একই মৌজায় ২৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ৬২ দশমিক ০৮ শতাংশ জমি, চুনারুঘাটে গাজীপুর মৌজায় ৩ লাখ ৫৪ হাজার ২০০ টাকা মূল্যের ৪২ শতাংশ জমি এবং একই স্থানে ২ লাখ ৬৫ হাজার ১০০ টাকা মূল্যের ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ জমি আছে। তার নামে একটি বিও অ্যাকাউন্টে ৫ লাখ ৯৯ হাজার ৩৩ টাকা, আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ১৬ লাখ ৭৩ হাজার ৭৩ টাকার এবং ১৬ লাখ ৪৬ হাজার ৩০১ টাকার পৃথক দুটি পলিসি রয়েছে।
আবু জাহিরের মেয়ে আরিফা আক্তার মুক্তির নামে হবিগঞ্জ শহরের সুলতান মাহমুদপুর মৌজায় ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ১৫ শতাংশ জমি, পূবালী ব্যাংক হবিগঞ্জ শাখায় ১৪ লাখ ৪৯ হাজার ৬৬২ টাকা, একটি বিও অ্যাকাউন্টে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮২৩ টাকা রয়েছে।
তার ভাই বদরুল আলমের নামে শায়েস্তাগঞ্জ শিল্পাঞ্চলের অলিপুরে ৫ লাখ ৪৪ হাজার ৫০০ টাকা মূল্যের ১০ শতাংশ জমি, ওই স্থানে তার আরও ১১ শতাংশ জমি রয়েছে, যার মূল্য ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা, সেখানে ২ কোটি ৩৬ লাখ ৮১ হাজার ৭২১ টাকায় একটি টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। আমেরিকান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে তার নামে ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৫৮৮ টাকার পৃথক ৪টি পলিসি আছে। তার আরেক ভাই আল-আমিনের নামে জনতা ব্যাংকের হবিগঞ্জ শাখায় জমা আছে ২৫ লাখ টাকা।
অবশ্য জানা গেছে, দুদকের অনুসন্ধানে পাওয়া সম্পদের প্রকৃত বাজার মূল্য আরও কয়েকগুণ বেশি হবে। এর বাইরেও তার আরও বিপুল পরিমাণ সম্পদ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া তার নির্বাচনি হলফনামায় স্ত্রীর নামে একটি বিলাসবহুল গাড়ি দেখালেও তা অনুসন্ধানে আসেনি। আবু জাহিরের বিরুদ্ধে ভূমি দস্যুতা, চাঁদাবাজি, সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে দুদক। তার এবং পরিবারের নামে আরও সম্পদ রয়েছে কিনা তাও অনুসন্ধান চলছে বলেও আদালতে পাঠানো দুদকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।