স্টাফদের কর্মবিরতি: মধ্যরাত থেকে সারাদেশে ‘বন্ধ’ হচ্ছে ট্রেন চলাচল!

রোববার (২৭ আগস্ট) বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান  এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

স্টাফদের কর্মবিরতি: মধ্যরাত থেকে সারাদেশে ‘বন্ধ’ হচ্ছে ট্রেন চলাচল!

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সারাদেশে রোববার (২৭ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে টানা কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। ফলে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স যোগ করে পেনশন প্রদান এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে জটিলতা নিরসন না হওয়ায় পূর্বঘোষিত এমন সিদ্ধান্তে অনড় বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারীরা।

রোববার (২৭ আগস্ট) বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান  এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ (চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকিট চেকার) ট্রেনে দায়িত্ব পালন শেষে তার নিয়োগপ্রাপ্ত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার্স) হলে ১২ ঘণ্টা এবং এলাকার বাইরে (আউটার স্টেশন) হলে ৮ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পান। রেলওয়ের স্বার্থে কোনো রানিং স্টাফকে তার বিশ্রামের সময়ও কাজে যুক্ত করলে বাড়তি ভাতা-সুবিধা দেওয়া হয়, যা রেলওয়েতে ‘মাইলেজ’ সুবিধা হিসেবে পরিচিত।

২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় মাইলেজ সুবিধা সীমিত করতে রেল মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে আনলিমিটেড মাইলেজ সুবিধা বাদ দিয়ে তা সর্বোচ্চ ৩০ কর্মদিবসের সমপরিমাণ করা এবং বেসামরিক কর্মচারী হিসেবে রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক ভাতায় মূল বেতনের সঙ্গে পাওয়া কোনো ভাতা যোগ করার বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়। এরপরই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন রানিং স্টাফরা।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক-কর্মচারীদের অবসরোত্তর ৭৫ শতাংশ মাইলেজ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান প্রায় ১৬০ বছর ধরে চলমান ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ, যা যুগ যুগ ধরে বেতন খাতের অংশ ছিল, সেখান থেকে সরিয়ে টিএ খাতে নেওয়ার ফলে জটিলতা তৈরি হয়।

মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহালের দাবিতে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করছেন রানিং স্টাফরা। কয়েক দফায় অতিরিক্ত কাজ থেকে বিরত থাকা এবং ধর্মঘট পালন করেছেন তারা। তবে বিভিন্ন সময়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক, রেলসচিব, রেলমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে আন্দোলন থেকে সরে আসেন তারা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোনো সমাধান না হওয়ায় ২৮ আগস্ট থেকে টানা কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ১৬০ বছর ধরে এই নিয়ম চলে আসছে। এত বছর ধরে চলে আসা একটা নিয়ম হুট করে বন্ধ করে দেবে, এটা তো রেলের কোনো স্টাফ মেনে নিতে পারে না। টাকা দিতেও বারবার ঘুরায়। তাই নতুন নিয়ম পরিবর্তন করার জন্য আমরা ওনাদের বারবার সময় দিয়েছি। বারবার আন্দোলন করেছি, বারবার প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু এবার আর কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, গত ২০ আগস্ট রেলমন্ত্রী, সচিব এবং রেলওয়ে মহাপরিচালক আমাদের ডেকেছিলেন। আমাদের সব অঞ্চলের নেতাকর্মীরা সেদিন উপস্থিত হয়ে তাদের সঙ্গে বসে কথা বলেছি। কিন্তু রেলমন্ত্রী সেদিন আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে পারেননি। তিনি আমাদের হুমকি দিয়েছেন। আমরা তো নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছি, আর এরই মধ্যে ওনাদের প্রায় সাড়ে তিন বছর সময় দেওয়া হয়েছে। এখন কর্মবিরতিতে যাবো। শেষ মুহূর্তে যদি কোনো ঘোষণা না আসে আমাদের পূর্বঘোষিত এ কর্মসূচি আজ রাত ১২টা থেকে চলবে।