রাস্তা অচল করে দাবী আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ হোক

রাস্তা অচল করে দাবী আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ হোক

প্রথম নিউজ, অনলাইন ডেস্ক: জনসাধারণের যেমন নির্বিঘ্নে চলাচলের অধিকার আছে। তেমনি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষেরও তাদের ন্যায় সংগত দাবী-দাওয়া প্রকাশের অধিকার আছে। কিন্তু দাবী দাওয়ার নামে যখন-তখন রাস্তা দখল করে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটিয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে অচল করে দেয়াটা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। তাছাড়া পাবলিক নুইসেন্স বলে একটা কথা আছে। এই নুইসেন্স সৃস্টি করার অধিকার কারও নেই। এই রাস্তা দখল করার সংস্কৃতি ৫ আগস্ট পরবর্তী আজকের বাংলাদেশে বেমানান। এতে মানুষের কষ্ট হয়। আগেও কষ্ট হতো। তবে এখন মানুষের পাশাপাশি দুই হাজার শহীদের আত্মা কষ্ট পায়, যখন রাস্তায় মানুষ এবং যানবাহন ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে থাকে। দাবী- দাওয়ার নামে বিভিন্ন নামে বিভিন্ন শ্রেণি- গোষ্ঠী এসব প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে থাকে। মানুষ তখন বলে বসে এই বাংলাদেশ কী আমরা চেয়েছিলাম। এজন্যই কী দুই হাজার শিশু- কিশোর, তরুণ - যুবক জীবন দিয়েছিলো! কমপক্ষে ত্রিশ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ব ও অন্ধত্ব বরণ করেছিলো! এরপর ফ্যাসিবাদের দোসররা কেউ কেউ আরও একধাপ এগিয়ে বলে দেয় আগেই তো ভালো ছিলাম। 

যদিও ইন্টারিম সরকার গঠনের পর  পরাজিত ও নিষিদ্ধ ফ্যাসিস্ট আওয়ামী অপশক্তি বিভিন্ন নামে  নানা দাবীর বাহানায় মাঠ দখলের অপচেষ্টা চালায়। কখনো আনসার লীগ, কখনো সংখ্যালগু লীগ, কখনো রিক্সা লীগ, কখনো ব্যাটারি রিক্সা লীগ, কখনো গার্মেন্টস লীগ, কখনো পরিবহন লীগ এবং কখনো বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে ছাত্রলীগ হয়ে মাঠে দাঁড়াতে চেয়েছে। কারণ পলাতক স্বৈরাচার ‘মাদার অব উসকানি’ শেখ হাসিনা কখনো চট করে দেশে ঢুকে পরার মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছে,  কখনো আরও খুনের হুমকি দিচ্ছে, কখনো কুমির কান্না করছে। সব দেখে মাঠের আওয়ামী বোধহীন কিছু নেতা-কর্মীরা মাদার অব উসকানির ফাঁদে পড়ে প্রথম প্রথম বেশ লম্ফঝম্প করার উদ্যোগ নিতে চাচ্ছিলো। অতপর কিছু এরেস্ট হবার পর ও দাবড়ানি খাবার পর হুশ ফিরে আসে যে, না আমাদের আপা তো নিজেকে সেফহোমে নিয়ে গিয়ে  আমাদেরকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। সেজন্য সর্বশেষ ভিনদেশ থেকে পরিচালিত, প্রযোজিত ও পরিবেশিত আওয়ামী লীগ কৃতকর্মের কারণে নিষিদ্ধ হবার পর দেশের ভেতর থেকে মাঠের কেউ আর টু শব্দ করেনি। 

যাই হোক ৫ আগস্ট পরবর্তী বর্তমান ইন্টারিম সরকার দায়িত্ব নেবার পর থেকে একের পর এক রাস্তা দখল করে দাবী নৈরাজ্য চলছেই। সব দাবী নিয়ে সবাই রাস্তায় বের হয়ে যাচ্ছে। এখনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এবং প্রেসক্লাবের সামনে নিজ নিজ দাবী নিয়ে রাস্তায়। আইন আছে মানুষের চলাচল এবং  যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু  প্রয়োগ নেই। “আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২” এর ধারা ২ এর উপধারা ২ অনুযায়ী - ‘স্থলপথ, রেলপথ,  জলপথ বা আকাশ পথে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা বা বিঘ্ন সৃষ্টি করা বা কোনো  চালকের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো যানের গতি ভিন্ন পথে পরিবর্তন করা..’ দন্ডনীয় অপরাধ।
 

এখন পর্যন্ত দাবী- দাওয়া প্রকাশে  সরকারের কাছে পৌঁছানোর কোনো বিকল্প ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। এতো এতো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে রাস্তায় অথচ এ নিয়ে সরকারের কারো কোনো সমাধানের বিকল্প ভাবনা নেই। এসব বন্ধে আইন প্রয়োগ নিয়ে  পুলিশ বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কারো কোনো কথা নেই । গণমাধ্যম বা সুশীল ক্লাস থেকেও নেই কোনো বিকল্প প্রস্তাব। 
উচিত ছিলো এতো এতো রক্তের বিনিময়ে  ফ্যাসিস্ট তাড়ানো পরবর্তী ইন্টারিম সরকারের রাষ্ট্রের স্বার্থে, কারো কোনো দাবী-দাওয়া থাকলে তা স্মারকলিপি আকারে যথাযথ কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের কাছে পৌঁছে দেয়া। এজন্য সব শ্রেণি-পেশার মানুষের দাবীর স্মারকলিপি রিসিভ করতে সরকার একটা উইং খুলতে পারতো। সেটাও করেনি।

সরকারের প্রথম দিকে সব দলীয় ট্রাফিক পুলিশ, সার্জেন্ট পালানোর কারণে সিটি ট্রাফিক ম্যানেজম্যান্টে মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। তখন প্রচুর ট্রাফিক জ্যাম লেগে থাকতো রাজধানীতে। সেটা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে পর্যন্ত নাক গলাতে হলো। এর সমাধান বের করতে বলা হলো। তারপর সংশ্লিষ্ট ট্রাফিক ডিপার্টমেন্টের  কর্মতৎপরতায় যানজটের কিছুটা উন্নতি হয়। কিন্তু ঝামেলা পাকায় এসব দাবী-দাওয়া শ্রেণি। হুটহাট রাস্তায় বেরিয়ে যায়। এমনকি কাজের বুয়াদের পর্যন্ত রাস্তায় নামানো হয়।

সরকারি আইন প্রয়োগ করে না হোক অন্তত  জনসাধারণের চলাচলের বৃহত্তর স্বার্থে হুট করে রাস্তায় নেমে আন্দোলন বন্ধ করতে সরকার একটা প্রজ্ঞাপন জারি করুক। পাশাপাশি যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন না ঘটিয়ে জনসমাগম বা দাবী -দাওয়া পেশ বা প্রতিবাদের জন্য একটি জনদাবী মঞ্চ করে দেয়া হোক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সেখান থেকে স্বারকলিপি পৌঁছে যাবে সরকারের হাতে। বলুনতো সরকার যদি চলাচলের রাস্তায় সব-ধরনের গণজমায়েত নিষিদ্ধ এবং আইনত দন্ডনীয় ঘোষণা করে তাহলে কী জনগণ খুশি হবে না। অবশ্যই খুশি হবে। ইন্টারিম সরকারতো গণমানুষের সরকার! তাহলে তাদের গণমানুষের ও যানবাহনের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করে এরকম প্রজ্ঞাপন জারি করতে বাধা কোথায়! এমনি করে সারা দেশেই তো জনদাবী মঞ্চ স্থান নির্ধারণ করে দিতে পারে সরকার পর্যায়ক্রমে।

একসময় তো ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউ তে রাজনৈতিক সমাবেশ হতো। সেখান থেকে জনস্বার্থে পল্টন ময়দান, মুক্তাঙ্গন এ দুটি স্থান নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এর পাশাপাশি দুটি দল ডিএমপি’র অনুমতি নিয়ে তাদের দলীয় কার্যালয়ে সমাবেশ করতো। তাহলে জনদুর্ভোগ কমাতে এ সিদ্ধান্ত কেন নিচ্ছে না সরকার। নাকি সরকারের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্টরা এসব জিইয়ে রেখে জন-দুর্ভোগ বাড়িয়ে মানুষকে এই সরকারের প্রতি ভীতশ্রদ্ধ করার যড়যন্ত্রে বিভোর। তাই তারা কোনো যৌক্তিক সমাধান করতে চাচ্ছেন না।

পরিশেষে আবারও বলবো, অবিলম্বে  দাবী আদায়ের নামে রাস্তায় নৈরাজ্য বন্ধ করা হোক। এজন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি স্থায়ী জনদাবী মঞ্চ করা হোক। নিশ্চিত থাকুন। সরকারকে সবাই সাধুবাদ জানাবে।

মাহবুব জামান, ফ্রিলান্সার , amikewna79@gmail.com