গুলশানের স্কাইপে সভায় বঞ্চিত নেতাদের নালিশ

বরিশালে বিএনপির কমিটি গঠনে অনিয়ম

গুলশানের স্কাইপে সভায় বঞ্চিত নেতাদের নালিশ
গুলশানের স্কাইপে সভায় বঞ্চিত নেতাদের নালিশ

প্রথম নিউজ, অনলাইন: কমিটি গঠনে অনিয়ম ও বাণিজ্যের অভিযোগ করলেন বরিশাল অঞ্চলের বিএনপি নেতারা। বুধবার ঢাকায় বিএনপির গুলশান অফিসে অনুষ্ঠিত স্কাইপে সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে এই অভিযোগ করেন তারা। তারেক রহমান এ সময় তাদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সভার বিরতি চলাকালে পদবঞ্চিত নেতাদের হাতে লাঞ্ছিত হন বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক দেওয়ান মো. শহিদুল্লাহ। তিনি অবশ্য লাঞ্ছিত হওয়ার কথা স্বীকার করেননি। প্রভাবশালী এক নেতার ইন্ধনে তার বিরুদ্ধে অশ্লীল স্লোগান দেওয়া হয়েছে বলে দাবি তার। বরিশাল বিভাগের নির্বাচিত বর্তমান ও সাবেক জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ওই সভা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এতে যোগ দেন দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলা-ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান ২ শতাধিক চেয়ারম্যান। বেলা ৩টায় শুরু হওয়া সভা চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।

বরিশাল জেলা উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক-সদস্য সচিব ছাড়াও সভায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর (অব.) হাফিজ, অ্যাড. জয়নাল আবেদিন, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মজিবর রহমান সরোয়ার, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন এবং দুই সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ও মাহবুবুল হক নান্নু।

সভার প্রায় পুরোটা সময় তৃণমূলে দল পুনর্গঠন প্রশ্নে দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন অংশ নেওয়া জনপ্রতিনিধিরা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে বরগুনা, বরিশাল ও পিরোজপুরের নেতাদের বিরুদ্ধে। বরগুনা ও বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠন প্রশ্নে দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের বাদ দিয়ে অন্য দলের নেতাদের পদ-পদবি দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সেখানে। এই দুই সাংগঠনিক জেলায় কমিটি গঠন প্রশ্নে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পদ বিক্রির ইঙ্গিতও দেন তারা।

উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে গৌরনদী উপজেলার শরীকল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মঞ্জুর হোসেন মিলন বলেন, ‘এখানে কমিটি গঠন প্রশ্নে যা হয়েছে তা দলকে শক্তিশালী করা তো দূরে থাক, ধ্বংস করবে। যারা দলের জন্য জীবন বাজি রেখে মাঠে থেকেছে তাদের বাদ দিয়ে কমিটি করা হয়েছে জাতীয় পার্টিসহ অন্য দল থেকে আসা হাইব্রিডদের নিয়ে।’ একই দাবি জানিয়ে মুলাদী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সাত্তার খান বলেন, ‘আজীবন বিএনপি করে এখন যদি পদ বিক্রিসহ অন্য দলের নেতাদের পদে আনার দৃশ্য দেখতে হয় তাহলে এর চেয়ে হতাশার কিছু নেই।’

বরিশাল সদর উপজেলার সাবেক আহ্বায়ক রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল আমীন বলেন, ‘২০ মামলার আসামি হয়ে জেল খেটেও আমি বঞ্চিত। আমাকে আহ্বায়ক করে কমিটি দেওয়ার মাত্র কদিনের মাথায় রহস্যজনক কারণে তা বাতিল হয়।’ পিরোজপুর জেলার নেতাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আঁতাত ও তাদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী দল পরিচালনার অভিযোগ করেন সেখানকার নেতারা। পদ বিক্রি করে বিপুল অর্থের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠে বরগুনা জেলার নেতাদের বিরুদ্ধে। প্রায় ৬ ঘণ্টাব্যাপী সভার অধিকাংশ সময়জুড়ে এসব অভিযোগ আর বঞ্চনার কথা বলেন উপস্থিত নেতারা।

সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের বিরতি চলাকালে ঘটে বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক দেওয়ান শহিদকে লাঞ্ছিত করার ঘটনা। বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনে অন্য দলের লোকদের কাছে পদ বিক্রির অভিযোগে এই ঘটনা ঘটান উত্তরের কর্মী-সমর্থকরা। পরে সেখানে থাকা অন্য নেতাদের হস্তক্ষেপে শান্ত হয় পরিস্থিতি। দেওয়ান শহিদ অবশ্য লাঞ্ছিত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেননি। প্রভাবশালী নেতাদের পছন্দ মতো কমিটি না দেওয়ায় তাদের ইন্ধনে কিছু উচ্ছৃঙ্খল লোক তার নামে অশ্লীল স্লোগান দিয়েছে বলে দাবি তার।

কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, ‘বিএনপি’র মতো একটি বড় দলে পদ-পদবি নিয়ে জটিলতা থাকতেই পারে। হয়তো সেরকম কোনো বিষয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে কেউ এ রকম ঘটনা ঘটিয়েছে। তবে এটা কোনো অবস্থাতেই সমর্থনযোগ্য নয়। অভিযোগ থাকলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে দল।’

বিভিন্ন জেলার নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে সভায় উপস্থিত দলের আরেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু বলেন, ‘বরিশাল উত্তর, বরগুনা ও পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন বিষয়ে এরই মধ্যে কেন্দ্রে বেশকিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। এসব অভিযোগ তদন্তে দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেলকে প্রধান করে ২ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে কেন্দ্র। কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন বলেন, ‘এটি ছিল আসলে একটি ঘরোয়া সাংগঠনিক সভা। সেখানে অনেকেই তাদের দুঃখ কষ্ট আর অপ্রাপ্তির কথা বলেছেন। তবে সভার মুখ্য আলোচ্য বিষয় এগুলো ছিল না। সেখানে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের লক্ষ্যে আন্দোলনসহ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা হয়েছে। কিভাবে চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করা যায় তা নিয়ে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যেমন দিকনির্দেশনা দিয়েছেন তেমনি তিনি মাঠপর্যায়ের নেতাদের পরামর্শও শুনেছেন।’

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel: