প্রথম নউজ, ঢাকা : স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর আমরা পালন করছি। উদযাপন করছি মুজিব শতবার্ষিকীও। স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস এ প্রজন্মের কজনই বা জানে? কিংবা শেখ মুজিবের শাসনকাল সম্পর্কে? দেশে যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, রাষ্ট্রিয়ভাবে সে সরকার তাদের মতো করে ইতিহাস লেখে এবং সেটা মানতে জনগণকে বাধ্য করে। কিছু সরকারী ইতিহাস লেখককে তাদের মতো করে ইতিহাস রচনা করতে উদ্বোদ্ধ করে, প্রয়োজনে উপঢৌকনও দেয়া হয়। যে কারনে,দেখা যায়, একজন লেখক তার বইয়ের প্রথম সংস্করণে যা লিখেছিলেন... সেটার বেশ কয়েকটি সংস্করণ শেষ হয়েছে। অথচ সপ্তম মুদ্রনে এসে তিনি তার লেখার অনেক কিছুতে পরিবর্তন এনেছেন। সেটা কেন? পাঠক হিসেবেে আমি দুটো সংস্করণ পড়ে বিভ্রান্ত হই।
তখন বুঝি,সরকারের চাপে তিনি এসব করতে বাধ্য হয়েছেন,বা হচ্ছেন। তাই বলে সরকারের চাপে ইতিহাস বিকৃতি! নিজের বিবেক বলে কিছু নেই? দুর্ভাগ্য লেখকের, লোভে কিস্বা অন্য কিছুর জন্য নিজের মেরুদন্ড কিংবা কলমের স্বাধীনতা তিনি বন্ধক দিয়ে ফেলেছেন। এসব লেখক শুধু পাঠকদের সাথেই প্রতারণা করেননি,করেছেন নিজের সাথেও। তবু কেন জানি তাদের বিকার নেই। আমি কজন গুনি লেখকের নাম বলতে চাই,যারা এ কাজ করেছেন, প্রথমেই বলতে চাই একদা চরম আওয়ামীবিরোধী লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবীর। এই তালিকায় আছেন শহিদুল্লাহ কায়সার পত্নী পান্না কায়সার। আছেন সব্যসাচী লেখক প্রয়াত সৈয়দ শামসুল হকও। আছেন এখন বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক মুনতাসির মামুনসহ অনেকে। আমরা জানি হুমায়ুন আহমেদের রাজনৈতিক উপন্যাস ‘দেয়াল’ও হাইকোর্টের নির্দেশে অনেক সংশোধন ও পরিমার্জন করতে হয়েছিলো। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কি হতে পারে।
প্রখ্যাত বামপন্থী চিন্তাবিদ, বদরুদ্দীন উমর ভাষা আন্দোলন নিয়ে কলকাতার দেশ পত্রিকায় একটা নিবন্ধ লিখেছিলেন। শেখ হাসিনার ঐকমত্য সরকার প্রথমবার যখন ক্ষমতাসীন। দেশ’র সেই সংখ্যা বাংলাদেশে আসার পর, সেটা বাজেয়াপ্ত করেছিলো। পরে ‘দেশ’ তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে উমরের লেখা বাদ দিয়ে নতুন করে দেশ পত্রিকা বাংলাদেশে পাঠায়। কি লিখেছিলেন,উমর দেশ পত্রিকায়? তিনি ভাষা আন্দোলন নিয়ে লিখেছিলেন। বলেছিলেন,সেই আন্দোলনে শেখ মুজিবের ছিটেফোঁটাও ভূমিকা ছিলোনা। আচ্ছা বদরুদ্দীন উমর যদি সেটা লিখেই থাকেন, তবে তার জবাব তো কোনো লেখকের মাধ্যমে দেশ পত্রিকায় দেয়া যেতো, কেন ১৯৯৯ সালের দেশ পত্রিকার ফেব্রুয়ারী সংখ্যা নিষিদ্ধ করা হলো..? লেখককের চিন্তার স্বাধীনতা এভাবে কেড়ে নেয়া যায়?
সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হচ্ছে,নতুন প্রজন্মকে শেখ মুজিবের শাসন সম্পর্কে জানতে,পড়তে উপলব্ধি করার সব তরিকা রীতিমত নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এখন দেশের কোনো লাইব্রেরিতে বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর বলে কোনো ডকুমেন্ট নেই। নেই কোনো বই। থাকলেও সরকারের অনুমতি ছাড়া তা কাউকেআমার কাছে কিছু বই আছে। এগুলো পড়তে নতুন প্রজন্মকে বলবো। স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস জানতে তাদের সহায়তা করবে। সরকারের ন্যারেটিভের বাইরে, ইন্ডিপিন্ডেন্ট লেখকের বই। নিশ্চই তাদের কমপেয়ার করতে সুবিধা হবে। আমি চাই, তরুণ প্রজন্ম যেন সঠিক ইতিহাস জানে।
লেখক,সাংবাদিক, কলামিস্ট মুজতবা খন্দকারের ফেইজবুক ওয়াল থেকে।
Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: