স্বামীর ভিটায় ফিরতে চান যাত্রী ছাউনিতে ফেলে যাওয়া সেই বৃদ্ধা
হারিছা বেগম। বয়স ৮৫ বছর। যাকে যাত্রী ছাউনিতে ফেলে চলে গেছেন তার দুই ছেলে।
প্রথম নিউজ, রাজবাড়ী: হারিছা বেগম। বয়স ৮৫ বছর। যাকে যাত্রী ছাউনিতে ফেলে চলে গেছেন তার দুই ছেলে। অথচ বয়সের ভারে ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না তিনি। আধো আধো কণ্ঠে শুধু বলেন, ‘বাইত যাব। স্বামীর ভিটাই যাব। বৃদ্ধা হারিছার কথা অনুযায়ী তার বাড়ি ফরিদপুর জেলায়। তার স্বামীর নাম মৃত আরব আলী। দুই ছেলে আলমগীর হোসেন ও আব্দুল হোসেন।
জানা গেছে, গত শুক্রবার (২৩ জুন) ভোরে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির ওয়াপদা মোড়ে ৮৫ বছরের বৃদ্ধ হারিছাকে যাত্রী ছাউনিতে ফেলে রেখে যান তার দুই সন্তান। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বৃদ্ধার ঠাঁই মেলে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে। ফেলে রেখে যাওয়ার ১০ দিন অতিবাহিত হয়ে গেলেও বৃদ্ধ হারিছা বেগমের স্বজনদের এখনো সন্ধান মেলেনি।
স্বজনদের সন্ধান না মেলায় হারিছা বেগমের ঈদও কেটেছে হাসপাতালের বিছানায়। হাসপাতালে ভর্তি চিকিৎসাধীন রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথেই সময় পার করছেন তিনি। তবে হারিছা বেগম এখন বেশ অভিমানী হয়ে উঠেছেন। আদৌ কি সন্ধান মিলবে হারিছার স্বজনদের, ফিরতে পারবে নিজের স্বামী-সন্তানের ঘরে নিজ ভিটায়- এমনটাই প্রশ্ন সবার?
রোববার (২ জুলাই) সকালে বালিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, রুগ্ন শরীর নিয়ে হাসপাতালের বিছানায় ঘুমিয়ে আছেন হারিছা। পাশের বেডের রোগী শাহিনা আক্তার জানান, শনিবার রাত থেকে হালকা জ্বরে ভুগছেন হারিছা বেগম। ঈদের পরের দিন থেকে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন। খাওয়ার কথা বললে অভিমানের সুরে অস্পষ্ট ভাষায় জানান, তিনি আর খেতে চান না। ফিরতে চান নিজ ভিটায়, স্বামীর ঘরে। তার বিছানায়ও কাউকে বসতে দেন না। কথাও কম বলেন।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সুমন সরকার জানান, হারিছা বেগমের বয়স অনেক বেশি। এই বয়সে এসে এমন বাস্তবতায় তিনি কিছুটা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তবে তিনি সুস্থ আছেন। আমরা নিয়মিত তার স্বাস্থ্যের খোঁজ রাখছি।
বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম বলেন, হারিছা বেগমের পরিবারের খোঁজে প্রশাসন, গণমাধ্যমকর্মীসহ স্থানীয় অনেকেই কাজ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও অনেকে প্রচার করেছে। কিন্তু তার পরিবারের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি। এখন তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ। স্বজনদের সন্ধান না পাওয়ায় খুব দ্রুত তাকে পার্শ্ববর্তী জেলা ফরিদপুরের সেফহোম অথবা প্রবীণ নিবাসে হস্তান্তর করা হবে।
উল্লেখ্য, ২৩ জুন শুক্রবার সকালে স্থানীয় যাত্রী ছাউনিতে হারিছা বেগমকে তার দুই সন্তান ফেলে রেখে যান বলে অভিযোগ করেন তিনি। বয়সের ভারে তিনি তেমন একটা কথা বলতে পারেন না। দুটি চোখের দৃষ্টিও ঝাপসা। কোনোমতে নিজের নাম এবং স্বামী আর দুই সন্তানের নাম বলতে পারেন। বৃদ্ধার ভাষ্যমতে, তার বাড়ি ফরিদপুরে। স্বামীর নাম মৃত আরব আলী। দুই সন্তান আবদুল হোসেন ও আলমগীর হোসেন। তবে এখন পর্যন্ত তার সন্তানদের সন্ধান পাওয়া যায়নি।