রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, অস্ত্র পেয়েই ছাত্রদল নেতাদের গ্রেপ্তার

 রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, অস্ত্র পেয়েই ছাত্রদল নেতাদের গ্রেপ্তার

প্রথম নিউজ, ঢাকা : সম্প্রতি বিএনপির সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের সাত কেন্দ্রীয় নেতাকে ৪টি অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন  পুলিশেরে গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। এরপর সমালোচনা ও নানামুখী বক্তব্য আসে যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, হয়রানি করার জন্য তাদের অস্ত্র-গুলি দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। 

ছাত্রদলের নেতাদের অস্ত্রসহ গ্রেপ্তারকে ‘দুর্বল স্ক্রিপ্টের নাটক’ বলে অভিহিত করেছে সংগঠনটি। সংগঠনটি বলেছে, ছাত্রদল কলমের রাজনীতি করে, অস্ত্রের রাজনীতি করে না।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার(ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেছেন, অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার সাতজন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা বলে যদি কেউ বক্তব্য দেন, হয়রানির উদ্দেশ্যে অভিযান, এটা ঠিক না। ডিবি সত্যিকার অর্থে অস্ত্রধারী ও অস্ত্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করছে। এটা চলমান থাকবে। অস্ত্রধারীরা কোনো দলের হতে পারে না। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় বরং ছাত্রদলের ওই সাত কেন্দ্রীয় নেতাকে দলীয়ভাবে বহিষ্কার করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। 

সোমবার(২৮ আগস্ট) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।

গত ১৮ আগস্ট রাজধানীর আজিমপুর থেকে নিখোঁজ হন ছাত্রদলের ছয় নেতা। পরদিন তাদের গ্রেপ্তার দেখায় ডিবি পুলিশ। 

তারা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসান, ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সহসভাপতি মো. হাসানুর রহমান, অমর একুশে হল শাখা ছাত্রদলের সভাপতি আব্দুল্লাহ আল রিয়াদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহসাধারণ সম্পাদক আরিফ বিল্লাহ। 

পরে গত ২৪ আগস্ট কলবাগান থেকে ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আবুল হাচান চৌধুরীকে অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার দেখায় ডিবি পুলিশ।

এ প্রসঙ্গে হারুন বলেন, আমাদের ডিবি পুলিশের ৮টা টিমে অস্ত্র উদ্ধারে আলাদা টিম রয়েছে। সম্প্রতি অস্ত্র উদ্ধারে একটা অভিযান পরিচালনা করে ছয়জনকে অস্ত্র গোলাবারুদসহ গ্রেপ্তার করে গুলশান গোয়েন্দা বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় কলাবাগান থানা এলাকা থেকে অস্ত্র-গুলিসহ ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আবুল হাচান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এনিয়ে চারটি অস্ত্র উদ্ধার ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে ছাত্রদলের সাত কেন্দ্রীয় নেতাকে।

হারুন বলেন, তারা ফেসবুকে অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কথোপকথন করেছে, তার ছবি আমাদের কাছে রয়েছে। কোন কোন অস্ত্র কোথায় তারা ব্যবহার করবেন! মাসুম নামে একজন ঢাবি ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম জিসানকে বলেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল দখলে ব্যবহার করবেন বলেন কথোপকথনে উঠে এসেছে। 

হারুন বলেন, কোনো দলের নেতা বা কর্মীকে গ্রেপ্তার করা আমাদের উদ্দেশ্য না। তবে যারা চোরাকারবারি, সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা করবে তাদের বিরুদ্ধেই আমাদের অভিযান। যদিও অনেকেই বলার চেষ্টা করছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এটা রাজনৈতিক কথাবার্তা। আমরা আমাদের আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে অভিযান পরিচালনা করেছি। 

তিনি দাবি করেন, ছাত্রদলের গ্রেপ্তার নেতারা যে ১১টি অস্ত্র কেনার জন্য অস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে অর্ডার করেছে, সেটি প্রমাণিত।  

হারুন দাবি করে বলেন, সম্প্রতি গ্রেপ্তাররা হয়তো ছাত্রদলের নেতাকর্মী। কিন্তু এর আগেও তো শার্শা উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকে আমরা অস্ত্র সহ গ্রেপ্তার করেছি, বাড্ডা থানা অস্ত্র মামলায় আমরা নাসির, কাউসার, জীবনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি, তারা সবাই ছাত্রলীগের নেতা। কিছুদিন আগে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার হারুন ও রশিদ হত্যা মামলার আসামি আসাদুজ্জামানকে দুটি অস্ত্রসহ আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তখন তো কেউ প্রশ্ন তোলেনি? সম্প্রতি যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন তারা ছাত্রদলের বলে কেন তবে প্রশ্ন উঠছে? আমাদের উদ্দেশ্যটা রাজনৈতিক নয়। কে ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের সেটি আমাদের মুখ্য বিষয় নয়। মুখ্য বিষয় হচ্ছে, সে অস্ত্র ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, অস্ত্র ভাড়া করে মানুষের জীবনকে শেষ করার কাজ করছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিন্তে আমাদের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় আমরা করবো। তাড়াতাড়ি কোন দলের ছত্রছায়ায় এসব করে তাহলেও আমরা তাদের ছাড় দেবো না।

হারুন বলেন, গ্রেপ্তার ছাত্রদলের সাত নেতাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করে জেনেছি তারা ১১টি অস্ত্র অর্ডার করেছে। এর মধ্যে আমরা মাত্র চারটি উদ্ধার করতে পেরেছি। আরো ৭টি অস্ত্র এখনো উদ্ধার বাকি রয়েছে। সেগুলো উদ্ধার করে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। জিজ্ঞাসাবাদে আমরা অনেকের নাম পেয়েছি। তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

ছাত্রদলের গ্রেপ্তার নেতারা কেন অস্ত্র কিনছে? কোন কাজে ব্যবহারের তাদের উদ্দেশ্য ছিল? জানতে চাইলে ডিবি প্রধান বলেন, ১১টা অস্ত্র তারা অনলাইনে বুকিং করেছে, তার ছবি আমরা পেয়েছি। ১১টি অস্ত্র যাদের কাছ থেকে তারা সংগ্রহ করেছে, তাদের নামও আমরা জেনেছি।

বাকি অস্ত্রগুলো কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোথায় এবং কি কাজে তারা ব্যবহার করবে, সেগুলো আমরা জেনেছি। তবে তা আমরা এখনই বলছি না। আগে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। কক্সবাজার টেকনাফের নাম জেনেছি। এসব যাচাই করা হচ্ছে।  

সামনে নির্বাচন সামনে রেখে কি সহিংসতার উদ্দেশ্যে অস্ত্র কেনা? জানতে চাইলে হারুন বলেন, এটা তো পরিষ্কার। নির্বাচনের ডামাডোল বাজতে আর এক মাস বাকি। মানুষ ও রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছে। এ সময়ে ছাত্রদলের গ্রেপ্তার নেতারা ১১টি অস্ত্র সংগ্রহ করলেন বোমা বারুদ সংগ্রহ করলেন, মোবাইল ফোনে কথোপকথনে তারা হল দখলের কথা বললেন। কে ব্যবহার করবে সেটাও বললেন, বণ্টন করলেন? এটা কীসের আলামত? 

হারুন বলেন, আলামত যাই হোক না কেন, আমরা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের স্বার্থে, অবৈধ অস্ত্রধারীরা যারাই হোক না কেন, তারা যে দলই করুক না কেন, আমাদের ডিবি পুলিশের প্রত্যেকটি টিম প্রত্যেককে আইনগত প্রক্রিয়ায় গ্রেপ্তার করা হবে। তাদের রিমান্ডে এনে তাদের গডফাদারদের আমরা খুঁজে বের করবো ও আইনগত  পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। আমরা সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে চাই।

পুলিশকে দুর্বল মনে করে যদি ঢাকা শহরে কোনো অস্ত্র ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসীর চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায় ঢাকা শহরে ঘুরে বেড়াবে, আর ডিবির টিম বসে থাকবে, এটা হতে পারে না। আইনগত প্রক্রিয়া আমাদের যা যা করা দরকার আমরা তাই করবো। 

আর কেউ যদি অস্ত্র ব্যবসায়ীকে ধরার পরে পুলিশকে হুমকি দেয়, তাদের মনে রাখা উচিত, কারো হুমকিতে ডিবি পুলিশ ভয় পায় না। বরং আমরা যাদের নাম পেয়েছি তাদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অস্ত্রধারী কেউ দলের না। ১১টা অস্ত্রই আমরা উদ্ধার করবো।