শব্দদূষণে হাইকোর্টের বিচার কাজে বিঘ্ন রেজিস্ট্রারকে তলব

সোমবার হাইকোর্ট বিভাগের এক বিচারপতি এজলাসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

শব্দদূষণে হাইকোর্টের বিচার কাজে বিঘ্ন রেজিস্ট্রারকে তলব
শব্দদূষণে হাইকোর্টের বিচার কাজে বিঘ্ন রেজিস্ট্রারকে তলব

প্রথম নিউজ, অনলাইন: উচ্চ শব্দদূষণে হাইকোর্টের বিচারকাজ বেশ কিছুদিন ধরে বিঘ্ন ঘটার অভিযোগ করছিলেন   আইনজীবী ও আদালতের সংশ্ল্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সোমবার হাইকোর্ট বিভাগের এক বিচারপতি এজলাসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সংশ্লিষ্ট আদালতে শুনানি করতে আসা বেশ কয়েকজন আইনজীবীও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। উচ্চ শব্দের কারণে হাইকোর্ট বিভাগের বিজয় ৭১ ভবনের ৩২ নম্বর বেঞ্চের বিচার কাজ দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। এক পর্যায়ে বিষয়টি সমাধানের জন্য সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে তলব করেন আদালত। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের দুই ঘণ্টা পরেও রেজিস্ট্রার জেনারেল সংশ্লিষ্ট কোর্টে উপস্থিত হননি। এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ওই বেঞ্চের বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। আদালতের কার্যক্রম শেষে বিচারক এ বিষয়ে সমাধানের জন্য প্রধান বিচারপতি ও  অ্যাটর্নি জেনারেলকে জানিয়েছেন। এরপর বিচারপতি উপস্থিত সিনিয়র আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন এজলাসে আসলে তার সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করেন। বিচারপতি বলেন, আপনি বিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবী। কোর্ট চলাকালে পরিবেশ কেমন থাকা উচিত আপনিই বলুন। 

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন আদালতকে বলেন, বিচার কাজে নিরবচ্ছিন্ন শব্দদূষণমুক্ত হওয়া প্রয়োজন। জবাবে বিচারপতি বলেন, এভাবে হলে আমরা কীভাবে বিচার করবো? কোর্টের পাশে বিচার কাজ চলার সময় কীভাবে উচ্চ শব্দে সভা-সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হলো? এটি তারা কি খেয়াল করলো না? সভা-সমাবেশ করার অধিকার সবারই আছে। তারা কোর্ট ছুটির দিন কিংবা কোর্ট সময়ের পরে এসব সভা-সমাবেশ করতে পারে। যারা সভা-সমাবেশ করছে, আমি বলবো তাদের কোনো দোষ নেই। তারা তো অনুমতি নিয়ে করছেন। যারা অনুমতি দিলেন তাদেরকে এ বিষয়টি ভাবা উচিত ছিল। এরপর বিচারপতি বলেন, দশ মিনিট সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রার জেনারেলকে আসতে বলা হলেও দুই ঘণ্টা পার কিন্তু তিনি এখনো আসেননি। এটা দুঃখজনক। আমি দেখেছি ২০১০ সালে, রেজিস্ট্রার জেনারেলকে ডাকা মাত্রই চলে আসতেন। এখন এটার ব্যত্যয় দেখা যাচ্ছে। আমার পাওয়ার আছে, আমি চাইলে রেজিস্ট্রারকে ৬ মাসের জেল দিতে পারি। কিন্তু এরকম আদেশ দিলে বিষয়টি আপনারা অন্যভাবে নিবেন। কার পাওয়ার নিয়ে রেজিস্ট্রার জেনারেল এরকম করছেন জানি না। কেউ কারো কমান্ড না শুনলে, নিজে কাউকে সম্মান না দিলে একদিন তাকেও অসম্মানিত হতে হবে। 

স্কুল-কলেজ হাসপাতালের পাশে যা ইচ্ছা তাই করা যায় না। আইনে এসব এলাকায় উচ্চ শব্দের হর্ন দেওয়াও নিষেধ। অথচ এখানে কোর্ট চলার পর থেকে উচ্চ শব্দ শুনছি। এ সময় ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন আদালতকে বলেন, আমি বিষয়টি জানলাম। আপনি যা বলছেন তা সঠিক বলছেন। আমি নিজেও শুনানি করতে গিয়ে বিরক্তিবোধ করছি। এ বিষয়ে আমি উপর মহলকে অবহিত করবো। যেন বিষয়টি দ্রুত সমাধান হয়। এ বিষয়ে এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন মানবজমিনকে বলেন, বিজয়-৭১  কোর্টের পাশে সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ চলছিল। সমাবেশের মাইকের প্রচণ্ড আওয়াজ এজলাসে বিচারকাজ পরিচালনায় বিঘ্ন ঘটছিল। বিষয়টির সমাধানে বিচারক এ বিষয়ে এজলাসে আমাকে অবহিত করেন।

 বিষয়টির সমাধানে আমি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবো বলে আদালতকে জানিয়েছি। সংশ্লিষ্ট আদালতের  ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) মো. আশেক মোমিন মানবজমিনকে বলেন, সকালে যখন আদালতের কার্যক্রম শুরু হয় তখন সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানে চলা সমাবেশ থেকে এজলাসের ভিতরে উচ্চ শব্দে বিচার কাজে বিঘ্ন ঘটে। এ সময় বিচারক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে আদালত সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে তলব করেন। রেজিস্ট্রার আসার কথা বলেও আসেননি। উচ্চ আওয়াজের বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষকে টেলিফোনে জানানো হয়। তারা বলে, এটাতো রাজনৈতিক বিষয়। ওই আদালতে শুনানি করতে যাওয়া আইনজীবী ফারুক হোসেন বলেন, আমার একটি মামলা নিয়ে এই কোর্টে এসেছিলাম। মাননীয় বিচারপতি যখন একটি মামলা শুনানির জন্য প্রস্তুতি নিলেন এমন সময় প্রচণ্ড শব্দ আসে কোর্টের ভেতরে। দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়, এরপরেও উচ্চ শব্দ আসে সবার কানে। আদালত তখন ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রেজিস্ট্রার জেনারেলকে তলব করেন। আদালতে বিচার কাজ চলার সময় আশপাশে এভাবে সভা-সমাবেশ চলতে পারে না। বেশ কিছুদিন ধরে এভাবে সভা-সমাবেশের শব্দের কারণে বিচার কাজে বিঘ্ন ঘটছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom