ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে কি জামায়াত জোট বাঁধছে?

ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে কি জামায়াত জোট বাঁধছে?

প্রথম নিউজ, অনলাইন:   চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক মিত্র বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মূলত একসময়ের মিত্র বিএনপি ও জামায়াতের উদ্যোগে পৃথক দুটি জোট গঠনের প্রক্রিয়া এখন স্পষ্ট। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী শুধু ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে জোট করার প্রক্রিয়ায় বেশি সক্রিয়। এছাড়া তারা অন্য দলগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টায় আছে।

জামায়াতের বাইরে মোটাদাগে বড় ইসলামপন্থী দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোট, জাকের পার্টি, নেজামে ইসলাম পার্টি ও তরিকত ফেডারেশন। জোটের সমীকরণে এই দলগুলো গুরুত্ব পেয়ে থাকে। অতীতে বড় দলগুলো ভোটের হিসাব মেলাতে এই দলগুলোকে জোটে ভিড়িয়েছিল।

জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বলছে, তাদের নেতৃত্বে ইসলামপন্থী দলগুলো কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছে।
এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার বরিশালের চরমোনাইয়ে যান জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি চরমোনাইয়ের পীর ও ইসলামী আন্দোলনের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার আগে সেখানে তারা মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন।

দল দুটির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আদর্শিক কিছু বিষয়ে মতভিন্নতা রয়েছে।
এর মধ্যেই জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতা প্রথমবারের মতো চরমোনাই পীরের বাড়িতে আতিথেয়তা নিলেন। এটিকে দল দুটির আগামী নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
 
ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতা না জোট হবে, বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হয়নি। তবে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বে ইসলামপন্থীদের ভোটের একটি ব্যালট চায় দলগুলো। এরই মধ্যে দলগুলোর এক ধরনের বোঝাপড়া হয়েছে দাবি করছে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন।

ইসলামী আন্দোলনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দলগুলোর সঙ্গে তারা কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছেন। ইসলামী ধারার দলগুলো এক ছাতার নিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে। সেই চাওয়া থেকে একটি জোট বা নির্বাচনী সমঝোতা করার প্রক্রিয়া চলছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর জামায়াত রাজনীতিতে খুবই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ধর্মভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে তাদের ধারাবাহিক বৈঠকে একটি ‘ইসলামী জোট’ গঠনের উদ্যোগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক ‘শত্রু’ হিসেবে পরিচিত ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গেও বৈঠক করে দলটি।

বৃহৎ জোট গঠনে গত ২০ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে কওমি মাদরাসাভিত্তিক কয়েকটি ইসলামী দলের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলধারার সাতটি ইসলামী দলের নেতাদের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। এর পাশাপাশি কয়েকটি অনিবন্ধিত ইসলামী দল এবং গত ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনামলে নির্যাতনের শিকার আলেম-ওলামাদের সঙ্গে যৌথ মতবিনিময় করেছেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, এত দিন আদর্শভিত্তিক জোট করতে পারেননি তারা। এটা তাদের ভুল হয়েছে। এখন তারা ইসলাম কায়েমের লক্ষ্যে ধর্মভিত্তিক দলগুলোর একটি জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় অনেক দূর এগিয়েছেন। এটি নির্বাচনী জোট না হয়ে নির্বাচনকেন্দ্রিক সমঝোতা হতে পারে। যা-ই হোক, ধর্মভিত্তিক দলগুলোর একটি ব্যালট চায় মানুষ।