সিন্ডিকেটে জিম্মি বুড়িমারী স্থলবন্দর
একইসঙ্গে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে জৌলুস হারাচ্ছে বন্দরটি। সব সেক্টরে এ অরাজকতার কারণে দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
প্রথম নিউজ,বগুড়া: চাঁদাবাজ-সিন্ডিকেটে জিম্মি দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বুড়িমারী স্থলবন্দর। একইসঙ্গে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে জৌলুস হারাচ্ছে বন্দরটি। সব সেক্টরে এ অরাজকতার কারণে দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। বিদেশ গমনকারীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে আশঙ্কাজনকভাবে। গুরুত্বপূর্ণ এ বন্দর দিয়ে ত্রিদেশীয় বাণিজ্য বাড়ার সুযোগ থাকলেও শুল্ক আদায়ে লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। অভিযোগ রয়েছে সরকার রাজস্ব বেশি পাবে এমন পণ্য আমদানিতে ব্যবসায়ীদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
২০১০ সালে এ শুল্ক স্টেশনটিকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হলেও এখনো পূর্ণাঙ্গতা পায়নি। ভাড়া করা ভবনে কার্যক্রম চালাতে হয়। উত্তরাঞ্চলের একমাত্র এ বন্দরটির সঙ্গে বাংলাদেশের ত্রিদেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্য হয়। এ পথে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, ভুটান ও নেপালের ব্যবসা হয়। তাই বন্দরটি মূলত ত্রিদেশীয় বন্দর হিসেবে স্বীকৃত।
এ বন্দর দিয়ে আমদানি হচ্ছে ডলোমাইন পাউডার, স্টোন বোল্ডার, ক্রাশ স্টোন, কসমেটিক, স্যান্ডেল, প্লাউড, মসলা, পাটবীজ, মেশতাবীজ, লাইম স্টোনলাম, ট্যালকম পাউডার, মসুর ডাল, আপেল, কমলা, পেঁয়াজ, শুকনা মরিচ, শুঁটকি, ভাংড়ি লোহা, খুচরা যন্ত্রপাতি ও নানা মৌসুমি ফল। রফতানি হয় দেশে উৎপাদিত ঝুট কাপড়, গার্মেন্ট কাপড়, তুলা, প্লাস্টিক পণ্য, জুস, ইলেট্রনিক্স, মেলামাইন ও ওষুধ সামগ্রী।
স্থলবন্দরটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের একটি সিন্ডিকেট তাদের মতো করে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছে। এখন কাস্টমসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা, আমদানি-রপ্তানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে চলছে রাজস্ব ফাঁকির মহোৎসব। সরকার কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। স্বাভাবিক কারণেই প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের অর্জিত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হচ্ছে না।
একাধিক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অভিযোগ করে বলে, বর্তমানে এ বন্দরে রাজস্ব কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো শুল্ক কর্তৃপক্ষ থেকে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা না করা। পাথর ছাড়া কোনো পণ্য আমদানি করা হলে কাস্টমস কর্মকর্তারা সহযোগিতা না করে উল্টো হয়রানি করেন। নির্দিষ্ট অংকের টাকা ঘুস না দিলে দিনের পর দিন পড়ে থাকে গাড়ি। শেষ পর্যন্ত কোনো রকমে মালামাল ছাড় করা গেলেও ভুক্তভোগীরা পরে এ বন্দর আর ব্যবহার করতে চান না।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সায়েদুজ্জামান বলেন, দিনের পর দিন হয়রানিতে আমরা অতিষ্ঠ। সরকারের রাজস্ব আদায় বেশি হয় এমন পণ্য (ইমিটেশন, কাপড়, মসলা, জিরা, চা-পাতা, মোটর পার্টস, ইলেকট্রিক সরঞ্জাম) এ বন্দর দিয়ে নিয়ে এলেই খুলে যায় কাস্টমসের হয়রানির খাতা। যাচাই-বাছাইয়ের নামে তারা মালামাল ফেলে রাখে দীর্ঘ সময়। আবার চাহিদামতো ঘুস দিলে ফাইল দৌড়ায় বিদ্যুৎগতিতে। নিয়ম ভেঙে অতিরিক্ত ভ্যালু ট্যাক্স আদায়ের বিষয়তো রয়েছেই। তিনি বলেন, কাস্টমসের সুপারিনটেনডেন্ট থেকে শুরু করে ইন্সপেক্টর পর্যায়ের অফিসাররা এই অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত। আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানালে তারা সরাসরি বলে ‘রাজস্ব যা আদায় হয় হোক, আমরা ভাগ ঠিকমতো না পেলে ফাইল ছাড়া হবে না।’
তবে বন্দর কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার আব্দুল আলিম এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের একটি অংশ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে অনৈতিক কাজে জড়িত। এরা অতিরিক্ত সুবিধা না পেলে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ করেন। তবে তিনি স্বীকার করেন যে, তার অধীনস্ত কিছু কর্মকর্তা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সুবিধা নেন। এটা কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, বুড়িমারী স্থলবন্দর ও ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দরে যৌথ শক্তিশালী আন্তঃদেশীয় একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে উভয় দেশের সিন্ডিকেট সদস্যরা আমদানি-রপ্তানি করে রাজস্ব ফাঁকির টাকা নিয়মিত ভাগবাটোয়ারা করে। বুড়িমারী স্থলবন্দরের বেশ কিছু সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট দীর্ঘদিন এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত।
প্রথমে একটি আমদানিকৃত পণ্যের ট্রাক বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রবেশের পর বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ হয়ে নির্ধারিত ওজন স্টেশনে নেওয়া হয়। সেখানে কম্পিউটার পদ্ধতির মাধ্যমে ওজন পরীক্ষা করা হয়। সরকারি বিধিমোতাবেক ওজন স্টেশনে শুল্ক গোয়েন্দা, কাস্টমস, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ ও আমদানিকারকের প্রতিনিধি হিসেবে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের লোকজন উপস্থিত থাকেন। এখানেই সমঝোতার ভিত্তিতে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী আমদানি করা পণ্যের ওজন ফাঁকি দিয়ে কম দেখানো হয়। এরপর আমদানি করা পণ্যের ওপর কাস্টমস কর্তৃক রাজস্ব আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত বিল অব এন্ট্রি প্রস্তুত করে উপস্থাপন করে। এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই অতিরিক্ত পণ্যের রাজস্ব ভাগবাটোয়ারা করে নেওয়া হয়। অতিরিক্ত পণ্যের লোডিং-আনলোডিং কার্যক্রমের চার্জ (মাশুল) স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সরকারি হিসাবের খাতায় জমা হয় না।
আমদানি-রপ্তানি পণ্যের দ্রুত ছাড়পত্র নেওয়া ও হয়রানি থেকে রেহাই পেতে আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়েই বিল অব এন্ট্রির বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা উৎকোচ দেন। এই উৎকোচকে তাদের ভাষায় ‘স্পিড মানি’ বলা হয়। আবার পাথরের কোয়ালিটি পরীক্ষা-নীরিক্ষার নামে প্রতি মেট্রিক টনে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। এক্ষেত্রে ইয়ার্ড থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট করে ছাড়পত্র দেওয়ার নিয়ম থাকলেও বুড়িমারী স্থলবন্দরে কোনো ট্রান্সশিপমেন্ট নীতিমালা মানা হয় না। এখানে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ট্রান্সশিপমেন্ট ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। জালিয়াতি করে রাজস্ব ফাঁকি দিতে পণ্য আমদানির পর এইচএস কোড জালিয়াতির করে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়।
বাণিজ্য বাড়ছে, আদায় কমছে: বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুসারে বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৪৩ লাখ ৯২ হাজার ৯০৭ মেট্রিক টন পণ্য। বিপরীতে এদেশ থেকে রপ্তানি হয়েছে ৮ হাজার ৭০৪ ট্রাক পণ্য। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৭০ লাখ ৪৮ হাজার ৮৩৮ মেট্রিক টন, রপ্তানি হয়েছে ১১ হাজার ৩৩৩ ট্রাক, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৮২ লাখ ২৯ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন, রপ্তানি হয়েছে ১৩ হাজার ৮০৬ ট্রাক, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৩২ লাখ ৮৪ হাজার ৪৭৬ মেট্রিক টন, রপ্তানি হয়েছে ১১ হাজার ৪৮ ট্রাক, ২০২০-২১ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৪৬ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন, রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৯০০ ট্রাক ও সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি হয়েছে ৩৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৬৩ মেট্রিক টন, রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৩৫৮ ট্রাক পণ্য।
এই বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানি প্রতিবছর বাড়লেও শুল্ক বিভাগ রাজস্ব আদায়ে তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারছে না। বুড়িমারী শুল্ক স্টেশনের তথ্য অনুসারে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫২ কোটি টাকা, আদায় হয়েছিল ৪০ কোটি ৬৫ লাখ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ৫০ কোটির বিপরীতি আদায় হয়েছিল ৬৮ কোটি ৫৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ৯৪ কোটি ৪১ লাখ ৮৮ হাজারের বিপরীতে আদায় হয় ৭৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ১০৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫৬ কোটি ৭২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ১১৩ কোটি ৮০ লাখের বিপরীতে আদায় হয়েছে ১১১ কোটি ১১ লাখ ৩১ হাজার টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ১৩৭ কোটি ৮৩ লাখের বিপরীতে আদায় হয়েছে ৯১ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার টাকা। আর সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৩১ কোটি ৮২ লাখ এবং আদায় হয়েছে ৯৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
পণ্যবাহী ট্রাকের জট
জায়গা সংকুলান না হওয়ায় এ বন্দরে সব সময়ই পণ্যবাহী ট্রাকের জট দেখা যায়। বন্দরের মধ্যে বেশ কিছু অংশের মাটি দেবে গর্ত সৃষ্টি হলে সেগুলো এখন মেরামত করা হচ্ছে। বাকি জায়গায় ট্রাকের বহর লেগেই থাকে। আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা জানান, জায়গা নেই তবুও দ্রুত গাড়ি ছাড়ার ব্যবস্থা করা হয় না। পণ্য খালাসের অভাবে গাড়িগুলো সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে পড়ে থাকে। বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্দরে তিনটি গুদামের ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন। গুদামগুলো বেশিরভাগ সময়ই পণ্যভর্তি হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভুট্টা ও চাল আসে। যার কারণে সেগুলো ছাড় করতে কিছুটা দেরি হয়।
ভারত থেকে ভুট্টা নিয়ে আসা ট্রাকচালক সুকুমার বলেন, এক সপ্তাহ হতে চললো। বন্দরে আটকা পড়ে আছি। কবে মালামাল ছাড় হবে তাও বলতে পারছি না। এতে আমরা আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ছি। কেউ এ ব্যাপারে কোনো নির্দেশনাও দিচ্ছে না। স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী আপন সরকার বলেন, আমরা ইচ্ছা করলেই ট্রাকজট কমাতে পারি। চেকিং করার পর মালগুলো সরাসরি আমাদের গুদামে ঢোকানোর অনুমতি দিলে এ জট লাগার কথা নয়। কিন্তু তা করতে দেওয়া হয় না। বুড়িমারী স্থলবন্দরের কাস্টমস সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম বলেন, দেরিতে পণ্য খালাসের কারণে এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। একই কারণে সীমান্তের ওপারেও কিছু গাড়ি আটকে আছে। তবে সমস্যা দূর করে দ্রুত এগুলো ছাড় করানো হবে।
পদে পদে হয়রানি-চাঁদাবাজি
স্থলবন্দর দিয়ে পাসপোর্টধারী যেসব যাত্রী ভারত, ভুটান ও নেপাল থেকে নৈশকোচে বাংলাদেশে আসেন সেসব যাত্রীর লাগেজ তল্লাশির নামে হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এখন ভারতে যেতে পাসপোর্টপ্রতি পুলিশের নামে দালালদের দিতে হয় ৩০০-৫০০ টাকা। নগদ টাকা থাকলে তার একটি নির্দিষ্ট অংকের কমিশন নিয়ে নেয় তারা। আবার আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত ট্রাকগুলো থেকে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের নামে তোলা এই চাঁদা ওঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাহাজুল ইসলাম মিঠুর নামে। মালামাল পরিবহন ছাড়াও দেশের যেকোনো প্রান্তের ট্রাক কিংবা ভারতীয় ট্রাক (নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে) বন্দর এলাকায় এলেই ১ হাজার টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। টাকা নিয়ে ট্রাকচালকদের কোনো স্লিপও দেওয়া হয় না।
বুড়িমারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাহাজুল ইসলাম মিঠু ট্রাক থেকে চাঁদা আদায়ে নিজের সম্পৃক্ত থাকার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি নিজে এ কাজে জড়িত নয়। আমার নাম ভেঙে অন্য কেউ এই কাজ করতে পারে। তবে সড়কে চাঁদা তোলার কথা আমি শুনেছি। অন্যদিকে বুড়িমারী স্থলবন্দরের চাঁদাবাজির আরও একটি বড় খাত হলো ওজন স্টেশন। এখানে পণ্যভেদে প্রতি ট্রাক থেকে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়। বেশিরভাগ ট্রাকচালকই অভিযোগ করে বলেন, টাকা নিয়ে তাদের রশিদ দেওয়া হয় না। টাকা দিতে না চাইলে নানাভাবে হয়রানি করা হয়।
পরিদর্শনকালে দেখা গেছে, বন্দরের তিনটি ওজন পরিমাপক মেশিন থাকলেও চাঁদাবাজির সুবিধার জন্য দুটি বন্ধ রাখা হয়েছে। আর এটি করা হয়েছে কোনো কারণ ছাড়াই। এক মেশিনে পরিমাপকালে স্বাভাবিক কারণেই ভিড় লেগে যায়। হয়রানি এড়াতে তখন টাকা দিয়ে দ্রুত পরিমাপ কাজ শেষ করতে হয়। স্থলবন্দর পরিদর্শক মাসুদ হোসেন ও ওয়্যারহাউজ সুপারিনটেনডেন্ট আশরাফুল হক টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করে জানান, অল্প কিছু নেওয়া হয়। তবে এই টাকা অফিসাররা কেউ ভাগ নেন না। সেখানে যারা কাজ করেন তারাই এই টাকা নেন।
বুড়িমারী স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক গিয়াস উদ্দিন জানান, চাঁদাবাজরা তাদের কেউ নয়। এরা বহিরাগত। বন্দরের বাইরে একটি চক্র এই কাজ করে। আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবো। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, এ বন্দরে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ শতাধিক ট্রাক প্রবেশ করে। সেই হিসাবে প্রতিদিন অন্তত আড়াই লক্ষাধিক টাকা চাঁদা ওঠে। মাস হিসাবে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৬৫ লক্ষাধিক টাকা (শুক্রবার বাদ দিয়ে)। বছরে এই টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় আট কোটি টাকা।