Ad0111

ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বিএনপি

দলটির নীতিনির্ধারকরা অতীতের ‘তিক্ত অভিজ্ঞতার’ কথা তুলে ধরে বলেছেন, এই সংলাপ ‘আইওয়াশ’ ও ‘স্পষ্ট প্রতারণা’ ছাড়া কিছুই নয়। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন কমিশন কার্যত ঠুটো জগন্নাথ। দলীয় সরকারের প্রভাব বলয়ের বাইরে গিয়ে ওই কমিশন কস্মিনকালেও কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না।

ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বিএনপি
ফাইল ছবি

প্রথম নিউজ, ঢাকা: নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে রাষ্ট্রপতির সংলাপের উদ্যোগকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বিএনপি। দলটির নীতিনির্ধারকরা অতীতের ‘তিক্ত অভিজ্ঞতার’ কথা তুলে ধরে বলেছেন, এই সংলাপ ‘আইওয়াশ’ ও ‘স্পষ্ট প্রতারণা’ ছাড়া কিছুই নয়। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন কমিশন কার্যত ঠুটো জগন্নাথ। দলীয় সরকারের প্রভাব বলয়ের বাইরে গিয়ে ওই কমিশন কস্মিনকালেও কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে পারবে না।
এ কারণে বিএনপি আগামীকাল সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপের চাইতে ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার’ ইস্যুতেই অনড় থাকতে চায়। জানা গেছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যেই নিয়ে রেখেছে দলটি। এই দাবি আদায়ে রাজপথে সময়মতো ‘কার্যকর’ পদক্ষেপও নিতে চায় তারা।

আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। ২০১৬ সালে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের মধ্য দিয়ে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন এই কমিশন গঠন করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো: আব্দুল হামিদ। কিন্তু এই ইসি নিয়ে বিতর্কের কোনো শেষ নেই। গত কয়েক বছরে সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ে অনুষ্ঠিত একটি নির্বাচনও বিতর্কের ঊর্ধ্বে ছিল না। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচন মহাবিতর্কের জন্ম দেয়। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ওই নির্বাচন সম্পূর্ণভাবেই ইসির নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো রাষ্ট্রপতির ডাকা সংলাপে বিএনপি যাবে না। আমি মনে করি দলেরও এই সিদ্ধান্ত। 
তিনি বলেন, ২০১৬ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি রাষ্ট্রপতির ডাকা সংলাপে গিয়ে বর্তমান সর্বনিকৃষ্ট নির্বাচন কমিশন পেয়েছে। আর ২০১৮ সালে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সংলাপে গিয়ে নিকৃষ্ট সব নির্বাচন পেয়েছে। এতে প্রমাণিত হয়, নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা ছাড়া এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করা যাবে না।

বিএনপির নেতারা বলছেন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনায় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের যে কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে ছিলেন, তাদের বেশির ভাগ এখন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। দলীয় সরকারকে ক্ষমতায় রেখে ওইসব কর্মকর্তার অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ফলাফল কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়। দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সংলাপে অংশ নিলে তা দলের নেতাকর্মী ও অন্যান্য বিরোধী দলের কাছেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
রাষ্ট্রপতির সংলাপে অংশ না নেয়ার বিষয়টি গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে আসছিল। জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সভায় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী নির্বাচনে এই রেজিমের অধীনে অংশগ্রহণ করবে না। শুধু তা-ই নয়, কোনো আলোচনায় বিএনপি যাবে না। কারণ আমরা আলোচনা করেছি, অংশগ্রহণও করেছি। তার ফলাফল বাংলাদেশের মানুষ পেয়েছে।’

গুলশানে চেয়ারপারসনের অফিসে সাংবাদিকদের সাথে সম্প্রতি এক মতবিনিময়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্য ছিল-‘আমাদের অবস্থান খুব স্পষ্ট, এই সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমরা যাব না। নির্বাচন কমিশন গঠনে কোনো সংলাপে বিএনপি যাবে না।’
তবে রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপে অংশগ্রহণের বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি বিএনপি। আমন্ত্রণপত্র পেলে দলটি সেই সিদ্ধান্ত জানাবে বলে জানিয়েছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, অতীতে রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে এমন সংলাপ করেছেন। এরপর সার্চ কমিটিও করেছেন।
কিন্তু এসবের ইতিবাচক কোনো ফল পাওয়া যায়নি। সংলাপ ও সার্চ কমিটির মাধ্যমে যে কমিশন গঠন করা হয়েছিল তারা পুরোপুরি সরকারের আজ্ঞাবহ ছিলেন। তাদের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট হয়নি। তাই ইসি গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির সংলাপের প্রতি মানুষের কোনো আগ্রহ নেই। তারা (জনগণ) মনে করছেন সংলাপসহ যা কিছুই হোক শেষ পর্যন্ত সরকারের ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কিছুই করা সম্ভব হবে না।

ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, এই মুহূর্তে আমরা নতুন ইসি গঠনকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছি না। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার। এটা না হলে কোনো নির্বাচন কমিশনের পক্ষেই অবাধ নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। তাই দেশবাসীর একমাত্র দাবি হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার।

দলটির কোনো কোনো নেতা অবশ্য এও বলেছেন, এই মুহূর্তে বিএনপির মূল কনসার্ন হচ্ছে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে তার উন্নত চিকিৎসার বিষয়টি। সংলাপের মধ্য দিয়ে এ বিষয়টি সামনে আসবে কিনা, এ প্রসঙ্গটিও উড়িয়ে দেয়া যায় না।
উল্লেখ্য, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বিএনপি প্রধানের বিদেশে যাওয়ার বিষয়টিতে রাষ্ট্রপতির কাছে যাওয়ার স্পষ্টত পরামর্শ রয়েছে।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom

 

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow

This site uses cookies. By continuing to browse the site you are agreeing to our use of cookies & privacy Policy from www.prothom.news