শাহবাগে ছেলেকে কোলে নিয়ে প্রতিবাদে সেই ঝলসানো মা!
সাম্প্রতিক নাশকতার প্রতিবাদে শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) শহীদ মিনার থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ‘আমরাই বাংলাদেশ’ আয়োজিত প্রতীকী পদযাত্রায় অংশ নিয়ে এ প্রতিবাদ জানান ইরিত্রা।
প্রথম নিউজ, ঢাকা: মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও তিন বছরের শিশু সন্তান ইয়াসিনকে বুকে জড়িয়ে পুড়ে মারা গেলেন নাদিরা আক্তার পপি (৩৫)। আগুনের হাত থেকে বাঁচতে ট্রেন থেকে নামার চেষ্টা করেও ভিড় ও ধোঁয়ার কারণে নামতে পারেন নি মা-ছেলে।
গত ১৯ ডিসেম্বর ভোরে রাজধানীর তেজগাঁও রেলস্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে মারা যান নারী-শিশুসহ চারজন। তাদের মধ্যে আছেন পপি ও তার ছেলে। মা-ছেলের ঝলসানো শরীরের সেই মুহূর্তকে সামনে এনে প্রতীকী অবস্থান নেওয়ার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইরিত্রা।
সাম্প্রতিক নাশকতার প্রতিবাদে শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) শহীদ মিনার থেকে শাহবাগ পর্যন্ত ‘আমরাই বাংলাদেশ’ আয়োজিত প্রতীকী পদযাত্রায় অংশ নিয়ে এ প্রতিবাদ জানান ইরিত্রা।
তিনি বলেন, 'আমি আজকে ঝলসানো মা। আমার শিশুকেও জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমি চাই না এ দেশে আবার কোনও মা ঝলসে যাক। ইরিত্রা আরও বলেন, 'আমি এ দেশে আর কোনও নাশকতা চাই না। বিচার চাওয়ার আগে আমি শুধু অনুরোধ করবো, এদেশের আর কোনও মা-শিশু যাতে এভাবে চলে না যায়।'
প্রতীকী পদযাত্রা শেষে শাহবাগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগে বাসে অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া নাহিদের মা রুনি বেগম বলেন, 'আমার ছেলেকে কেন তারা পোড়ালো? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি বিচার করবেন।
তিনি আরও বলেন, আমার ছেলেকে হত্যা করেছে। আমার নাহিদ মা-মা বলে ডাকছে। আমার ছেলেকে কেন হত্যা করলো? আমি বিচার চাই। জনগণের কাছে বিচার চাই, কঠিন বিচার চাই, কঠিন শাস্তি চাই।
এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বরের ট্রেনে অগ্নিসংযোগের দিন ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন নিহত পপির স্বামী মিজানুর রহমান। তিনি জানিয়েছিলেন, আমি পেশায় হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী। নেত্রকোণা গ্রামের বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছিল আমার পরিবার। ব্যবসার কাজের জন্য আমার যাওয়া হয়নি তাদের সঙ্গে। আমার শ্যালক হাবিব ফোন দিয়ে জানায় ট্রেনের তিনটি বগিতে আগুন দেওয়া হয়েছে। শ্যালক ও আমার বড় ছেলে নামতে পারলেও ধোঁয়ার কারণে আটকা পড়ে আমার স্ত্রী ও ছোট ছেলে। আমি ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দেখি আমার শিশু সন্তানকে কোলে জড়িয়ে ধরে আছে স্ত্রী। তাদের দুজনের শরীর পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে।
চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, আমি কী অপরাধ করেছি? কী থেকে কী হয়ে গেল... কিছুই বুঝতে পারছি না। আল্লাহ, আমার তো সব শেষ হয়ে গেল। আমি কার কাছে বিচার দেব, আমার ছেলে আর স্ত্রীকে তো আর ফিরে পাব না..।