প্রতিদিন আড়াই লাখ ডাব আসে ঢাকায়
প্রথম নিউজ, ঢাকা : রাজধানীতে ডেঙ্গু রোগীদের অন্যতম পথ্য ডাবের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা একে অপরকে দুষলেও এর প্রকৃত কারণ ও প্রতিকার খুঁজতে তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার অধিদপ্তর। আলোচনায় দাম বৃদ্ধির দায় যায় ডেঙ্গুর ওপর।
ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণে ডাবের চাহিদা আগের চেয়ে অনেক বেশি। যোগান কম থাকায় দামও বেড়েছে।
অপরদিকে ব্যবসায়ীদের ব্যাখ্যায় নাখোশ ভোক্তা অধিদপ্তর, ডাবের দাম বাড়ার প্রকৃত কারণ যাচাই ও বাজার তদারকি করতে মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) থেকে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে ভোক্তার এই সংস্থা।
সোমবার (২৮ আগস্ট) জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিকার অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সভায় ডাব ব্যবসায়ী ও ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তাদের বৈঠক শেষে এসব বিষয় উঠে আসে।
সভায় দাম বাড়ার সপক্ষে যুক্তি দিয়ে আড়ৎদাররা জানান, সারাদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ঢাকায় প্রায় প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ পিস ডাব আসে। কেনা মূল্য ও পরিবহন খরচসহ ডাব আড়ৎদারের ঘরে পৌঁছাতে প্রতি পিসে অন্তত ৮০ থেকে ৮৫ টাকা গুণতে হয়। পরবর্তীতে তারা খরচ ও লাভ রেখে সাইজ ভেদে পিস ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি করেন। আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বিক্রি করেন প্রতি পিস ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত।
খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রতি পিস ডাবে ১০-১৫ টাকা করেন দাবি করে বলেন, আমরা সাইজ ভেদে আড়ৎ থেকে ডাব কিনে থাকি। ভালো মানের ডাবগুলো গত দুমাস আগে কিনেছি প্রতিটি ৮০ টাকা দরে। বর্তমানে সেগুলো কিনতে হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায়। এগুলোতে আমাদের সব খরচ রেখে বিক্রি করি ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা। এতে আমাদের সর্বোচ্চ ১০-১৫ টাকা লাভ থাকে।
সভায় উপস্থিত কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভুঁইয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের বাজারে ৮০ শতাংশ ব্যবসায়ী অসৎ। এটা কিভাবে হতে পারে? আপনাদের লজ্জাও নাই। আপনারা দেশের বারোটা বাজাচ্ছেন, ভোক্তাদের বারোটা বাজাচ্ছেন। আপনার এটা করবেন না প্লিজ।’
তিনি বলেন, ‘বাজারে গিয়ে মানুষ কিছু কিনতে পারছে না। যদি ভোক্তারা মরে যায় তাহলে আপনাদের ব্যবসা থাকবে না। সব ক্ষেত্রে অরাজকতা চলছে, এভাবে অরাজকতা চলতে দেওয়া যাবে না।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘ব্যবসা করলে অবশ্যই লাভ করবেন। তবে একটা উপলক্ষ সামনে এনে দাম বাড়িয়ে দেবেন—সেটা হতে পারে না। ৪০০ টাকা দিয়ে বাংলাদেশের দুটি ডাব কিনতে হবে, আমরা কি সেই পর্যায়ে পৌঁছে গেছি?’
তিনি বলেন, ‘ডাব তো জাহাজে করে বিদেশ থেকে ইমপোর্ট করতে হয় না কিংবা ডলারে পেমেন্ট করে আনতে হয় না। তাহলে দাম এত বাড়বে কেন?। ডেঙ্গুকে পুঁজি করে আপনারা প্রতিটি বাজার জিম্মি করছেন। এভাবে চলতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভাবতে পারিনি ডাবের জন্য আমাকে এখানে বৈঠক করতে হবে। আগামীকাল থেকে ডাবের দাম বৃদ্ধির বিরুদ্ধে তদারকি করা হবে। আমি আমার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে দেব, তারা সারাদেশের বাজারে গিয়ে দেখবে আপনাদের ট্রেড লাইসেন্স আছে কিনা, টিন নাম্বার আছে কিনা? আপনারা ভ্যাট-ট্যাক্স ঠিকঠাক দিচ্ছেন কিনা। আপনারা অবশ্যই আপনাদের ভাউচার রাখবেন। যাদের ভাউচার নেই তাদের আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দেওয়া হবে। এরমধ্যে আপনারা এটি করে নেবেন।’