বিজয়ের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে: ১২ দলীয় জোটের গণমিছিলে বক্তারা

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরে এক গণমিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বিজয়ের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে: ১২ দলীয় জোটের গণমিছিলে বক্তারা

প্রথম নিউজ, ঢাকা: সরকারের পদত্যাগ এবং বিজয়ের প্রতিধ্বনি পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। তারা বলেন, অবিলম্বে বর্তমান সরকারকে বিদায় নিতে হবে। তাছাড়া দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বিজয়নগরে এক গণমিছিল পূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। পরে শেখ হাসিনা'র পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে  দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্কি সংলগ্ন সড়ক থেকে এক গণমিছিল অনুষ্ঠিত হয়। ১২ দলীয় জোট প্রধান জাতীয় পার্টির (জাফর) সভাপতি সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জোটের মুখপাত্র কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক এবং সার্বিকভাবে সমন্বয় ও সমাবেশ উপস্থাপনা করেন জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব এ এস এম শামীম। 

মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির নেতৃত্বে চলমান সরকার পতনের আন্দোলনে বিএনপিসহ অন্যান্য দল ও জোটের যুগপৎ কর্মসূচির আওতায় আজকের এই গণমিছিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশ এবং দুনিয়া দেখছে দেশের সিংহভাগ মানুষ শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ ও মিছিলের মাধ্যমে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে রাজপথে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত জনগণের ভোটের অধিকারের দাবিতে আন্দোলন চলবে।

সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, বিদেশীদের ওপর ভরসা করে হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো বাস্তব নয়। সবাইকে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। আজকে দেশে ব্যাংক লুটপাট চলছে। সরকার অর্থনীতিতে ডাকাত ও চোর। দেশের ছয়টি ব্যাংক থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। এদের তো ফাঁসি হওয়া উচিত। তাহলে আর পদত্যাগ করা লাগবেনা। আমরা এই দাবি আদায় পর্যন্ত রাজপথে আছি এবং থাকবো।

অন্য নেতৃবৃন্দ বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ ও সংসদ ভেঙে দিয়ে তত্ববধাযক সরকার গঠনের পক্ষে সমগ্র জাতি আজ ঐক্যবদ্ধ। দেশবাসী আজ তত্বাবধায়ক সরকারের অপরিহার্যতা অনুধাবন করতে পারছে। সবাই জানে, সবাই বলছে এই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। এই সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালে পুরো দেশবাসী এবং দুনিয়াকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে হাসিনা সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।  
তারা বলেন, বিনা ভোটের অবৈধ সরকার জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে দেড় দশক ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতাকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ভূলুণ্ঠিত করে দেশকে লুটপাটের স্বর্গ বানিয়েছেন। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে অকার্যকর করে ফেলেছে। 
বিরোধী দলের উপর হামলা মামলা দমন-পীড়ন খুন গুম করে প্রতিপক্ষ নিধনে নিষ্ঠুরতম ভূমিকা পালন করেছে।জাতি অবিলম্বে এই ক্ষমতালিপ্সু অবৈধ সরকারের পদত্যাগ চায়। গায়ের জোরে  ক্ষমতা দখলকারী এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগই পারে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে।
বক্তারা আরও বলেন, এটা আজ প্রমাণিত সত্য যে, আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন বা ক্ষমতা পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য  দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।একমাত্র তথাকথিত সাংবিধানিক উপায় হিসেবে বিবেচনা করছে। জনগন আওয়ামী সরকারের এই দূরভিসন্ধি কিছুতেই বাস্তবায়ন হতে দেবে না। প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে আবারও রাষ্ট্রক্ষমতা ধরে রাখার নীলনকশা নিয়ে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ভোটের আশীর্বাদ নিতে মামার বাড়ি শক্তিশালী রাজনৈতিক টীম গেছে। তবে কোনোভাবেই জনগণ আর ২০১৪ ও ২০১৮ নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি হতে দেবে না।নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে গড়ে ওঠা জাতীয় ঐকমত্য ধরে রেখে আমরা ১২ দলীয় জোট বিএনপি নেতৃত্বে যুগপৎ আন্দোলনে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা পর্যন্ত রাজপথে আছি এবং থাকবো। নির্দলীয় সরকার গঠন করে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করবো ইনশাআল্লাহ।

সমাবেশ ও গণমিছিলে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম এর মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় দলের মহাসচিব রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) এর চেয়ারম্যান শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাশেদ প্রধান, ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, বাংলাদেশ জাস্টিস পার্টির চেয়ারম্যান ড. জাভেদ মো. সালেউদ্দিন সহ ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। গণমিছিল শান্তিনগর মোড়ে গিয়ে শেষ হয়।