ফরিদপুরে শ্রমিক লীগ নেতার অফিসে বিএসপির কার্যালয়, অস্তিত্ব নেই বিএনএমের

বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) নামে দুটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

ফরিদপুরে শ্রমিক লীগ নেতার অফিসে বিএসপির কার্যালয়, অস্তিত্ব নেই বিএনএমের

প্রথম নিউজ, ফরিদপুর: বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) নামে দুটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে নতুন করে নিবন্ধন পেতে যাওয়া এই দুই দলের মধ্যে ফরিদপুরে বিএসপির একটি কার্যালয়ের অস্তিত্ব মিলেছে। আর বিএনএমের কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। স্থানীয় অনেকেই বলছেন, তারা আগে কখনোই এমন দলের নাম শোনেননি।

খবর নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধন পেতে ৯৩টি দল আবেদন করেছিল। এর মধ্যে বিএসপি ও বিএনএমকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ইসি। নতুন রাজনৈতিক দল বিএসপির ফরিদপুরের কমিটিতে সবাই মাইজভাণ্ডারী তরিকার অনুসারী। তিন বছর আগে কাগজে-কলমে কমিটি গঠন করা হলেও মাস তিনেক আগে স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা আক্কাস হোসেনের চেম্বারে বিএসপি ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের সাইনবোর্ডটি টাঙানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

দেখা যায়, ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকার মহিম স্কুলের মোড় সংলগ্ন মৌ সুপার মার্কেটের একটি গলির মাথায় নতুন রাজনৈতিক দল বিএসপির কার্যালয়ের একটি সাইনবোর্ড ঝুলছে। মার্কেটটির মালিক ফরিদপুর শ্রমিক লীগের একাংশের সভাপতি আক্কাস হোসেন। সেখানে ওই শ্রমিক লীগ নেতার একটি নিজস্ব অফিস রয়েছে। ওই অফিসটিতেই এখন সুপ্রিম পার্টির দলীয় কার্যালয় হিসেবে কার্যক্রম চালু রয়েছে বলে তাদের দাবি।

জানতে চাইলে শ্রমিক লীগ নেতা আক্কাস হোসেন বলেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) ফরিদপুর জেলা কমিটির সভাপতি খলিফা শফিউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক হারেজ মোল্লা। ২০২১ সালে গঠন করা কমিটিতে যারা আছেন তারা সবাই মাইজভাণ্ডারী তরিকার অনুসারী। আমি নিজেও মাইজভাণ্ডারী তরিকার সঙ্গে জড়িত। যে কারণে তারা আমার অফিসে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছে। তবে আমি ওই কমিটি কিংবা নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নই।

বিএসপি ফরিদপুরের সভাপতি খলিফা শফিউদ্দিন বলেন, তিন বছর আগে ফরিদপুরে ৪১ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। সেই থেকে আমি সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। দলের প্রধান চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি এলাকার বাসিন্দা বাবা সাহেবউদ্দিন। আপাতত ওখানে অস্থায়ীভাবে অফিস নিয়ে দলীয় কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। পরবর্তীতে আলাদাভাবে অফিস নিয়ে নিয়মিত কার্যক্রম চালানো হবে। আমাদের কমিটি ও রাজনৈতিক কার্যক্রম সচল রয়েছে। তিনি আরও বলেন, জামায়াতের চাপে আমরা একটু কোনঠাসা অবস্থায় আছি। নিজেদের শক্তি অর্জন করার জন্য আমাদের এ নতুন রাজনৈতিক দল করা।

বিএনএম ও বিএসপির বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদপুর শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ছাত্রনেতা মো. মনিরুজ্জামান মনির জাবলেন, এমন দলের নামই কখনো শুনিনি। ফরিদপুরে তাদের কোনো কর্মকাণ্ড এ পর্যন্ত চোখে পড়েনি। এটা একটা নামসর্বস্ব দল। অসৎ উদ্দেশ্য অথবা রাজনীতিকে ব্যবসা হিসেবে নিতে তারা এ দল করছে। তবে ফরিদপুরে তাদের কোনো অস্তিত্ব নেই।

এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোদারেস আলী ইছা বলেন, এমন কোনো রাজনৈতিক দলের নামই শুনিনি। এই প্রথম শুনলাম। ফরিদপুরে এমন কোনো দলের অফিস, কমিটি বা তাদের কার্যক্রম আজ পর্যন্ত আমি কেন কোনো মানুষের চোখেই পড়েনি। এক কথায় তাদের কোনো অস্তিত্ব ফরিদপুরে ছিল না বা এখনো নেই। এ বিষয়ে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামিম হকের বক্তব্য জানতে কল করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে নির্বাচন কমিশন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) নামে দুটি নতুন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন তথ্য চাওয়া হয়। তদন্ত করে ফরিদপুরে বিএসপির অস্তিত্ব মিলেছে। কিন্তু বিএনএম নামে কোনো রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।