গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক নেতা ও আইনজীবীদের ৩৩ কোটি টাকা ফ্রিজ

তাদের ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ বা ফ্রিজ করতে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদালতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। 

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক নেতা ও আইনজীবীদের ৩৩ কোটি টাকা ফ্রিজ

প্রথম নিউজ, ঢাকা: গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক ইউনিয়নের তিন নেতা ও আইনজীবী ইউসুফ আলীসহ ৮ ব্যক্তির ব্যাংক হিসাবে থাকা ৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা আটকে দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের ১৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ বা ফ্রিজ করতে দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ও আদালতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। 

দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান সই করা পৃথক এসব চিঠির বিষয়ে মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন। 
 
চিঠির সূত্রে জানা যায়, গ্রামীণ টেলিকমের আইনজীবী ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফের তিনটি ব্যাংক হিসাব এবং ইউসুফ আলীর ল ফার্মের একটি অ্যাকাউন্টে থাকা ১৬ কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে ফ্রিজের তালিকায়। বেসরকারি দ্য সিটি ব্যাংক, কমার্শিয়াল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও ব্যাংক এশিয়ায় ওই টাকাগুলো জমা রয়েছে।

অন্যদিকে গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নেতা কামরুজ্জামান, ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও মাইনুল ইসলামের ব্র্যাক ব্যাংক ও ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ১৩টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে চিঠি দিয়েছে দুদক। যেখানে জমা রয়েছে ১৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। শ্রমিকদের টাকা অবৈধভাবে গ্রহণ করার অভিযোগ এনে ফ্রিজ বা অবরুদ্ধ করার অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।

এর আগে দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, শ্রমিক ও গ্রামীণ টেলিকম সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী গ্রামীণ টেলিকমের ১২ বছরের লভ্যাংশ ৪৩৭ কোটি টাকা শ্রমিক কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টন হওয়ার কথা থাকলেও ২৬ কোটি টাকার হিসাবে গরমিল পাওয়া যায়। শ্রমিকদের টাকা বণ্টন না হয়ে গ্রামীণ টেলিকম এমপ্লোয়ি ইউনিয়ন অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছিল। সেখান থেকে দুই আইনজীবী ও শ্রমিক ইউনিয়নের তিন নেতারা ভাগ বাটোয়ারা করে নেন। যার বড় অংশ যায় আইনজীবী ইউসুফ আলীর পকেটে।

এ বিষয়ে গত ২৫ আগস্ট গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলাম, আইনজীবী ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক। যদিও জিজ্ঞাসাবাদে শ্রমিকদের অর্থ আত্মসাৎ হয়নি বলে দাবি করেন তারা।  নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন (বি-২১৯৪) সিবিএর সঙ্গে আলোচনা না করেই এক নোটিশে ৯৯ কর্মীকে ছাঁটাই করে গ্রামীণ টেলিকম কর্তৃপক্ষ।

গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুল হাসান স্বাক্ষরিত এক নোটিশের মাধ্যমে এ ছাঁটাই করা হয়। এরপর সেই নোটিশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করেন ২৮ জন কর্মী। এই ছাঁটাইকে কেন্দ্র করে ড. ইউনূসকে তলবও করেন হাইকোর্ট। এছাড়া গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করে ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর।

চলতি বছরের ২৮ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করার কথা জানান সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ সংবলিত একটি প্রতিবেদন দুদকে পাঠিয়েছেন। ওই প্রতিবেদন কমিশন পর্যালোচনা করে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

অভিযোগগুলো হলো- অনিয়মের মাধ্যমে শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে বণ্টনের জন্য সংরক্ষিত লভ্যাংশের ৫ শতাংশ অর্থ লোপাট, শ্রমিক কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধের সময় অবৈধভাবে অ্যাডভোকেট ফি ও অন্যান্য ফির নামে ৬ শতাংশ অর্থ কর্তন, শ্রমিক কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলে বরাদ্দ করা সুদসহ ৪৫ কোটি ৫২ লাখ ১৩ হাজার ৬৪৩ টাকা বিতরণ না করে আত্মসাৎ ও কোম্পানি থেকে ২ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা মানিলন্ডারিংয়ের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ।

এরপর অভিযোগ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের টিম গঠন করে দুদক। টিমে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনকে তদারককারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। টিমের অপর সদস্যরা হলেন- সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তার ও নূরে আলম সিদ্দিকী। গত ১৬ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সংক্রান্ত ১১ ধরনের নথিপত্র সংগ্রহ করে দুদকের অনুসন্ধান টিম। 

Download করুন আমাদের App এবং Subscribe করুন আমাদের YouTube Channel:

news.google.com

https://apps.apple.com/de/app/prothomnews/id1588984606?l=en

https://play.google.com/store/apps/details?id=com.prothomnews

https://youtube.com/prothom