বেসরকারি খাতে নতুন চ্যালেঞ্জ দেখছেন এফবিসিসিআই
সম্ভাবনার পাশাপাশি বেশকিছু চ্যালেঞ্জও অপেক্ষা করছে বেসরকারি খাতের জন্য, যা মোকাবিলায় বেসরকারি খাতকে এখনই প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
প্রথম নিউজ, অনলাইন: স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বাড়বে। ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন নতুন পথ উন্মুক্ত হবে, বাড়বে বিদেশি বিনিয়োগও। তবে এসব সম্ভাবনার পাশাপাশি বেশকিছু চ্যালেঞ্জও অপেক্ষা করছে বেসরকারি খাতের জন্য, যা মোকাবিলায় বেসরকারি খাতকে এখনই প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। বুধবার রাজধানীর রাওয়া কনভেনশন হলে এফবিসিসিআই’র বার্ষিক সাধারণ সভায় এই আহ্বান জানান মো. জসিম উদ্দিন। করোনা সংক্রমণজনিত কারণে ২০২০-২১ সেশনের বার্ষিক সাধারণ সভা নির্ধারিত সময়ে আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। ফলে বুধবার একই ভেন্যুতে পৃথকভাবে ২০২০-২১ এবং ২০২১-২২ সালের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের ফলে অন্যতম রপ্তানি গন্তব্য ইউরোপসহ বেশকিছু বাজারে বিশেষ বাণিজ্য সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। পণ্যের মূল্য ও মানের দিক থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হবে বেসরকারি খাতকে। এজন্য গবেষণা, উদ্ভাবন এবং পণ্য বৈচিত্র্যকরণে জোর দেয়ার পক্ষে মত দেন তিনি। এ সময় রপ্তানি বাণিজ্যকে টেকসই করতে সরকারকে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ), প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ)-সহ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তির উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বিভিন্ন দপ্তরের সনদপ্রাপ্তি এবং এর নবায়নে জটিলতা কমানো, অটোমেশন কার্যকর এবং বন্দর ব্যবস্থাপনার সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন এফবিসিসিআই সভাপতি।
বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতির বক্তব্যে মো. জসিম উদ্দিন বলেন, কোভিড পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া সংকটের ফলে খাদ্য, কৃষিপণ্য, শিল্পের কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশসহ পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিক বেড়েছে। উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে মুদ্রা বিনিময় হারেও। ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়ায় বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের পক্ষে। এমন বাস্তবতায়, প্রতিযোগী মূল্যে পণ্য উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়াতে-প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, দক্ষকর্মী তৈরি এবং ব্যবসা পরিচালনায় দক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
এফবিসিসিআইয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের জন্য আগামী বছরের মার্চ মাসে তিনদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে বিনিয়োগবান্ধব সমৃদ্ধির দেশ হিসেবে ব্র্যান্ডিং করতে আমরা দুই দিনব্যাপী ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সামিট করতে যাচ্ছি। তৃতীয় দিনে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুক্তিযোদ্ধা এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের সম্মাননা প্রদান করা হবে। এসময় বাংলাদেশি স্থানীয় পণ্য ও সেবাকে বিশ্বব্যাপী তুলে ধরার জন্য তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক মেলা ‘বেস্ট অব বাংলাদেশ’ আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি।
চলমান পরিস্থিতিতে, উৎপাদনশীলতা অব্যাহত রাখতে জেলা চেম্বার এবং এসোসিয়েশনগুলোকে সক্রিয় থাকার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। একই সাথে খাতভিত্তিক সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা এফবিসিসিআই -এর মাধ্যমে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তুলে ধরার পরামর্শ দেন মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, সরকারের ভিশন ২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ বাস্তবায়নে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি, আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থা এবং গ্রিন ইকোনোমি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে বেসরকারি খাত। এ জন্য গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর বিশেষ জোর দেন তিনি।
মো. জসিম উদ্দিন আরও বলেন, ২০২৬ এ এলডিসি গ্রাজুয়েশন, ২০৩০ এর এসডিজি অর্জনসহ সরকারের ৮ থেকে ৯টি লক্ষ্যের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা সরাসরি জড়িত। তাই উন্নত দেশ গড়তে আগামী বাজেটে এফবিসিসিআইর সুপারিশসমূহকে আরও বেশি গুরুত্ব দেয়াসহ ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা দরকার বলে মন্তব্য করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। এছাড়া দেশে আমদানির পরিমাণ কমিয়ে এনে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর জন্য শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে বুধবার রাজধানীতে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করায় এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদ এবং সাধারণ পরিষদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। মেট্রোরেল রাজধানীর গণপরিবহনে নতুন মাত্রা যোগ করার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এসময় এফবিসিসিআই প্রতিষ্ঠার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আগামী বছর অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩ এর লোগো ও ওয়েবসাইট উন্মোচন করা হয়। সভায় এফবিসিসিআই'র বার্ষিক প্রতিবেদন, কার্যবিবরণী, অডিট রিপোর্ট সর্বসম্মতিক্রমে অনুমোদিত হয়।
সভায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ, সাবেক প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী, মনোয়ারা হাকিম আলী, সাবেক সহসভাপতি আবু আলম চৌধুরী, দেওয়ান সুলতান আহমেদ, হেলাল উদ্দিন প্রমুখ। এসময় এফবিসিসিআই’র সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সহ-সভাপতি মো. আমিনুল হক শামীম, মো. আমিন হেলালী, সালাউদ্দীন আলমগীর, মো. হাবিব উল্লাহ ডন, এম এ রাজ্জাক খান, পরিচালকবৃন্দ ও সাধারণ পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:
https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en
https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews