রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল: সাড়ে ৪ বছরেও শেষ হয়নি ২৫০ শয্যার ভবন নির্মাণ, ব্যাহত সেবা
এদিকে, দিনদিন হাসপাতালটির আউটডোর ও ইনডোরে রোগীর চাপ বাড়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
প্রথম নিউজ, রাজবাড়ী: কাগজে-কলমে একশ থেকে আড়াইশ শয্যায় উন্নীত হলেও সাড়ে চার বছরে শেষ হয়নি রাজবাড়ীর সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ। ফলে পুরাতন ভবনগুলোতে স্বল্প জনবল নিয়েই চলছে চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম।
এদিকে, দিনদিন হাসপাতালটির আউটডোর ও ইনডোরে রোগীর চাপ বাড়ায় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। ফলে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। রোগী ও তার স্বজনদের দাবি, রোগীর চাপ বেশি থাকায় তারা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। দীর্ঘ সময় সিরিয়ালে থেকে আউটডোরে ডাক্তার দেখাতে হচ্ছে। তাছাড়া ওয়ার্ডেও ঠিকমতো সেবা পান না। নির্মাণাধীন আড়াইশ শয্যা ভবনের কাজ
রাজবাড়ীর পাঁচ উপজেলায় প্রায় ১১ থেকে ১৩ লাখ মানুষের বসবাস। জেলা সদরসহ উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও একটু জটিল বা কঠিন রোগী হলেই রেফার করা হয় ফরিদপুর অথবা ঢাকায়। এতে অন্যত্র যাওয়া ও চিকিৎসার খরচ বহন নিয়ে বিপাকে পড়েন নিম্নআয়ের পরিবারগুলো। ফলে সঠিক চিকিৎসা পেতে দ্রুত আড়াইশ শয্যার সেবা চালুর দাবি জনগণের। মূল ভবনের নিচ থেকে ছয় তলা পর্যন্ত কাজ হলেও প্লাস্টার, ফিটিংস, টাইলসসহ এখনো অনেক কাজ বাকি রয়েছে। সপ্তম ও অষ্টম তলার নির্মাণ কাজ চলছে। এছাড়া এখনো শুরু হয়নি লিফটের কাজ।
রাজবাড়ীর গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের মার্চে ৫৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজবাড়ীর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রথম পর্যায় অর্থাৎ নিচ থেকে ছয় তলা পর্যন্ত কাজটি বাস্তবায়ন করছে সালাম কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং দ্বিতীয় পর্যায় সপ্তম থেকে অষ্টম তলা পর্যন্ত করছেন মো. খলিল কনস্ট্রাকশন। এই ভবনে চারটি লিফটসহ রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য থাকবে আধুনিক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা।
রোগীদের অভিযোগ, তারা ভর্তি থাকলেও ঠিকমতো চিকিৎসক ও নার্সরা তাদের কাছে যান না। দিনে একবার ডাক্তার আসেন। আবার বন্ধের দিন কোনো ডাক্তার আসেন না। ফলে তারা কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না। এছাড়া হাসপাতালের টয়লেটসহ ওয়ার্ডের পরিবেশও ভালো না। ভবনের পাশের ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে তারা আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ঠিকমতো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয় না। হাসপাতালের সেবার মান বাড়াতে তারা যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, টিকিট কেটে হাসপাতালের আউটডোরে রোগী দেখানো আর যুদ্ধ করা সমান কথা। প্রতিটি চিকিৎসকের রুমের সামনে প্রচুর ভিড় থাকে। কিন্তু পর্যাপ্ত ডাক্তার নেই। দীর্ঘ সময় সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে ডাক্তার দেখাতে হয়। এতে রোগীসহ তাদের অনেক কষ্ট হয়। আবার রোগীদের লম্বা লাইন থাকায় কোনোরকম দেখে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাই দ্রুত আড়াইশ শয্যার সেবা চালুর দাবি জানিয়েছেন তারা।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান বলেন, এই হাসপাতালটি প্রথমে ৫০ থেকে ১০০ শয্যা এবং পরবর্তীতে আড়াইশ শয্যায় উন্নীত করা হয়। বর্তমানে আড়াইশ শয্যার কাজ চলমান রয়েছে। এই ভবনটি প্রায় এক বছর আগে আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো বুঝে পাইনি। তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন আউটডোরে প্রায় ১২ থেকে ১৩০০ রোগী আসে। যা ১০০ শয্যার হাসপাতালে জায়গা দেওয়া কষ্টকর। তাছাড়া সব রোগের ডাক্তারও নেই। যার কারণে সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দ্রুত ২৫০ শয্যার ভবন বুঝে পেলে রোগীদের সন্তোষজনক সেবা দিতে পারবো। কারণ, তখন প্রতিটি বিভাগে একাধিক ডাক্তার পাবো। এখন যেসব রোগীকে ফরিদপুর বা ঢাকায় পাঠাতে হয় তখন তাদের এখানেই চিকিৎসা দিতে পারবো।
রাজবাড়ী গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, মূল ভবনটি দুইটি প্যাকেজের কাজ চলমান আছে। একটি নিচ থেকে ছয়তলা এবং অন্যটি সাত থেকে আটতলা পর্যন্ত। প্রথম প্যাকেজের প্রায় ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এবং নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুনের আগেই সম্পূর্ণ কাজ শেষ করে হস্তান্তর করতে পারবো। তিনি বলেন, এই ভবনে জরুরি বিভাগ, প্যাথলজি, এক্সরে, এমআরআই, অপারেশন থিয়েটার, কেবিন, ডক্টরস রুম, ক্যান্টিনসহ প্রায় সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। পাশাপাশি রোগীদের ওঠা-নামার জন্য আলাদা আলাদা লিফটও থাকবে।
প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান আরও বলেন, এখন পর্যন্ত একবার কাজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। কাজের গুণগত মান ভালো হচ্ছে। প্রতিনিয়ত আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।