নির্বাচন কমিশনে ৫ জনের নাম প্রস্তাব ডা.জাফরুল্লাহ’র
নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ৫ জনের নাম হলো সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার এবং সুলতানা কামাল
প্রথম নিউজ, ঢাকা: সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার এবং সুলতানা কামালসহ নির্বাচন কমিশনার হিসেবে ৫ জনের নাম প্রস্তাব করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সার্চ কমিটির পকেটে কী কাগজ আছে? নির্বাচন কমিশনার কারা হবে? আজকে যদি প্রকৃত নির্বাচন করতে হয়, গণতন্ত্র ফেরত দিতে হয়, জনগণকে ভোটের অধিকার ফেরত দিতে হয়। তাহলে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন দরকার। বর্তমান আইনে সেই ব্যবস্থা নেই। এমন অবস্থায় অনেক রাজনৈতিক দলই সার্চ কমিটির কাছে কোন নামই প্রস্তাব করেনি। তবে কয়েকটা নাম আপনারা বিবেচনায় আনতে পারেন, সাখাওয়াত হোসেন আগে নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। তাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হলে তিনি পথ-ঘাট চেনেন, উনি শক্তভাবে কাজগুলো করতে পারবেন। তার সঙ্গে সাবেক সেনা কর্মকর্তা ইকবাল করিম ভূঁইয়া, তিনি আজিজ নন, সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে তাঁর সুনাম আছে। বদিউল আলম মজুমদার ও বিচারপতি নাজমুন আরা, সুলতানা কামালের মতো সত্যিকারে সজ্জন ও সাহসী লোকজনদের কমিশনে আনলে তবে প্রতিষ্ঠানটি কিছুটা বিতর্ক মুক্ত থাকবে।
সার্চ কমিটিতে যাদের নাম এসেছে তারা তাদের সম্পদের হিসাব দেয়নি। তাদের উপরে মানুষের আস্থা থাকবে কি করে? তাদের পকেটে কি কাগজ আছে? বক্তব্যে এমন প্রশ্ন তোলেন ডা. জাফরুল্লাহ।
সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশকে ১৭ টি প্রদেশে বিভক্ত করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, জাতীয় সরকার, সর্বদলীয় সরকার কিংবা নির্দলীয় সরকার যেটাই করুন না কেন, অন্ততপক্ষে তাদের দু-বছর সময় দিতে হবে। তাহলে সংবিধানের যেসব ত্রুটিগুলো আছে সেগুলোর পরিবর্তন হবে। তবে মূলকথা হচ্ছে যে, এত কেন্দ্রীকতা দিয়ে আসলে দেশ চলতে পারে না। ১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশ, এটাকে অন্তত ১৭টি প্রদেশে বিভক্ত করতে হবে। তাহলে শত ফুল ফুটবে। আপনাদের অনেকেই মুখ্যমন্ত্রী হবেন, মন্ত্রী হবেন। কোন প্রদেশের মন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রী বলবে আমরা শিক্ষার দিকে নজর দিব, কেউ বলবে আমরা কৃষক ও শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করব।
বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রেখে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, জালেম কখনো ক্ষমতা ছাড়ে না, তাদেরকে ক্ষমতা ছাড়াইতে হয়। আজকে বিএনপি তাদের অফিসে কোনো সভা সমাবেশ করতে পারছে না। সেখান থেকে তাদেরকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। কাজেই তাদের (বিএনপির) উচিৎ যেদিন ধরে নিয়ে যাবে। তার পরের দিনে আরও বড় পরিসরে আন্দোলনের ডাক দেওয়া কারণ যারা জালেম, তারা কখনো ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। জালেমদেরকে ক্ষমতা ছাড়াইতে হয়। আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাদের পতন হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য প্রদানকালে অসুস্থ বোধ করেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। এ কারণে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করেন।
তিনি বলেন, আমরা যদি ভেবে কাজ করতাম, আমাদের ব্যক্তিতের সঙ্কট বলি, দেশের জনগণের কথা বলি, মানুষের কষ্টের কথা বলি সেরকম কিছু হত না। আজ কী করে বলছেন সমস্ত রাজনৈতিক দল গুলোর ঐক্য চাই। উনারা দুইটি আলাদা জোট আপনারা তৃতীয় আলাদা একটা জোট করেন। তাহলে বিরোধী দল আলাদা হয়ে যাবার কারণে শক্তি দূর্বল হয়ে যাবে? বরং ভালো করে বোঝেন, আমরা সেইভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি যাতে মূল লড়াইটা দূর্বল না হয়। মূল লড়াই যেন শক্তি পায়। এই সেই বিবেচনায় ঐক্যবদ্ধ হচ্ছি।
আন্তর্জাতিক সমর্থনে ফাটল ধরায় আওয়ামী লীগ এখন কম্পমান। তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের পূর্বের ইতিহাস ষড়যন্ত্রে রক্তাক্তের ইতিহাস। তারপরও তারা একইভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর মাধ্যমে। এক সময় আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো সবাই একচেটিয়াভাবে তাদের সমর্থন করেছিল। সেই শক্তির জোরে তারা রাষ্ট্র, জনগণের ট্যাক্সের টাকার চালিত প্রশাসনকে দলীয় শক্তিতে পরিণত করেছে। মানুষের উপরে ত্রাস সৃষ্টি করে, দমন নিপীড়ন চালিয়েছে। এখন আন্তর্জাতিক শক্তির সমর্থনে ফাটল ধরেছে। আওয়ামী লীগ এখন কম্পমান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন খুন-গুমতো হয় নাই। এরা সবাই ভূমধ্যসাগরে ডুবে মারা গেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন গুম হওয়া লোকদেরকে আমরা পরিবারের কাছে হাজির করবো। তাদেরকে কোথায় থেকে হাজির করবেন? পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছেন, হয়তো বা সেই ছাই আমাদের সামনে হাজির করবেন। এদের যে মাথা খারাপ এটা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে।
সদ্য পাস হওয়া নির্বাচন কমিশন প্রত্যাখান করে পরিস্কার সিদ্ধান্ত নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এই দেশে আমরা কী কী করবো এটা আজ পরিষ্কারভাবে আমাদের সিদ্বান্ত নিতে হবে। এই যে সরকার একটা ফ্যাসিস্ট শাসক। আবার যে দখলদারী একটা নির্বাচন হবে সেটাকে বৈধতা দেয়ার জন্য একটা নির্বাচনী আইন করেছে, যেখানো জনগণের সম্মতি নেই। পার্লামেন্টে একটা আইন হয়েছে, এই আইন আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম। এই আইনের মাধ্যমে যে নির্বাচন কমিশন হবে এটা অসম্ভব খারাপ নির্বাচন কমিশন হবে। যা বর্তমানের চেয়েও খারাপ হবে। এটা সার্চ কমিটির কথা শুনলেই বুঝা যায়।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দুর্বৃত্তের দলে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এক সময় গণমানুষের দল ছিল, তাদের তুমুল জনপ্রিয়তা ছিল। কিন্তু তারা সেই জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছে। তারা এখন দুর্বৃত্তের দলে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতি চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রকাশ্য দুর্বৃত্তায়ন হলেও সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ব্যবস্থা নিবে কী করে? তারাই তো দুর্বৃত্তায়নের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। আলোচনা সভায় ভাসানী অনুসারী পরিষদের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের ছিলেন। উপস্থিত সবাই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: