গায়েবি মামলায় পাইকারি হারে বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে-রিজভী
প্রথম নিউজ, ঢাকা : গায়েবি মামলায় পাইকারি হারে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।রোববার (১২ নভেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘নব্য নাৎসি কায়দায় সরকার আবার নতুন করে গুমের উৎসব শুরু করেছে। প্রতিটি শহর-বন্দর জনপদে এখন সাদা পোষাকধারীদের হাড় হিম করা আতঙ্ক। দিনে-রাতে তারা কালো কাচে ঢাকা মাইক্রোবাসে নাৎসি বাহিনীর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। ছোঁ মেরে তুলে নিচ্ছে গণতন্ত্রকামীদের। আন্দোলনরত বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের না পেলে তাদের পিতা-মাতা, পুত্র-সন্তান, ভাই-বোন এবং আত্মীয় স্বজনদেরও ধরে নিয়ে অদৃশ্য করে রাখছে। তুলে নিয়ে গিয়েও অস্বীকার করা হচ্ছে।’তিনি বলেন, ‘কোথাও কোথাও জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের মতো জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করছে নামধারী আওয়ামী পুলিশ লীগ। কোথাও কোথাও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের না পেয়ে বাথরুম থেকে পানি এনে বাসার সব বিছানায় ঢেলে দিয়েছে তারা। সারা দেশে দলদাস পুলিশ বাহিনী বিনা মামলায় বিনা ওয়ারেন্টে বা গায়েবি মামলায় পাইকারি হারে হাজার হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তুলে নিয়ে গিয়ে বন্দি অবস্থায় অনেককে কোমর থেকে পায়ের তালু অবধি হাতুড়িপেটা করে অচল করে দেওয়া হচ্ছে। এসব চরম মানবতাবিরোধী, যা বাংলাদেশ স্বাক্ষরকৃত জাতিসংঘের কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার (নির্যাতন বিরোধী কমিটি-ক্যাট) এবং নিপীড়নবিরোধী আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম ইউনাইটেড অ্যাগেইনস্ট টর্চার (ইউএটি) অনুযায়ী একটি গণবিরোধী ভয়াবহ অপরাধ। যা আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার এবং কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘আপনারা ভোটের অধিকার আদায়ে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনের প্রতিপক্ষ হবেন না। গণতন্ত্রকামী মানুষের জোয়ার ঠেকানো যাবে না। যেসব সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এখন পুলিশ কর্মকর্তা হয়ে গণতন্ত্রকামীদের হুমকি দিচ্ছেন, সবাইকে গ্রেপ্তার করা হবে বলে ভয় দেখাচ্ছেন, তারা গণবিরোধী অবস্থান থেকে সরে আসুন। অন্যথায় পুলিশের মর্যাদাপূর্ণ ইউনিফর্ম খুলে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে রাজপথে নামুন।’
গত ২৪ ঘণ্টার সারাদেশে ৩৬৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলেও জানান রিজভী।
পোশাক শিল্প ধ্বংসের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছেরুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সরকার অত্যন্ত সুকৌশলে দেশের সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় খাত পোশাক শিল্প ধ্বংসের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছেন। তিনি (শেখ হাসিনা) পুনরায় ৭৪ এর মতো দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করতে চান, দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করতে চান। বাংলাদেশের মালিকরা গত শনিবার সরকারের প্ররোচনায় ১৫০টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। ন্যায্য দাবি আদায়ের বিক্ষোভের দায়ে ১১ হাজার শ্রমিককে অভিযুক্ত করে মামলা করেছে দলদাস পুলিশ সরকারের নির্দেশে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মী নয়। পেশাজীবী, শ্রমজীবী, কর্মজীবী এমনকি গার্মেন্টস শ্রমিকরা পর্যন্ত এই ফ্যাসিস্টদের কাছে নিরাপদ নয়। বেতন-ভাতা বৃদ্ধির ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনরত গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে আজ পর্যন্ত চারজন শ্রমিকদের হত্যা করা হয়েছে।’
রিজভীর বলেন, ‘পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে গাজীপুরে গার্মেন্টস কর্মী আঞ্জুয়ারা ও মো. জামাল উদ্দিনকে হত্যা করা হলো। আঞ্জুয়ারা রাষ্ট্র ক্ষমতার ভাগ চায়নি, সে শুধুমাত্র স্বামী-সন্তান নিয়ে একটু সুখে-শান্তিতে বেঁচে থাকার দাবি করেছিল, এজন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছে।’