পুলিশকর্তা বাবার বিরুদ্ধে মাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ ছেলের

রাজশাহী নগর পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্ত্রী নাজমা ইসলামকে (৫৯) আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বাবার বিরুদ্ধে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় লিখিত অভিযোগ দেন একমাত্র ছেলে নুরাইয়াদ নাফিজ ইসলাম।

পুলিশকর্তা বাবার বিরুদ্ধে মাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ ছেলের

প্রথম নিউজ, রাজশাহী: রাজশাহী নগর পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্ত্রী নাজমা ইসলামকে (৫৯) আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) বাবার বিরুদ্ধে নগরীর চন্দ্রিমা থানায় লিখিত অভিযোগ দেন একমাত্র ছেলে নুরাইয়াদ নাফিজ ইসলাম। মায়ের মৃত্যুর পর তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ারও অভিযোগ এনেছেন নাফিজ।

নূরুল ইসলাম সর্বশেষ অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রসিকিউশন) হিসেবে রাজশাহী নগর পুলিশে (আরএমপি) কর্মরত ছিলেন। ২০১৮ সালের নভেম্বরে তিনি অবসরে যান। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের সুন্দরপুর ইউনিয়নের নবাবজাইগির এলাকার ইউনুস আলী মন্ডলের ছেলে। পরিবার নিয়ে রাজশাহী নগরীর চন্দ্রিমা আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর সড়কে নিজ বাসায় তিনি বসবাস করতেন।

তার ছেলে নাফিজ ইসলাম বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী। নাফিজ ইসলাম জানান, ১৯৮৭ সালে পারিবারিকভাবে বাবা-মায়ের বিয়ে হয়। বড় বোনের জন্ম হয় ১৯৯০ সালে। এর বছর চারেকের মাথায় মায়ের কোলে আসেন তিনি।

যখন থেকে তিনি বুঝতে শিখেছেন, তখন থেকেই ছোটো-খাটো নানান বিষয় নিয়ে বাবার হাতে মাকে নিগৃহীত হতে দেখেছেন। কিন্তু দুই সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সব সহ্য করে গেছেন মা। বাবা অবসরে যাওয়ার পর মায়ের ওপর অত্যাচারের মাত্রা চরমে পৌঁছায়।  তার অভিযোগ, নিজ গ্রামের এক নারীর সঙ্গে তার বাবার বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে। ওই নারীর সঙ্গেই বাবার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরিবারের কথা মেনে তার মাকে বিয়ে করেন। আর এ কারণেই কখনোই মাকে মেনে নিতে পারেননি বাবা।

তিনি বলেন, বছর কয়েক আগে বড় বোনের বিয়ে হয়ে যায়। তিনিও পড়াশোনার জন্য ঢাকায় চলে যান। এরপর থেকেই একা হয়ে পড়েন মা। এই সুযোগে আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন বাবা। বিষয়টি দাদা, ফুপুসহ স্বজনদের বিভিন্ন সময় জানিয়ে প্রতিকার চেয়েছেন তিনি। বাবার সহকর্মীদেরও জানিয়েছেন। কিন্তু কোথাও কোনো প্রতিকার মেলেনি। নিরুপায় হয়ে চলতি বছরের জানুয়ারিতে মাকে মামাদের বাড়ি রংপুরে পাঠিয়ে দেন। এরপর ক্ষিপ্ত হয়ে তার সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেন বাবা। পড়াশোর খরচও বন্ধ করে দেন। শেষে আর নির্যাতন করবেন না এমন আশ্বাসে ফিরে আসেন মা। 

নাফিজের ভাষ্য, গত ৩০ মে দুপুর দেড়টার দিকে নিজ শোবার ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে শাড়ি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন মা। পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে পৌঁছান তার বোন। তিনি গিয়ে মায়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। 

তার অভিযোগ, তার বাবা পুলিশের সাবেক কর্মকর্তা হওয়ায় শুরু থেকেই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন নগরীর চন্দ্রিমা থানার ওসি এমরান হোসেন। প্রাথমিক সুরতহাল রিপোর্টে আঘাতের চিহ্ন থাকার বিয়ষটি ওসি এড়িয়ে যান। সেদিনই মায়ের হাতে লেখা সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। বিষয়টি তখনই ওসিকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু ওসি সেটি আমলে না নিয়ে অপমৃত্যু মামলা নেন। তিনি অভিযোগ করেন,  ৩১ মে মায়ের মরদেহ দাফনের পর তাকে আর বাড়িতে উঠতেই দেননি বাবা। এরপর তিনি বোনের কাছে আশ্রয় নেন। মুখ খোলায় এখন বাবা তাকে নানানভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এই ঘটনায় তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। 

নাফিজ জানান, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মায়ের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকার বিষয়টি ওঠে এসেছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাবার পর ১ সেপ্টেম্বর তিনি থানায় যান লিখিত অভিযোগ নিয়ে। কিন্তু ওসি এমরান হোসেন প্রশিক্ষণে বাইরে থাকায় ওই সময় তাকে ফিরিয়ে দেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মইনুল বাশার। এরপর ৮ সেপ্টেম্বরও তিনি অভিযোগ নিয়ে থানায় যান। সেদিনও তাকে ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। এর দুই দিন পর তিনি আবারও যান। সেদিন অভিযোগ নেয়।

যোগাযোগ করা হলে চন্দ্রিমা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মইনুল বাশার বলেন, বিষয়টি পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানেন। যেহেতু এই ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা আছে, তদন্তে আত্মহত্যার প্ররোচনার প্রমাণ পাওয়া গেলে সেটি ওই মামলার প্রতিবেদনেই উল্লেখ করা হবে।

অভিযোগ অস্বীকার করেছেন চন্দ্রিমা থানার ওসি এমরান হোসেন। তিনি বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে যেটা করি, সেটা অনুমান করেই করি। পরে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণ হয়। এক্ষেত্রে ময়ন্ততদন্ত প্রতিবেদনে মরদেহে আঘাতের বিষয়টি ওঠে এসেছে। বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। অবশ্যই আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) রফিকুল আলম।

এদিকে যোগাযোগ করা হলে ছেলের সব অভিযোগ অস্বীকার করেন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম। তিনি বলেন, সে (নাফিজ) ছেলে মানুষ। মায়ের মৃত্যুশোক সইতে না পেরে এমন অভিযোগ আনছে। কিন্তু কষ্ট তো আমিও পাচ্ছি। আমিও তো মানসিকভাবে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছি। কিন্তু বলার কিছুই নেই। তিনি বলেন, সে (নাফিজ) বোকামি করছে। আমার এক ছেলে-এক মেয়ে। তাদের অনেক কষ্ট করে এই অবস্থানে এনেছি। পড়োশোনার খরচ না দিলে ছেলে এত দূর আসতে পারত না। তিনি আরও বলেন, সংসারে ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে ঝামেলা হয়। তারও হয়েছে। কিন্তু স্ত্রীকে মেনে নিতে না পারলে অনেক আগেই বিচ্ছেদ ঘটাতে পারতেন। শেষ বয়সে এসে স্ত্রীকে নির্যাতন করে মারার প্রশ্নই ওঠে না।

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom